প্রতিবারের মতো এবারও বিপিএল শুরু হয়েছিল সমালোচনাকে সঙ্গী করে। বিসিবির একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের অব্যবস্থাপনা নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা।
আর ডিআরএস না থাকা নিয়ে তো আগে থেকেই সমালোচিত হয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। এত কিছুর পরও মাঠের ক্রিকেটটা ভালো হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি। তাতে মাঠের বাইরের অনেক অব্যবস্থাপনাই চাপা পড়ে গেছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বিপিএলের মাঠের ক্রিকেটের প্রশংসা করতে গিয়ে এ কথাই বলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্স দলের অধিনায়ক মাশরাফি, ‘মূল যে আলোচনাটা হতে পারত, সেটা মাঠের ক্রিকেট। এবার যেমন খেলা হচ্ছে, সবকিছু চাপা পড়ে গেছে। এখন আপনার ক্রিকেটারদের সামর্থ্য কেমন সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে। আসলে আপনার সামর্থ্য কী। এখন তো আপনি অভিযোগ করতে পারবেন না যে খারাপ উইকেট।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘যারা ভালো প্লেয়ার, তারা ঠিকই রান করছে। সাকিব রান করছে। মুশি সুযোগ ওই রকম পায়নি। কিন্তু সুযোগ পেয়ে দুটি ম্যাচ ফিনিশ করে এসেছে। রিয়াদ সুযোগ পায়নি। তামিম রান করেছে শেষ ম্যাচে। লিটন রান করেছে, শান্ত রান করেছে। যাদের মান আছে, তাদের এখনই দেখানোর সময়।’
উইকেট ভালো হওয়ায় বিপিএলে পেসারদের দাপট দেখা যাচ্ছে। প্রতিবারের মতো স্পিন দাপট এবার নেই বললেই চলে। মাশরাফি পার্থক্যটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘বোলাররাও তো ভালো ভালো বোলার। ১৪০-১৪৫ গতি…সব দলেই কমবেশি পেসার আছে। স্পিনাররাও কোয়ালিটি, কিন্তু এবার দেখুন স্পিনাররা ভালো বল করতে পারছে না। কারণ উইকেট ভালো। এবার পেস বোলারের ওপর দলগুলো নির্ভরশীল। প্রতিটি দলেই ৩-৪ জন পেসার আছে। আগে যেকোনো স্পিনার দিয়ে কাজ চালানো যেত। এবার সে সুযোগ নেই। আমাদের দলে ইমাদ ভালো করছে। সাকিব ভালো করছে। আন্তর্জাতিক মানের যারা, তারা ভালো করছে। খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকে ভালো উইকেটের। বোলাররা মার খেলেও ওরা শিখবে। আর ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাস পাবে।’
এবারের বিপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন সাকিব। ভালো উইকেটের সুবিধাটা তিনি লুফে নিয়েছেন। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাচ্ছেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এ পর্যন্ত ৩৯০ ম্যাচে ৩৫৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারকে ৩০ ইনিংস করে ভাগ করলে সর্বশেষ ভাগেই সবচেয়ে ভালো কেটেছে সাকিবের। বিপিএলের গত মৌসুমের দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিসহ সর্বশেষ ২৯ ইনিংসে সাকিব রান করেছেন ৭৫৫। সাকিব এর আগে ৩০ ইনিংসের একটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৯১ রান করেছিলেন (২০১২ ও ২০১৩ মিলিয়ে)। সর্বশেষ ২৯ ইনিংসে তাঁর ফিফটি সাতটি।
পরিবর্তনটা মাশরাফিও ধরতে পেরেছেন, ‘ভারত সিরিজে শর্ট বলে একটু স্ট্রাগল করেছিল। সে এরপর স্টান্সটা কিছুটা পরিবর্তন করেছে। এর জন্য এখন সে উইকেটের চারপাশে শট খেলতে পারছে। এটা সাকিবের মতো প্লেয়ারদের কাছ থেকে অবাক হওয়ার কিছু নয়। কারণ বিশ্বমানের খেলোয়াড়েরা নিজেদের উপায় বের করে নেয়। সাকিব এর চেয়েও ভালো কিছু করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সাকিবের কাছে আপনি আশা করেন যে সে কিংয়ের মতো আসবে এবং কিংয়ের মতো পারফর্ম করবে।’