বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান এখন বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া নাজমুল হাসান নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর জানিয়েছেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। নতুন সভাপতি কে হতে পারেন, এ নিয়েও আলোচনা চলছে। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাও আসছে সেই আলোচনায়। এখনই মাশরাফির কেন বোর্ড সভাপতি হওয়া সম্ভব নয়, সেটিও বুঝিয়ে বলেছেন নাজমুল।
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত নাজমুল হাসানেরই বিসিবি সভাপতি পদে থাকার কথা। বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন ২০২৫ সালের অক্টোবরে। তবে আজ নাজমুল হাসান সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, একই সঙ্গে দুই দায়িত্ব পালনে আইসিসি বা দেশের আইনে কোন বাধা না থাকলেও চলতি বছরই যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চান।
এ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘আইনে কোনো সমস্যা নেই, এটাই হচ্ছে বড় কথা। কথা হচ্ছে এক সঙ্গে যদি দুটোতে থাকি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে যে ক্রিকেটের প্রতি আমার দৃষ্টিটা একটু বেশি। এটা সকলের ধারণা, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। যদিও আমি বলে রাখি, আমি যদি এই ক্রিকেট বোর্ড, মন্ত্রণালয়ে নাও থাকি, তবু ক্রিকেট সবসময় আমার সঙ্গে থাকবে। এটা মন থেকে তো আর সরানো যাবে না।’
তবে ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া পেছনেও যুক্তি আছে নাজমুল হাসানের, ‘কিন্তু ভালো হয় যদি আলাদা হয়ে যায়। আলাদা হয়ে গেলে ভালো হবে, কারণ তাহলে আর মানুষের মধ্যে ওই সন্দেহটা হবে না, যে হয়তো ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ আমি গুরুত্ব সবগুলোকে দিতে চাই। তবে প্রায়োরিটি ভিত্তিক।’
টানা তৃতীয় মেয়াদে বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুলের সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের আরেকটা কারণও আছে, ‘আমি এই টার্মে হতে চাইনি। ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু হয়েছি। আগে থেকেই বলেছি, এটাই আমার শেষ টার্ম। এখন যেহেতু একটা নতুন দায়িত্ব এসেছে, আমার মনে হয় এখন সরে যেতে পারলে ভালো। তবে আমি এমন কিছু করব না, যাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতি হয়। সেটা মাথায় রাখব। যেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, তাই করব। সঠিক পথে আগে বের হয়ে আসতে পারলে আসব, তবে আসার আগে এটাও নিশ্চিত করব যে কোনো সমস্যা হবে না। সামনে কী হবে, সেটা পরিস্থিতির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। অনেক কিছুই আমি কখনো ভাবিনি আমি করব, কিন্তু এখন তো হচ্ছে।’
কিন্তু বিসিবির দায়িত্ব ছাড়া সহজ প্রক্রিয়া নয় বলেই দাবি নাজমুল হাসানের, ‘প্রথম কথা হচ্ছে ইচ্ছা করলেই ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেটা আমরা জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও দেখেছি দুই বছর তারা প্রায় ব্যান (নিষিদ্ধ), শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও এবার দেখেছি। আমি মনে করি তাড়াহুড়ো করে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না, যেটা দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করতে পারে।’
এ ব্যাপারে আইসিসির সঙ্গেও যোগাযোগ করার আভাস আছে নাজমুল হাসানের কথায়, ‘একটা অপশন ওদের (আইসিসি) সঙ্গে আমার কথাটা বলতে হবে। এখানে দুটো জিনিস আছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা হচ্ছে আইসিসি চায় তাদের ইলেকটেড বডি (নির্বাচিত কমিটি) পূর্ণমেয়াদ শেষ করুক। আর একটা হচ্ছে আইসিসির মেয়াদ। আইসিসির মেয়াদটা শেষ হয়ে গেলে তখন একটা চিন্তা করে ওদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে আসার সুযোগ আছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই এখন যারা বোর্ডের পরিচালক আছে তাদের মধ্যে থেকে একজন হবে (বিসিবি সভাপতি)। মানে বাইরে থেকে কারও আসার কোনো সুযোগ নেই।’
ক্রিকেট থেকে আসা অন্য দুই সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের বিসিবি সভাপতি হওয়া নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কৌতূহল। কিন্তু বিসিবির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সেটি সম্ভব নয়।
বিষয়টি নাজমুল ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘প্রথমে তাকে কাউন্সিলরশিপ নিতে হবে। এরপর নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। নির্বাচিত যারা হয়ে আসবে, তারাই ঠিক করবেন কে সভাপতি হবে। প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ। এখন ধরেন, ধরে নিলাম আমার বোর্ডের সবাই আছে, খালি নতুন ২/১ জন আসল। এখানে সিনিয়রদের মধ্যে আছেন, সিরাজ ভাই, ববি ভাই, জালাল ইউনুস, মাহবুব উল আনাম। আবার ক্রিকেটারদের মধ্যেও সিনিয়র যারা আছে, আকরাম খান, দুর্জয়, সুজন—অনেকেই আছে। তারা কাকে বেছে নেবে এটা বলা কষ্ট। বাইরে থেকে চাপানোর কোনো সুযোগই নেই।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি যদি বোর্ডে না থাকি, তাহলে তো সাজেস্ট করার ব্যাপারই নেই। আর এটা এভাবে হয় না, যে আমি কাউকে সাজেস্ট করব। আমি তো সাজেস্ট করি এটা তো ইনফ্লুয়েন্স হয়ে গেল। এমন একজনকেই হতে হবে, যাকে সবাই মেনে নিচ্ছে। যদি বোর্ডের সবাই মেনে না নেয়, তাহলে বোর্ড চালাবে কীভাবে? এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, তখন যারা পরিচালন হবেন, তাদের সঙ্গে বসেই ঠিক করতে হবে।’