অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচটা শাহিন শাহ আফ্রিদি হয়তো ভুলেই যেতে চাইবেন! বল হাতে এক ওভারে দিলেন ২৪ রান, যা সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সবচেয়ে খরুচে ওভার। দল হিসেবে পাকিস্তান দিয়েছে ২২৬ রান, যা টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ।
এমন লক্ষ্য তাড়া করতে যে ধরনের ব্যাটিং দরকার ছিল, শুরুতে তেমন সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত পারেনি পাকিস্তান। ১৮ বলের মধ্যে ২১ রান তুলতে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হেরেছে ৪৬ রানে। রান তাড়ায় নামা পাকিস্তানকে ১৮০ রানে গুটিয়ে দিয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।
পাকিস্তান অবশ্য শুরুটা দারুণই করেছিল। বাবর আজমকে তিনে সরিয়ে ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে পাঠানো হয় সাইম আইয়ুবকে। খারাপ করেননি তিনি। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে ১৪ বলে ওঠে ৩৩ রান, যার মধ্যে ৮ বলে ২৭ রানই সাইমের। রিজওয়ানও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৪ বলে ২৫ রান তুলে আউট হন টিম সাউদির বলে ক্যাচ দিয়ে।
পাওয়ারপ্লের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারালেও পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে ছিল ৬৪ রান। যা তাদের ম্যাচে টিকিয়ে রাখে। ওপেনিং থেকে তিনে নামা বাবরই ধরে রাখেন এক প্রান্ত। যদিও তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে করেছেন ৫৭ রান। এই ইনিংসের একপর্যায়ে ২৭ বলে ৩৪ রান ছিল তাঁর। স্ট্রাইক রেট ১৬২.৮৫ হয়েছে আউট হওয়ার আগের তিন বলে এক ছক্কা ও দুই চার মারাতে।
পাকিস্তানের অন্য কোনো ব্যাটসম্যান দলের চাহিদা মিটিয়ে কার্যকরী ইনিংস খেলতে পারেননি। যদিও ১৫ ওভার পর্যন্ত ঠিকই ম্যাচে ছিল আফ্রিদির দল। ১৫ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেট ১৫৯। অর্থাৎ ৩০ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান। হাতে ৬ উইকেট। তবে সেখান থেকে পাকিস্তান ১৮ বলের মধ্যে ২১ রানেই হারিয়েছে ৬ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি নিয়েছেন ৪ উইকেট। আব্বাস আফ্রিদিকে ম্যাট হেনরির ক্যাচ বানিয়ে আউট করে প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাউদি।
ব্যাটিংয়ের মতো বল হাতেও পাকিস্তানের শুরুটা ভালো ছিল। প্রথম ওভারেই ডেভন কনওয়েকে তুলে নেন আফ্রিদি। তবে প্রথম ওভারে ১ রানে ১ উইকেট নেওয়া আফ্রিদিকে মাটিতে নামিয়ে আনেন ফিন অ্যালেন। বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারের প্রথম ৫ বলেই মারেন বাউন্ডারি। ২ ছক্কা ও ৩ চারে তুলে নেন ২৪ রান।
ঝোড়ো ইনিংসটি অবশ্য বেশি দূর এগোয়নি। ১৫ বলে ৩৪ রান করে অভিষিক্ত আব্বাস আফ্রিদির বলে ফেরেন অ্যালেন। এক বছরের বেশি সময় পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরা কেইন উইলিয়ামসন পাকিস্তানি ফিল্ডারদের দুই ক্যাচ মিসে করেন অর্ধশতক। ৪২ বলে ৫৭ রানের ইনিংসটি থামে আব্বাসের বলে আউট হয়ে।
অ্যালেন ও উইলিয়ামসনের তৈরি করা মঞ্চে পরে ঝড় তোলেন ড্যারিল মিচেল। ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান ২২ বলেই ছুঁয়ে ফেলেন অর্ধশতকের মাইলফলক। আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ২৭ বলে ৬১ রান করে যান মিচেল। শেষ দিকে মার্ক চ্যাপম্যানের ১১ বলে ২৬ রানে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২২৬ রানে পৌঁছায়। এটি টি–টোয়েন্টিতে বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০২১ সালে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০ ওভারে ২২১ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের পক্ষে ডানহাতি পেসার আব্বাস ৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ৪৬ রান দিয়ে আফ্রিদির শিকারও ৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করা আমের জামাল এদিন মুদ্রার অন্য পিঠ দেখেছেন। ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৫৫ রান। লেগ স্পিনার উসামা মির ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫১ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ডঃ ২০ ওভার ২২৬/৮( মিচেল ৬১, উইলিয়মসন ৫৭, আব্বাস ৩/৩৪)
পাকিস্তান: ১৮ ওভার ১৮০ ( বাবর ৫৭, সায়েম ২৭, সাউদি ২৫/৪)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৪৬ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ড্যারিল মিচেল।