অক্টোবর-নভেম্বরে বিশ্বকাপেই ম্যাচ খেলতে হয়েছে ১০টি। তার আগে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশে আসার আগে সে মাসেরই শুরুতে খেলতে হয়েছে ইংল্যান্ডে। এটা শুধু ওয়ানডের হিসাব, টি-টোয়েন্টি ধরলে গত কয়েক মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সাদা বলে খেলার পরিমাণটা আরও বাড়বে বৈ কমবে না।
সামনে আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে হবে ২০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বযজ্ঞ। এই অদূর ভবিষ্যৎ আর সাম্প্রতিক অতীত মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের বিপক্ষে কাল থেকে শুরু ঘরের মাঠের তিন ওয়ানডের সিরিজটাই হতে পারে দলের মূল ক্রিকেটারদের একটু দম ফেলার সুযোগ। সিরিজটা তাদের জন্য হোক বিশ্রামের।
সেই বিশ্রামের তালিকায় কারা আছেন, তা তো এই সিরিজের দল ঘোষণার পরই জেনে গেছেন। তবু আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন নামগুলোতে। প্রথমত নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন নেই, তাঁর পরিবর্তে ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেবেন টম ল্যাথাম। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ থেকে টেস্ট সিরিজ খেলে যাওয়া টিম সাউদি, ড্যারিল মিচেল, মিচেল স্যান্টনার, গ্লেন ফিলিপস ও ডেভন কনওয়েকে। চোট-আঘাতের কারণেও অনেকে দলের বাইরে। মাইকেল ব্রেসওয়েল, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসন, জেমস নিশামরা আছেন সে তালিকায়। আর ট্রেন্ট বোল্ট তো নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন সিরিজ থেকে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধান কোচ গ্যারি স্টিডও আজ ডানেডিনে সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন একই কথা—এই সিরিজ অনেকের জন্য বিশ্রামের বলেই ওয়ানডের জন্য একটা নতুন মুখের দল গড়া, যেখানে আন্তর্জাতিক অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটারই আছেন তিনজন। অলরাউন্ডার জশ ক্লার্কসন, ফাস্ট বোলার উইল ও’রুর্ক ও লেগ স্পিনার আদিত্য অশোক। এ ছাড়া ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের হয়ে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি খেলা বেন সিয়ার্সের জন্যও খুলে যেতে পারে ওয়ানডে অভিষেকের দরজা।
স্টিড বলেছেন, ‘যাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, তারা বেশ লম্বা সময় দেশের বাইরে খেলেছে। পেছন ফিরে তাকাল দেখবেন, সময়টা তিন-চার মাসেরও বেশি। আমাদের কাছে সিরিজ খেলার পাশাপাশি তাদের শারীরিক দিকটা দেখাও গুরুত্বপূর্ণ।’
সামনের গ্রীষ্মেও অনেক খেলা নিউজিল্যান্ড দলের। তার আগে খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ হয়ে ওঠাটাকে জরুরি মনে হয়েছে নিউজিল্যান্ড কোচের কাছে। ২০২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাল বাংলাদেশের বিপক্ষেই প্রথম ম্যাচ খেলবে নিউজিল্যান্ড দল।
তার চেয়েও বড় কথা তিন ওয়ানডের এই সিরিজের পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটে একটা লম্বা বিরতি পড়বে নিউজিল্যান্ডের। সে প্রসঙ্গ টেনে স্টিড বলেছেন, ‘এই সিরিজের পর ৯-১০ মাস আমরা আর কোনো ওয়ানডে খেলব না। কাজেই ভবিষ্যতের জন্য কিছু সম্ভাবনাময় মুখ খুঁজে বের করার এটা ভালো একটা সুযোগ।’
দলে আসা নতুন ক্রিকেটারদের সম্পর্কে স্টিড জানিয়েছেন, তাঁদের খেলায় এমন কিছু ইতিবাচক দিক লক্ষ করা গেছে, যেটা তাঁরা পছন্দ করেছেন। ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা যে ভূমিকায় খেলে, এখানেও আমরা তাদের সেভাবেই খেলাতে চেষ্টা করব। কখনো কখনো ব্যাপারটা একটু অন্য রকম হবে। কাজেই যার যার ভূমিকা এবং তাদের কাছে থাকা প্রত্যাশার ব্যাপারে যেন তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পরিবেশটা উপভোগ করতে হবে’—বলেছেন কোচ।
প্রথম ওয়ানডের দলে থাকলেও ফাস্ট বোলার সিয়ার্সকে আপাতত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডের জন্য ধরা হচ্ছে না। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের কারণে কাইল জেমিসনের খেলা অনিশ্চিত বলে পুরো সিরিজেই সিয়ার্সকে রেখে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ড কোচ। তাঁর অন্তর্ভুক্তি দলের পেস বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আনবে বলে স্টিডের বিশ্বাস, ‘দলের অন্য তিন বোলারই নতুন বলের বোলার। এখন বেন মাঝের ওভারগুলোতেও সত্যিকারের পেস বোলিং পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
দলের আরেক নতুন মুখ ক্লার্কসনকে নিয়ে কোচের মন্তব্য, ‘নিউজিল্যান্ডের মারকুটে ব্যাটসম্যানদের মধ্যেই একজন সে।’ ও’রুর্ককে দলে পেয়েও বেশ রোমাঞ্চিত মনে হচ্ছে স্টিডকে, ‘কাল অনুশীলনে ও’রুর্ক আমাদের বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলেছে। উইকেট থেকে সে ভালো বাউন্স পেয়েছে, যেটা দেখতেও ছিল দারুণ।’
গ্যারি স্টিডের কাছে তাই বাংলাদেশ সিরিজটা সব মিলিয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে তারুণ্যের ঝলক দেখানোর একটা মঞ্চ। ‘দলের দক্ষতা ও সামর্থ্যে তারা যা যোগ করতে যাচ্ছে, সেটা সত্যিই রোমাঞ্চকর। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন এবং অনভিজ্ঞরা এলে সেটা দলের মধ্যেও বাড়তি উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। সেটা দেখা সব সময়ই চমৎকার’—বলেছেন নিউজিল্যান্ড কোচ।