ইংল্যান্ডের জয়ের পর ম্যালানকে অভিনন্দন জানান সাকিব–নাজমুলরা
ইংল্যান্ডের জয়ের পর ম্যালানকে অভিনন্দন জানান সাকিব–নাজমুলরা

এক ম্যালানের কাছেই বাংলাদেশের হার

শুরুটাই চাপে পড়ে। লক্ষ্য যতই সহজ হোক, ৬৫ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেলে শঙ্কার মেঘ তো উড়বেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ কিছু সময়ের জন্য হলেও সেই মেঘ জড়ো হয়েছিল ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের আবহে। কিন্তু দলটা যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! সাদা বলের ক্রিকেটে বদলে যাওয়া এক দল!

বাংলাদেশের দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য এক ডেভিড ম্যালানের শতকেই পার করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ৩ উইকেটের জয় ৮ বল বাকি থাকতেই।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে তামিম ইকবালের ক্যাচ বানান সাকিব আল হাসান। এরপর চার ওভারের ব্যবধানে ফিল লস্ট ও জেমস ভিন্সকে ফেরান আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংসটা স্বাভাবিকভাবেই একটু দুলে উঠল। ১৭তম ওভারে আবারও আঘাত। বোলার এবার তাসকিন আহমেদ, শিকার ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার।

ম্যাচসেরা হয়েছেন ম্যালান

অমন শুরুর পরও বাংলাদেশের বোলাররা শেষ পর্যন্তও পারেননি ম্যালান-বাধা টপকাতে। চার ছক্কা আর আট বাউন্ডারিতে ১৪৫ বলে অপরাজিত ১১৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেরও এই পরিচিত মুখ। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে দুই মৌসুম প্রাইম দোলেশ্বরে খেলেছেন। বিপিএলে খেলেছেন খুলনা টাইটানস, বরিশাল বুলস, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে। শুধু প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেই খেলেছেন ২৪টি ম্যাচ।

৪৭ ওভারে ২০৯ রান, অলআউট হয়ে ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করে সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। সর্বশেষ এত কম রান নিয়ে এ মাঠে বাংলাদেশ জিতেছে ২০১৮ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেবার জয়টা এসেছিল ২১৬ রান করেও।

এবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আজ প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ওপেনিং জুটিতে শুরুটা ভালোই ছিল। তবে ১০ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারেরই বিদায় বিপদ ডেকে আনে। এরপরও উইকেট পড়েছে জোড়ায় জোড়ায়। ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৩ রানের জুটিটি এসেছে পঞ্চম উইকেটে, মাহমুদউল্লাহ ও নাজমুল হোসেনের মধ্যে। নাজমুল ফিফটির পরপরই থেমেছেন, মাহমুদউল্লাহ থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

তবু বাংলাদেশের ইনিংসে কারও ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে কিছু বলতে হলে তাঁদের কথাই বলতে হয়। নাজমুলের ৮২ বলে ৫৮ আর মাহমুদউল্লাহর ৪৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস দুটিতেই আসলে ২০০ পার হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস।

ইংল্যান্ডকে জেতানোর পর ম্যালানের মুষ্টিবদ্ধ উদ্‌যাপন

দলের ১০৬ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব আল হাসানের বিদায়ের পর জুটি বেঁধেছিলেন নাজমুল-মাহমুদউল্লাহ। এর আগে উল্লেখযোগ্য বলতে ৩২ বলে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ২৩ রান। অবশ্য ৮ রান করে মঈন আলীর বলে বোল্ড হয়ে যাওয়া সাকিবের তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামাটাও চোখে পড়ার মতো।

২০১৭ সালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডারের তিনে উঠে আসেন সাকিব। কখনো কখনো চারেও খেলেছেন, ২০১৮ সাল থেকে মাত্র তিন ম্যাচে খেলেছেন পাঁচ নম্বরে। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেটাও সর্বশেষ ২০১৮ সালেই।

তিন নম্বরেই সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর সেরা ব্যাটিংটা করেছেন। এ সময় ৪৫ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪৮ গড়ে ১৭৫৫। আরও ভালো উদাহরণ, ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং পারফরম্যান্সটা এসেছে তিনে খেলেই। হাথুরুসিংহে ফিরে আসার পর আজ প্রথম ম্যাচেই সাকিবকে আবারও ফিরতে হলো পাঁচ নম্বরে।

অবশ্য নিজের আউট নিয়ে অসন্তোষ থাকার কথা সাকিবেরও। মাত্র ১১ বল খেলেছিলেন, দুই ওভার আগেই ফিরে গেছেন মুশফিকুর রহিম। ওই পরিস্থিতিতেই কি না সাকিব উইকেট দিলেন বিপজ্জনক সুইপ শট খেলতে গিয়ে! মঈন আলী একটু ঝুলিয়ে বল ছেড়েছিলেন। সাকিব জোরে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড।

জয়ের আশা জাগিয়েও পারেনি বাংলাদেশ

এই সিরিজে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণটাকেই বলা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে সে আক্রমণটা খুব ধারাল ছিল বলা যাবে না। মাঝে মাঝেই এলোমেলো মনে হচ্ছিল তাদের। এরপরও যে বাংলাদেশের ইনিংসটা ২০০-এর পরপরই থামল, সেটার বড় কারণ আসলে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের বাজে শট খেলে আউট হয়ে যাওয়াটা।