সংবাদ সম্মেলনে এসেই এদিক-ওদিক তাকালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তখনো সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ প্রায় ফাঁকা। বিপিএল কাভার করতে আসা সাংবাদিকেরা প্রেসবক্স থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এসে পৌঁছাননি। দৃশ্যটা দেখে হয়তো একটু অবাকই হলেন মাশরাফি। তবে মাশরাফি চেয়ারে বসে প্রশ্নের উত্তর দিতে না দিতেই ভরে গেল সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। সংবাদ সম্মেলনটাও হলো দীর্ঘ। ১২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলছেন।
আগামী বছর বিপিএলে তাঁকে দেখা যাবে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফির উত্তর ছিল এমন, ‘হতে পারে। আমার পা যদি ঠিক থাকে হতে পারে। আমি আমার মতো করেই করতে চাই। এ বছর যদি ফুল…সর্বশেষ বছরের মতো যদি ফুল (বোলিং) খেলতে পারতাম, তাহলে চিন্তা করব। যেহেতু ফুল করতে পারছি না, আমি চিন্তা করব পরে।’
তবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এত আলোচনা হোক, তা চান না মাশরাফি, ‘আর শুধু আমার বিষয় না। আপনার লেখার জন্য হয়তো…কিন্তু ছয়টা প্রশ্ন পেলাম আমাকে নিয়ে। মাশরাফি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিছু না। আপনাদের চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যারা সামনের ১০ বছর সার্ভিস দেবে, থিংক অ্যাবাউট দেম। মানুষ যা খায়, তা খাওয়াইতে গেলে হবে না। বাংলাদেশ ক্রিকেটে কী উন্নতি হবে, সেগুলো চিন্তা করতে হবে আপনাদের। এবং সেগুলোই মানুষকে জানাতে হবে।’
মাশরাফির খেলা চালিয়ে যাওয়ার পেছনের কারণটাও নতুন করে আরও একবার বললেন, ‘আমি তো বলেছিলাম আমি ক্রিকেট খেলব। আই এনজয় মাই ক্রিকেট।’
নিজের পায়ের চোটের অবস্থা নিয়েও একটা ধারণা দিয়েছেন তিনি, ‘এখন সর্বশেষ বছর পর্যন্ত আমার পায়ে কোনো রকম সমস্যা হয়নি। এই বছরে হঠাৎ চার মাস আগে ব্যথা অনুভব করি। আমি জানি না কী হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, পরে বলেছে ছোট একটা অপারেশন লাগবে। আমি নিজেও চাইনি যেহেতু পুরো ফিট না। তবে ওই যে বললাম সবকিছুতে যদি কিন্তু থাকে। কিছু চাওয়া, কিছু পাওয়ার ব্যাপার থাকে। খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছি আরকি।’
চোটের সঙ্গে লড়াই করে মাশরাফির এভাবে খেলে যাওয়াকে ভালোভাবে দেখেননি মাশরাফির একসময়ের সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল। তাঁর মতে, মাশরাফির এভাবে খেলে যাওয়া বিপিএলকে ছোট করছে। আশরাফুলের এমন মন্তব্যের পর আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে মাশরাফি ৪ ওভার বোলিং করেছেন, রান দিয়েছেন ১৯। দল হারলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। মাশরাফি অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর আজকের পারফরম্যান্সের পেছনে আশরাফুলের মন্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
তাঁর মুখেই শুনুন, ‘আমি কোনো দিনও আমার ক্যারিয়ারে পাল্টা আক্রমণ করিনি। অবশ্যই খেলাধুলায় মানুষ ভালোটাই চায়। সব সময় যারা জয়ী হয় তাদেরই চিন্তা করে, ওদেরই মনে রাখে। এটা খুব স্বাভাবিক। শুধু ক্রিকেটে নয়, জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই দেখবেন, যদি আপনি ভালো করেন, সেটাই মানুষ এসে বলবে। খারাপকে কেউ কখনো গ্রহণ করে না। সুতরাং এখানে উত্তর দেওয়ার কিছু নেই। এখানে আমরা যারা খেলছি, তারা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো।’
এরপর দলের চাওয়ায় খেলার বিষয়টি আরও একবার বললেন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক, ‘যেহেতু বোলিং করতে পারছি না, সেহেতু না খেললেই ভালো হতো। তবে দলের চাওয়া, সবকিছুর একটা ব্যাপার থাকে। সেটা নিয়ে আমি বিস্তারিত কিছু বলিনি। আজকে চেষ্টা করেছি, ভালো লাগলে বোলিং করব। পা’টা একটু ভালো লাগছিল। আর শর্ট রান আপে তো আমি গত পাঁচ-ছয় বছর ধরেই বোলিং করছি। আমার তো আর পেস বিষয় না। আর ফুল রান আপে করলেও একই পেস হয়। সর্বশেষ বছরে আমি শর্ট রান আপে করেছি অথবা এর থেকে একটু বড় রান আপে, ১৫ উইকেট পেয়েছি। এটাই, আপনি চেষ্টা করতে পারেন। এর বেশি কিছু না।’
মাঠের বাইরের সমালোচনা নিয়েও ভাবছেন না সিলেটের অধিনায়ক। আজ তাঁর পুরো স্পেল বোলিং করার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলছিলেন, ‘এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই। পারফরম্যান্স এমন একটা জিনিস…আমি তো সর্বশেষ দুই ম্যাচ প্রায় বোলিংই করিনি। পরিষ্কারভাবে মেসেজ ছিল যে আমি পারব না। আজ একটু ভালো লাগছিল বলে করেছি। আমি যেহেতু খেলছি, আমাকে এভাবেই খেলতে হবে। আমার কাজ হচ্ছে বোলিং করা, বোলিং খারাপ করলে মাথায় নিতে হয় যে আমি খারাপ করছি। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স খারাপ হতেই পারে। বাইরের আলোচনায় আপনি কামব্যাক করতে পারবেন না। আপনাকে নিজেকেই সমাধান খুঁজতে হবে। আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও এমন না যে আমিও সব সময় পারফর্ম করেছি। খারাপ গেছে, কোনো দিন ভালো গেছে। সব খেলোয়াড়কেই সমালোচনা নিয়েই খেলতে হবে। এটার জবাব দেওয়ার কিছু নেই। জবাব দেওয়াও যায় না। বরং খেলায় মনোযোগ দেওয়া ভালো।’