গতকাল ১১২ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন টেক্টর
গতকাল ১১২ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন টেক্টর

স্মিথ-ফ্লাওয়ারের যে ‘কষ্ট’, সেটা এখন টেক্টরেরও

সম্ভবত সব ব্যাটসম্যানেরই মনের ইচ্ছাটা এমন—দলের জয়ে ব্যাট হাতে ভূমিকা থাকবে আর সেটা সেঞ্চুরির চেয়ে ভালো কিছু হয় না। হ্যারি টেক্টরের কপালটা দেখুন, আয়ারল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে যতগুলো সেঞ্চুরি করেছেন সব কটিতেই দল হেরেছে।

চেমসফোর্ডে বাংলাদেশের বিপক্ষে কাল ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন টেক্টর। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো আইরিশ ব্যাটসম্যানের এটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

১০টি ছক্কাও মেরেছেন, যা আয়ারল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও। তাঁর এই ইনিংসে ভর করে আয়ারল্যান্ড ৩১৯ রান তুলেও জিততে পারেনি। ৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। তাতে টেক্টরের দুঃখ আরও বেড়েছে। ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের হয়ে তাঁর সেঞ্চুরি ৪টি—একটিতেও দল জেতেনি।

সব কটি সেঞ্চুরিই গত বছরের জুলাই থেকে এ মাসের মধ্যে। ডাবলিনে গত বছর জুলাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ১৩০ ও ১০৮ রান করেও দল জিততে পারেনি। এ বছর জানুয়ারিতে হারারেতেও একই ভাগ্য মেনে নিতে হয়।

হ্যারি টেক্টর ওয়ানডেতে যতগুলো সেঞ্চুরি করেছেন সব কটিতেই দল হেরেছে

তাঁর অপরাজিত ১০১ রানের পরও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততে পারেনি আয়ারল্যান্ড। আর কাল বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪০ রানের ইনিংসেও পাল্টায়নি ভাগ্য। বেচারা! আসলে টেক্টরের ভাগ্যটাই বোধ হয় এমন। ব্যাটিংয়ে ভালো করলেও দল বেশির ভাগ সময়ই হেরেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৮টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের (ফিফটি ও সেঞ্চুরি) ইনিংস খেলেছেন টেক্টর। এর মধ্যে ১২ ম্যাচেই দল হেরেছে।

টেক্টরের মনের দুঃখটা তাই বোঝা যায়। তবে এই দুঃখ ভোলার প্রেরণা তাঁর সামনেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (৬৬৪ ম্যাচ) সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির রেকর্ড যাঁর, সেই শচীন টেন্ডুলকারের এই দুঃখের গভীরতা সবচেয়ে বেশি। টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ার যেহেতু ২৪ বছরের, তাই তাঁর অনেক সেঞ্চুরিতে দল জেতেনি, এটা অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় না।

তবে ওয়ানডেতে টেক্টরের মতোই দুজন ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্তত ৪ সেঞ্চুরি করেছেন, কিন্তু সেঞ্চুরি করা সেসব ম্যাচে দল জেতেনি—এমন ব্যাটসম্যানদের বিবেচনায় নিয়ে টেক্টরের দুজন ‘পূর্বসূরি’ আছেন। ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান রবিন স্মিথ ও জিম্বাবুয়ের কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। ওয়ানডেতে রবিন স্মিথের ৪ সেঞ্চুরির একটিতেও জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। ফ্লাওয়ারের ক্ষেত্রেও তাই—তাঁর ৪ সেঞ্চুরির একটিতেও জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। অন্তত ৪ সেঞ্চুরি করেছেন কিন্তু সেঞ্চুরি করা সব কটি ম্যাচেই দল হেরেছে—এ তালিকায় আছেন শুধু রবিন স্মিথ, এন্ডি ফ্লাওয়ার ও হ্যারি টেক্টর।

এবার টেন্ডুলকারের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৫৩টি ফিফটির ম্যাচে ভারত জয় পায়নি। শুধু টেন্ডুলকার কেন, অন্য নামগুলোও একবার দেখুন—ব্রায়ান লারা (১৭ সেঞ্চুরি ও ৪২ ফিফটি), ক্রিস গেইল (১৫ সেঞ্চুরি ও ৪৬ ফিফটি), বিরাট কোহলি (১৪ সেঞ্চুরি ও ৪৫ ফিফটি)...এই বড় নামগুলোও উল্লিখিত সেসব ইনিংস খেললেও দল জিততে পারেনি।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিন সংস্করণ মিলিয়ে মুশফিকের খেলা ২৪৩ ম্যাচের মধ্যে তাঁর ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪০ ফিফটিতে দল জেতেনি। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এতগুলো সেঞ্চুরি ও ফিফটি বিফলে যায়নি।

শচীন টেন্ডুলকারের ১৪ সেঞ্চুরি ও ৩৫ ফিফটিতে দল জিততে পারেনি

টেক্টরের ৪টি সেঞ্চুরি যেহেতু ওয়ানডেতে, তাই শুধু এ সংস্করণের হিসাবটাও দেখা যায়। এখানেও টেন্ডুলকার সবার ওপরে। কিংবদন্তির ১৪ সেঞ্চুরি ও ৩৫ ফিফটিতে দল জিততে পারেনি। গেইলের ১১ সেঞ্চুরি ও ২৪ ফিফটিতে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ তালিকায় তৃতীয় জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেলর—তাঁর ৯ সেঞ্চুরি ও ২৫ ফিফটিতে দল জেতেনি।

৭ সেঞ্চুরি ও ২৬ ফিফটিতে দল না জেতায় তালিকাটির চারে বিরাট কোহলি। বাংলাদেশ থেকে ওয়ানডের এ তালিকায়ও মুশফিকুর রহিমের ওপরে আর কেউ নেই। টেক্টরের মতোই তাঁর ৪ সেঞ্চুরি বিফলে গেছে। ২০টি ফিফটিতেও জেতেনি বাংলাদেশ।