কুইন্টন ডি ককের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, এইডেন মার্করামের ফিফটির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে লক্ষ্ণৌয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩১১ রান। শক্ত ভিত পেলেও ইনিংসের পরের ভাগে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারিয়ে এক রকম হোঁচটই খেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সে সময় পিচ থেকে গতি কমিয়ে আনা ডেলিভারি বেশ কাজে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। তবে ইনিংসজুড়েই অস্ট্রেলিয়াকে ভুগিয়েছে পিচ্ছিল ফিল্ডিং, অন্তত ৬টি সুযোগ হাতছাড়া করেছে তারা।
প্যাট কামিন্স টসে জিতে ফিল্ডিং নিলেও দুই অধিনায়কের কেউই ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না, কী করবেন তা নিয়ে। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারিটি আসে চতুর্থ ওভারে, ডি ককের ব্যাট থেকে। টেম্বা বাভুমা ছন্দে ছিলেন না মোটেও, তবে ডি ককের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারে ওঠে ৫৩ রান। ৫৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসেই বাভুমা বাঁচেন তিনবার। অবশ্য ডি ককের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১১৮ বলে ১০৮ রানের ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরুই পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্রেকথ্রুটি এনে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, তাঁর বলে বাভুমার স্লগ সুইপে ক্যাচ ওঠে ডিপ মিডউইকেটে।
তবে অস্ট্রেলিয়াকে ডি কক ভুগিয়েছেন আরও কিছুক্ষণ। এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে সর্বশেষ ২০ মাস ও ১৮ ইনিংসে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না ডি ককের, সেই তিনিই টানা ২ ম্যাচে পেরোলেন ১০০। এ ইনিংসেও এ বাঁহাতির স্ট্রোকপ্লে ছিল দারুণ। ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কা, সবকটি ছক্কায় এসেছে লেগ সাইডে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে। কামিন্সকে পুল করে মারা অমন একটি ছক্কায় ৯০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিটি পান তিনি।
বাভুমার পর ফন ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করামের সঙ্গে দুটি জুটির অংশ থাকেন ডি কক। দুটিই হুমকি দিচ্ছিল ভালোভাবেই, তবে অস্ট্রেলিয়া সেগুলোকে সেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেয়নি। জাম্পাকে লং অনে ক্যাচ দিয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ফন ডার ডুসেন ফিরলে ভাঙে ৫৩ বলে ৫০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ২৮ রানের ইনিংসেই অবশ্য ওয়ানডেতে ইনিংসের হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন ফন ডার ডুসেন। তাঁর লাগে ৪৫ ইনিংস, তালিকায় তাঁর ওপরে ৪০ ইনিংসে মাইলফলক ছোঁয়া হাশিম আমলা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান এইডেন মার্করাম জীবন পান ১ রানেই। ফুলটসে ফিরতি ক্যাচ দিলেও রাখতে পারেননি কামিন্স। মার্করামের সঙ্গে ডি ককের জুটি ৩৯ রানের, যেটি ভাঙে ডি ককের আউটে। ম্যাক্সওয়েলকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন, তাতে ব্যাটে লেগে বোল্ড হন।
৩৫তম ওভারে কোনো ওপেনার মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া মানে ভালো একটা ভিত পেয়েছে সেই দল, তার ওপর যদি তাদের থাকে বিস্ফোরক কোনো মিডল অর্ডার তাহলে তো কথাই নেই। মার্করাম, হাইনরিখ ক্লাসেনরা ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আরেকবার ঝড় তোলার। তবে ৪ রানের মধ্যে মার্করাম ও ক্লাসেনকে থামিয়ে লড়াইয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়া। দুটিই আসে শর্ট বলে।
কামিন্সের স্লোয়ারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মার্করাম, হ্যাজলউডের বলে থামে ক্লাসেনের ২৭ বলে ২৯ রানের ইনিংস। ডেথ ওভারে এমন দুজনের উইকেটে নিশ্চিতভাবেই ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ডেভিড মিলারের সঙ্গে মার্কো ইয়ানসেনের জুটিতে ৩০ বলে ওঠে ৪৩ রান। মজার ব্যাপার হলো, সে জুটিতে মিলারের অবদান ১৫ রান। দুজনকেই জীবন দেয় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শেষ ওভার দুজনকেই ফেরান মিচেল স্টার্ক, সে ওভারে মাত্র ১ রান তুলতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম ৯ ওভারে ৫৩ রান দেওয়া স্টার্ক তাই ঘুরে দাঁড়ান দারুণভাবে। লক্ষ্ণৌয়ে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার ছিলেন ম্যাক্সওয়েল, ১০ ওভারে মাত্র ৩৪ রান দিয়ে তিনি নেন ২ উইকেট। বিশেষজ্ঞ স্পিনার জাম্পার বোলিং ফিগার সেখানে ছিল এমন-১০ ওভার, ৭০ রান, ১ উইকেট।