কয়েক দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে আইপিএলের ১৬তম আসর। ২০০৮ থেকে মাঠে গড়ানো ভারতীয় ক্রিকেটের এই টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এরই মধ্যে ব্র্যান্ডমূল্যে নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ হলেও ১৬ বছরের মাথায় এটি ক্রিকেট দুনিয়ারই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।
দেশের হয়ে খেলা বাদ দিয়ে হলেও ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলতে চান। আর্থিকভাবে লাভবান হতে চান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচিও তাই বহুক্ষেত্রেই আইপিএলের সূচির সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে বাধ্য হয়। আইপিএলের জনপ্রিয়তা এতটাই যে গত বছর এর সম্প্রচারস্বত্বের মূল্য ৫০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
গত মৌসুম থেকে আইপিএল ১০ দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে আইপিএলে অংশ নেওয়া কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে ভালোভাবেই দাঁড় করাতে পেরেছে। নাম পরিবর্তন হয়েছে দু-একটির। কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি এসেছে আবার হারিয়েও গেছে। আইপিএলে পুরোনো দলগুলো গত ১৬ মৌসুমে খরচে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতেছে।
এই দলগুলোর বেশির ভাগেরই খরচ ১৬টি মৌসুমে হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি গত মৌসুমেই প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলা দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটানস ও লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের খরচও ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আইপিএলের দলগুলো এখন পর্যন্ত কত খরচ করেছে, সেটি বাংলাদেশি মুদ্রার অঙ্কে দেখে নেওয়া যাক—
গুজরাট টাইটানস
গত মৌসুমে প্রথম খেলতে নেমেই শিরোপা জেতার অনন্য কীর্তি গুজরাট টাইটানসের। সিদ্ধার্থ প্যাটেলের সিভিস ক্যাপিটালস পার্টনারসের মালিকানাধীন এই ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম মৌসুমেই খরচ করেছে ২২৬ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা।
লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস
ভারতে বড় ব্যবসায়িক গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। এটিও গত মৌসুমেই প্রথম খেলতে এসে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল। গত মৌসুমে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি খরচ করেছে ২৩৩ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা।
রাজস্থান রয়্যালস
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম মৌসুমে শিরোপা জিতেছিল রাজস্থান রয়্যালস। ব্যবসায়ী মনোজ বাদালের ইমার্জিং মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড রাজস্থান রয়্যালসের মালিক। গত ১৬ মৌসুমে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির আইপিএল খরচ ৯১৬ দশমিক ৩ কোটি টাকা।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ
শুরুর দিকে হায়দরাবাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম ছিল ডেকান চার্জাস। এটির মালিকানা ছিল হায়দরাবাদের ইংরেজি পত্রিকা ডেকান ক্রনিকলসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। চার মৌসুম আইপিএলে খেলার পর ২০১২ সালে এটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
২০১৩ সালে হায়দরাবাদের নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির নামকরণ করা হয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সান গ্রুপ এর স্বত্বাধিকারী। ১০ মৌসুমে এই দলের মোট খরচ ৯৫৫ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। ২০১৬ মৌসুমে দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
চেন্নাই সুপারকিংস
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি এন শ্রীনিবাসন এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক। মূল প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়া সিমেন্টস। আইপিএলের অন্যতম সফল দল এটি। আইপিএলে চারবার শিরোপা জিতেছে তারা। একই সঙ্গে দুবার জিতেছে এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টির শিরোপা। আইপিএলের অন্যতম পুরোনো এ দল ২০১৫ ও ২০১৬ মৌসুমে ম্যাচ ফিক্সিং–সংক্রান্ত অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়ে আইপিএলে নিষিদ্ধ ছিল। গত ১৪ মৌসুমে খরচে চেন্নাই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাদের মোট খরচ ১ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ৮ কোটি টাকা।
পাঞ্জাব কিংস
বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা, ডাবর গ্রুপ ও ওয়াদিয়া গ্রুপের নেহা ওয়াদিয়ার কনসোর্টিয়াম পাঞ্জাব কিংস খরচের দিক দিয়ে এগিয়ে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের তুলনায়। এখন পর্যন্ত তাদের খরচ ১ হাজার ১১৮ দশমিক ৯২ কোটি টাকা। যদিও এটি আইপিএলের অন্যতম পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেনি। শুরুতে এ দলের নাম ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব।
দিল্লি ক্যাপিটালস
এই ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম প্রথমে ছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। এটিও আইপিএলে শিরোপা না জেতা অন্যতম দল। ২০১৮ সালে এটি দিল্লি ক্যাপিটালস নাম নেয় মালিকানায় কিছু পরির্বতন এনে। দলটি পরিচালনা করছে জিএমআর গ্রুপ ও জেএসডব্লিউ গ্রুপ। দিল্লির খরচও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাদের মোট খরচ ১ হাজার ১৯৪ দশমিক শূন্য ৪ কোটি টাকা।
কলকাতা নাইটরাইডার্স
শাহরুখ খান ও জুহি চাওলার রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপের মালিকানাধীন কলকাতা নাইটরাইডার্স ২০১২ ও ২০১৪ সালে আইপিএলের শিরোপা জিতেছিল। তারা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২২১ দশমিক ২১ কোটি টাকা খরচ করেছে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস
ভারতের অন্যতম শীর্ষ ও বৃহৎ শিল্প গ্রুপ রিলায়েনসের মালিকানাধীন এই দল আইপিএলের সবচেয়ে সফল। শিরোপা জিতেছেন পাঁচবার। এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ২৭১ দশমিক ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে তারা।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
ইউনাইটেড স্পিরিটসের মালিকানাধীন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও আইপিএলে এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। অথচ এই দলে এবি ডি ভিলিয়ার্স কিংবা বিরাট কোহলিরা খেলে থাকেন। এখন পর্যন্ত দলটি ১ হাজার ৩০৩ দশমিক ৭ কোটি টাকা খরচ করেছেন।