ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে বৈরী সম্পর্কের কথা সবার জানা। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই বৈরী সম্পর্কের কোপটা পড়েছে ক্রিকেটে। অনেক বছর ধরেই আইসিসি কিংবা এসিসির টুর্নামেন্ট ছাড়া ভারত–পাকিস্তানকে মুখোমুখি হতে দেখা যায় না।
আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনাসূচিতে (এফটিপি) দুই প্রতিবেশী দেশের সিরিজও রাখা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এসব সিরিজ আর মাঠে গড়ায় না। সাদা বলে ভারত–পাকিস্তানের সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার এক দশক হতে চলল।
টেস্ট সিরিজ খেলেছে আরও আগে, ২০০৭ সালে। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি আসর হতে চললেও ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সিরিজ রাখা হয়নি।
তবে অস্ট্রেলিয়ায় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর দুই দলের আবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। ১৫ বছর পর আবারও টেস্টে মুখোমুখি হতে পারে তারা। এই ম্যাচ কিংবা সিরিজ হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই। তথ্যটি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার সাইমন ও’ডনেল।
মেলবোর্নভিত্তিক রেডিও স্টেশন এসইএন–এর ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে আজ ও’ডনেল বলেছেন, ‘এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আরও কিছুদিন চলবে। এখানে একটা টেস্ট ম্যাচ হতে পারে। আশা করি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।’
ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) গত ২৩ অক্টোবরের মহারণে শেষ বলে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। ওই ম্যাচের সাক্ষী হতে মাঠে আসেন প্রায় এক লাখ দর্শক। নিরপেক্ষ ভেন্যুতেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াই নিয়ে সমর্থকদের এত আগ্রহ দেখে নতুন ভাবনা এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মাথায়।
ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের শীতল সম্পর্কে উষ্ণতা ছড়াতে অনেকটাই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। এতে ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ যেমন আবার নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবে, অস্ট্রেলিয়াও তাদের ম্যাচ কিংবা সিরিজ আয়োজন করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ক্রিকেট অনুরাগীদেরও আর দীর্ঘদিন বিরাট কোহলি–বাবর আজমদের খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে না।
ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আয়োজনের সম্ভাবনায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা ও’ডনেল, ‘এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলে মানুষ ভারত–পাকিস্তানেরটাই বারবার বলবে। ওই ম্যাচ টুর্নামেন্টের উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে। সেদিনের নাটকীয় দৃশ্য, টানটান উত্তেজনা, চাপের মুহূর্ত অবিশ্বাস্য আবেগের জন্ম দিয়েছে।’
চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত–পাকিস্তান। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতে এশিয়া কাপে দুবার খেলেছে তারা। সব ম্যাচেরই নিষ্পত্তি হয়েছে শেষ ওভারে। আগামী বছর পাকিস্তানে হওয়ার কথা এশিয়া কাপ আর ভারতে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যেতে না চাওয়ার কথা বলে কদিন আগে পরিস্থিতি গরম করে তুলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ। পাল্টা জবাবে ভারতে বিশ্বকাপ বর্জনের হুমকি দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
এই রেষারেষি থেকে অস্ট্রেলিয়া বুঝতে পেরেছে, এক দেশ আরেক দেশে সফর করতে রাজি নয়। তাই নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলানোর প্রস্তাব দেওয়া যায়। আগামী বছর যেহেতু ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সে কারণে ও’ডনেল স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ৫০ ওভারের ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজনের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বৈরিতায় দীর্ঘ সময় টেস্টে ভারত–পাকিস্তানের মুখোমুখি না হওয়ার ইতিহাস আরও আছে। ১৯৬১ সালে দিল্লি টেস্টের পর ১৭ বছর এই সংস্করণে একে অন্যের সঙ্গে খেলেনি তারা। একই কারণে ১৯৮৯ সালের পর পড়েছিল এক দশকের ছেদ। ২০০৭ সালে সর্বশেষ টেস্টে সিরিজে ইউনিস খান–শোয়েব আখতারদের পাকিস্তানকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়েছিল অনিল কুম্বলে–সৌরভ গাঙ্গুলীদের ভারত।