শিরোনাম দেখে ভারত–পাকিস্তানের কোনো ফুটবল বা হকি ম্যাচের ফল মনে হতে পারে; অথবা এমন কোনো খেলা, যেটার ফল গোলে নির্ধারিত হয়।
তবে এই সংখ্যাটা ফুটবল–হকির নয়, ক্রিকেটের! গত ২৫ বছরে কোন দেশ আইসিসির কয়টি ছেলেদের টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে, সংখ্যাটা সেটার। যেখানে ভারতের ৩, বাংলাদেশের ৫–এর বিপরীতে পাকিস্তানের নামের পাশে ০!
মানে, গত আড়াই দশকে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে হয়নি। অথচ এ সময়ে ওমান, মালয়েশিয়া, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো আইসিসির সহযোগী দেশগুলো অন্তত একবার করে আয়োজক হতে পেরেছে।
হঠাৎ আইসিসি প্রতিযোগিতার ‘স্বাগতিক প্রসঙ্গ’ সামনে আনার কারণ অবশ্যই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এক সপ্তাহ পরেই ভারতে বসতে চলেছে ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে গত ২৫ বছরে চতুর্থবার আইসিসি প্রতিযোগিতার আয়োজক হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। ১৯৯৮ থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট—এ সময়ে তারা ছেলেদের একটি করে ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০১১ যৌথভাবে), টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০১৬) ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (২০০৬) আয়োজন করেছে।
এ তালিকায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গত ২৫ বছরে এ দেশে আইসিসির পাঁচটি প্রতিযোগিতা টুর্নামেন্ট হয়েছে। শুরুটা ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (সে সময় নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি) দিয়ে। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল খেলার সুযোগ না পেলেও আয়োজক হিসেবে বেশ সফল ছিল বিসিবি। এরপর ২০০৪ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ (যৌথভাবে), ২০১৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।
গত ২৫ বছরে ছেলেদের আটটি আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে শীর্ষে আছে ইংল্যান্ড। এ সময় ইংল্যান্ডে হয়েছে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ (১৯৯৯ ও ২০১৯ যৌথভাবে), একটি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০০৯), তিনটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (এককভাবে ২০০৪, যৌথভাবে ২০১৩ ও ২০১৭) ও দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল (২০২১ ও ২০২৩)।
বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাও পাঁচবার করে আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছে একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০০৩ যৌথভাবে), একটি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০০৭), একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (২০০৯) ও দুটি অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ (১৯৯৮ ও ২০২০)। শ্রীলঙ্কায়ও হয়েছে একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ (২০১১ যৌথভাবে), একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০১২), একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি (২০০২) ও দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ (২০০০ ও ২০০৬)।
গত ২৫ বছরে মোট ১৭টি দেশ আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। অথচ পাকিস্তান আইসিসির পূর্ণ সদস্যভুক্ত দেশ হয়েও একটিবারও স্বাগতিক হতে পারেনি। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ভারত–শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করা পাকিস্তান এরপর যে আয়োজনস্বত্ব পায়নি, তা নয়। এককভাবে ২০০৮ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও যৌথভাবে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল ইমরান খান–ওয়াসিম আকরামদের দেশ।
কিন্তু নিরাপত্তাশঙ্কায় বিভিন্ন দেশের সরকার পাকিস্তানে দল পাঠাতে না চাইলে ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সরিয়ে নেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবু ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। কিন্তু ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর দীর্ঘদিন আর কোনো দেশ পাকিস্তান সফর করেনি।
২০১৫ সালে পাকিস্তানে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরলেও আইসিসি তত দিনে অন্য দেশগুলোকে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বত্ব দিয়ে দেয়। তাই গত ২৫ বছরে আইসিসির একটি ইভেন্টও পাকিস্তানে হয়নি।
২০২৩ থেকে ২০৩১—এই আট বছরের প্রতিটিতে একটি করে টুর্নামেন্ট রেখেছে আইসিসি। আয়োজনস্বত্ব দেওয়া হয়েছে আইসিসির সদস্যভুক্ত ১৪টি ক্রিকেট বোর্ডকে। এর মধ্যে পাকিস্তানও আছে। ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের কথা রয়েছে পাকিস্তানের। সেটা হলে দেশটিতে ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো প্রতিযোগিতা হবে।
গত দুই বছরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলগুলো নির্বিঘ্নে পাকিস্তান সফর করে এসেছে। তাই ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদী হতেই পারে পিসিবি। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত বরাবরের মতো সামনের দিনগুলোয়ও বেঁকে বসলে আইসিসির টুর্নামেন্ট আয়োজনের অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘায়িত হবে পাকিস্তানের।