৪ উইকেট নিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৫-এর অপেক্ষায়। ওদিকে সামনে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন তখন ৬৭ রানে অপরাজিত। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। নাজমুল অবশ্য ইতিহাসের সেরা এই বাঁহাতি-ঘাতককে কয়েক ওভার আগেই রিভার্স সুইপে দুটি চার মেরেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও টার্নিং উইকেটে এটা নিরাপদ শটই।
৫৪তম ওভারের পঞ্চম বলে নাজমুল ভিন্ন পথ বেছে নিলেন। অশ্বিনের ফ্লাইট মেশানো বলে পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে স্ট্রেট ড্রাইভ। ছক্কা হতে হতেও হলো না। কিন্তু এক বাউন্সে বলটা সাইটস্ক্রিনে গিয়ে এত জোরে লাগল যে শব্দটা স্পষ্ট শোনা গেল প্রেসবক্স থেকেও। লং অফে দাঁড়ানো বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের একজন রবীন্দ্র জাদেজা চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে। যেন বলতে চাইলেন, চেন্নাইয়ের চতুর্থ দিনের উইকেটেও অশ্বিনকে এভাবে মারল!
চেন্নাই টেস্টে ৮২ রানের ইনিংস খেলে নাজমুলের রানে ফেরাটাই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে একমাত্র প্রাপ্তি। তাঁর ইনিংসের ছোট্ট সেই মুহূর্তটি অবাক করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর ক্রীড়া সাংবাদিক চেন্নাইয়েরই মানুষ ভেঙ্কাটা কৃষ্ণকে। সারা বছর চেন্নাই ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকার সুনাম আছে তাঁর। এর আগে এমন টার্নিং উইকেটে ঘরের ছেলে অশ্বিনকে কেউ এত জোরে স্ট্রেট ড্রাইভ মেরেছেন কি না, তিনিও তা মনে করতে পারছিলেন না। ভেঙ্কাটা কৃষ্ণের কথা শুনে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং নিয়ে আক্ষেপটা আরও বেড়ে গেল। নাজমুলের এমন শটের প্রদর্শনী প্রথম ইনিংসে কোথায় ছিল! দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে আসা ঝলমলে ৮২ রানের ইনিংসটি তো দলের কোনো কাজেই এল না। টেস্ট জয়ের প্রথম শর্তই হলো প্রথম ইনিংসে বড় রান। চেন্নাই টেস্ট হেরে সে শিক্ষাটা যেন নতুন করে পেল বাংলাদেশ দল। টেস্টের সেরা ব্যাটিং কন্ডিশন পেয়েও প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ১৪৯ রানে অলআউট হন নাজমুলরা। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
আজ হারের পর বারবার প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং–ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বললেন জানা কথাটা, ‘প্রথম ইনিংসে আমরা ব্যাটিং ভালো করিনি। টেস্ট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ভালো করাটা গুরুত্বপূর্ণ।’ নাজমুল প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও তাঁর শট নির্বাচন বেশির ভাগ সময় সঠিকই মনে হয়েছে। কিন্তু বাকিদের নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কোথায়!
মিডল অর্ডারের দুই অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ৭৮। পাকিস্তানে দারুণ ফর্মে থাকা লিটন দাস প্রথম ইনিংসে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন, গতকাল ঠেকাতে গিয়ে। মিরাজ প্রথম ইনিংসে ২৭ রানে অপরাজিত থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়েছেন। আর টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আউট হয়ে মাথা নিচু করে ড্রেসিংরুমে ফেরাটা তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত ছবি।
নাজমুলও সেই টপ অর্ডারের অংশ। তবে ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে কীভাবে নতুন বলের কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়, সেটা তিনিই করে দেখিয়েছেন। বাকিদের এবার সে শিক্ষা নেওয়ার পালা। অধিনায়ক বলেছেন, ‘প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং আমাদের জন্য শিক্ষার। টপ অর্ডারে আরও সচেতন থাকতে হবে। ওপরের দিকে আরও কিছু রান করতে হবে আমাদের। এই শিক্ষার কথা আমি বলতে পারি। ভবিষ্যতের কথা বললে, প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানই মনে করে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ সঙ্গে বলেছেন, ‘টপ অর্ডারে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। এই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া আমাদের দায়িত্ব, আমরা যারা ওপরের দিকে ব্যাটিং করি। আমরা কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’
২৭ সেপ্টেম্বর শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের আগে কানপুরের গ্রিন পার্কে দুই দিন অনুশীলনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। সেটাকে কেউই যথেষ্ট বলবেন না। চেন্নাইয়ে লাল মাটির উইকেটে খেললেও কানপুরে নাকি বাংলাদেশের জন্য কালো মাটির উইকেট অপেক্ষা করছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ২০২১ সালের কানপুর টেস্ট ড্রতে শেষ হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, কানপুরে ভারতের খেলা ২৩টি টেস্টের মধ্যে ১৩টিই হয়েছে ড্র।
তবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যেতে হলে ভারতকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করতেই হবে। এরপর তাকিয়ে থাকতে হবে অস্ট্রেলিয়া সফরের দিকে। আরেকটি জয়ের খোঁজে মরিয়া হয়ে ভারত যে কানপুরে বোলিং–সহায়ক উইকেটই দেবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে না। বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য এটি মোটেও সুখবর নয়।
বাংলাদেশ দল এবার টেস্টের প্রথম শর্তটা পূরণ করে প্রথম ইনিংসে বড় রান তুলতে পারে কি না, সেটিই দেখার বিষয়।