পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়। সেটিও পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাইয়ে তেতো স্বাদ দিয়ে। দারুণ এই অর্জনের পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে বইছে খুশির জোয়ার। গত রাতে বাংলাদেশ দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে দেশে ফেরার পর আন্দদের মাত্রা আরও বেড়েছে।
কিন্তু পাকিস্তানে ১৬ জন ক্রিকেটার গেলেও কাল রাতে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমেছেন ১৫ জন। একজন দলের একাংশের সঙ্গে করাচি থেকে দুবাই পর্যন্ত যাওয়ার পর ধরেছেন লন্ডনগামী ফ্লাইট। এতক্ষণে তাঁর ইংল্যান্ডে পৌঁছেও যাওয়ার কথা। সেখানে তিনি সারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলবেন। কার কথা বলা হচ্ছে, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! সাকিব আল হাসান, যাঁকে ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক পোশাককর্মী হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
সেই মামলার খড়্গ নিয়ে সাকিব পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টেই খেলেছেন। তাঁর খেলা–না খেলা নিয়ে অনেক আলোচনা–সমালোচনা হলেও সতীর্থদের তিনি পাশেই পেয়েছেন। মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, শরীফুল ইসলাম থেকে শুরু করে জাতীয় দলের বাইরে থাকা এনামুল হক, রুবেল হোসেনরা সাকিবকে ‘নিরাপরাধ ও নির্দোষ’ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
কাল টেস্ট সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকেও সাকিবকে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। ক্রিকেটারদের সবাই সাকিবের পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন। সুযোগ পেলে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটি তোলার কথাও। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের নাজমুল বলেছেন, ‘সাকিব ভাইয়ের ব্যাপারটি ভিন্ন। তবে প্রত্যেক খেলোয়াড় সাকিব ভাইয়ের পাশে আছে। সবাই জানি সাকিব ভাই খেলার জন্য কতটা নিবেদিত এবং খেলার জন্য কতটা পাগল। সবসময় দলের জন্য চিন্তাভাবনা করে থাকেন। যখন দেখা হবে (প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে), এটা নিয়ে যদি কথা ওঠে তাহলে বলব, প্রত্যেক খেলোয়াড় সাকিব ভাইয়ের পাশে আছে।’
পাকিস্তানে ২–০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আগের দুই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র মিলিয়ে একটির বেশি ম্যাচ জিততে না পারা বাংলাদেশ এবার এরই মধ্যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে। সিরিজ জয়ের নায়কদের প্রায় সবাই আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়েও বড় লাফ দিয়েছেন। অথচ পাকিস্তানে যাওয়ার আগে দেশে অনেক কঠিন সময় পার করেছে বাংলাদেশ দল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কিছুদিনের জন্য মাঠের অনুশীলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দলের।
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতি এক পাশে রেখে খেলায় মনোনিবেশ করে অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে নাজমুল বলেছেন, ‘এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা অর্জনগুলোর একটি। আমার কাছে এটাই সেরা মনে হচ্ছে। এটা শুধু আমার একার কথা নয়, দলের সবাই তা বিশ্বাস করে। খুবই ভালো লাগছে।’
নির্ধারিত সময়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানে যেতে পারায় সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন বলেও মনে করেন নাজমুল, ‘এই সিরিজটি খুবই ভালো গিয়েছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, সফরে যাওয়ার আগে এবং সেখানে যাওয়ার পর… দলের প্রত্যেকের মানসিকতা, দক্ষতা ও সামর্থ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা, সব মিলিয়ে খুব ভালো প্রস্তুতি ছিল এবং প্রত্যেকের ইচ্ছা ছিল যেন আমরা জিততে পারি। আমরা পাকিস্তানে তিন দিন আগে গিয়েছিলাম। এটা আমাদেরকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।’