বিরাট কোহলি হওয়ার বিড়ম্বনা তো কম নয়!
এই তো গত মাসেই বিশ্বকাপে ওয়ানডে শতকের অর্ধশতক করলেন। ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯ শতকের যে রেকর্ডকে অবিনশ্বর বলে ভাবা হতো, সেটা ভেঙেছেন। তা–ও নিজের আদর্শ টেন্ডুলকারকে গ্যালারিতে সাক্ষী বানিয়ে!
এত বড় অর্জনের পরও কোহলির বিশ্রামের সুযোগ নেই। তাঁর সামনে আবার সেই পুরোনো প্রশ্ন।
উত্তর দিতে পারলে অনেকে হয়তো তাঁকে ‘সর্বকালের সেরা’ বলতে দ্বিধা করবেন না। মানে, সংখ্যার হিসাবে কোহলি টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে গেলে! এবার কোটি টাকার সেই পুরোনো প্রশ্নটি জানানো যাক এবং সেটা অনেকেরই হয়তো জানা—৮০টি আন্তর্জাতিক শতকের মালিক কোহলি টেন্ডুলকারের ১০০ শতকের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবেন?
বিশ্বকাপের পর কোহলি ছুটি কাটাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলবেন না। বিশ্রামে থাকা কোহলিকে নিয়ে হঠাৎ এই আলোচনার কারণ আরেক কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা। ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লারা কোহলির ১০০ শতকের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
সাক্ষাৎকারে লারা বলেছেন, ‘কোহলির বয়স কত? ৩৫, ঠিক? কোহলির এখনো ২০টি শতক দরকার। প্রতিবছরে ৪টি করে শতক করলে শচীনের সমান হবে। খুবই কঠিন কাজ। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কেউ পারবে না। যারা বলছে কোহলি শচীনের ১০০ শতকের রেকর্ড ভাঙবে, তারা ক্রিকেটের যুক্তিকে বিবেচনায় নেয়নি। ২০ শতক এখনো অনেক দূরে। বেশির ভাগ ক্রিকেটার পুরো ক্যারিয়ারেই তা পারে না।’
লারার সঙ্গে মতের মিল নেই এমন অনেক সাবেক ক্রিকেটার পাওয়া যাবে। গত বিশ্বকাপে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, শতকের শতকও আসতে পারে কোহলির ব্যাট থেকে। এমন স্বপ্ন দেখছেন আরও অনেকেই।
কিন্তু সংখ্যা ও বাস্তবতা কী বলছে? আগামী তিন বছর এফটিপি অনুযায়ী, ভারত ওয়ানডে খেলবে ২৭টি, টেস্ট ৩২টি আর টি-টোয়েন্টি ৪৩টি। এর বাইরে ভারত খেলবে ২০২৪ ও ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এ ছাড়া আছে একাধিক এশিয়া কাপ। যদি ধরে নেওয়া হয়, কোহলি ২০২৭ সাল পর্যন্ত খেলবেন, তাহলে আইসিসি ও এসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্ট বাদেও কোহলির সামনে আছে ১০২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
তবে কোহলি নিশ্চিতভাবেই এতগুলো ম্যাচ খেলবেন না। এরই মধ্যে তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কোহলি ভারতের হয়ে এই সংস্করণে আর খেলেননি। চলতি বছর তাঁকে ছাড়াই ভারত খেলেছে ১৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। যদি কোহলি এ সংস্করণ থেকে সরেও দাঁড়ান, তাহলে তাঁর ম্যাচসংখ্যা কমবে।
আবার টি-টোয়েন্টিতে কোহলিকে ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও ভাবতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে ৩ থেকে ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই শতক করা কঠিন। আইপিএলে কোহলি যে আসরে ৪টি শতক করেছিলেন, সে আসরে তিনি খেলেছিলেন ওপেনার হিসেবে। এমনকি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর একমাত্র শতকও এসেছিল ওপেনার হিসেবে। তবে ভারতের বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলে সে সুযোগ কম।
খেলার চাপ কমাতে কোহলি হয়তো সব ওয়ানডে ও টেস্ট খেলবেন না। এখন যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজ থেকে বিশ্রামে আছেন। এমন অনেক সিরিজেই নতুনদের সুযোগ আর কোহলির বিশ্রামের জন্য তাঁকে না খেলানো হতে পারে। তবে কোহলিভক্তদের জন্য আশার কথা হচ্ছে, আইসিসি ও এসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে কোহলি অনেক ম্যাচ পাবেন। কিন্তু কতগুলো ম্যাচ পেলে ২০টি শতক করতে পারবেন? নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই, কোহলিও নিজেও তা বলতে পারবেন না।
তবে চলতি বছর বিবেচনায় নিয়ে আনুমানিক একটি হিসাব করা যেতে পারে।
চলতি বছর টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৩৪ ইনিংসে কোহলির শতক ৮টি। অর্থাৎ প্রতি ৪.২৫ ইনিংস পর শতক করেছেন কোহলি। শতক করার এই হার যদি কোহলি ধরে রাখতে পারেন, তাহলে ২০টি শতক মানে বিশের ‘বাঁশি’ বাজাতে কোহলির এখনো লাগবে ৮৫ ইনিংস।
৩৫ বছর বয়সী কোহলির বয়সের হিসাবটাও মাথায় রাখতে হবে। এই বয়সে যেকোনো ক্রিকেটারের জন ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন। ছন্দের চূড়ায় থাকাও কঠিন। বিশ্বকাপে ৭৬৫ রান করে কোহলি দেখিয়েছেন, তিনি এখনো সেরা ছন্দেই আছেন, তবে সেটা ধরে রাখতে পারবেন তো? তবে উদাহরণ কিন্তু আছে।
৩৫ বছরের পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতকের মালিক পাকিস্তানের ইউনিস খান। তাঁর শতক ১৪টি। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি শতকের মালিক দুই শ্রীলঙ্কান সনাৎ জয়াসুরিয়া ও তিলকারত্নে দিলশান। এই দুজনই ওয়ানডেতে ১২টি করে শতক করেছেন। তাই কোহলিভক্তরা আশা করতেই পারেন।
তবে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে ৭২ ইনিংসে কোহলি কোনো শতক পাননি। শেষ পর্যন্ত টেন্ডুলকারকে ধরতে না পারলে ওই ৭২ ইনিংস নিয়ে আফসোস হতে পারে কোহলির। ভক্তদেরও কি সেই আফসোস ছুঁয়ে যাবে? সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একনিষ্ঠ ক্রিকেটভক্ত মাত্রই জানেন, কোহলির আসল মহিমা তাঁর ব্যাটিং সৌন্দর্যে। এই সৌন্দর্য সংখ্যায় ধরা যায় না, দেখার শান্তি।