চট্টগ্রাম টেস্টে বোলারদের আরও বড় প্রতিপক্ষ ‘নরম বল’

কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার জুটি তখন দেড় শ ছাড়িয়ে দুই শর দিকে এগোচ্ছে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটকে মনে হচ্ছে ব্যাটিং–স্বর্গ, ঘণ্টাখানেক আগেও বাংলাদেশের যে বোলাররা ম্যাথুস-চান্ডিমালদের ভুগিয়েছেন, তাঁদের একেবারেই নির্বিষ লাগছে।

বল পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে শ্রীলঙ্কার দুই ইনিংসেই। নতুন বলে দুই ইনিংসেই লঙ্কান টপ অর্ডার খুব তাড়াতাড়িই ভেঙে দেওয়া গেছে। কিন্তু পুরোনো বলে সেই বোলাররাই জুটি ভাঙতে পারেননি। নতুন বল ভুগিয়েছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদেরও। ভোগান্তিটা অবশ্য শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশেরই বেশি ছিল। দুই ইনিংসের শুরুর ব্যাটিং–ধসের পর বাংলাদেশ যা একটু লড়াই করেছে, তা বল পুরোনো হয়ে যাওয়ার পরই। দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল হকের অপরাজিত ৮৭ রানের সিংহভাগই এসেছে পুরোনো বলে।

আগামীকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া চট্টগ্রাম টেস্টও একই ছকে এগোলে অবাক হবেন না। নতুন বলে দেখা যাবে বোলারদের উল্লাসনৃত্য, পুরোনো বলে ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য। খেলাটা চট্টগ্রামে বলেই হয়তো আরও বেশি। যেখানে বাংলাদেশের দুঃস্মৃতিও আছে। এই মাঠেই ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেদিনও রানতাড়ায় নতুন বলে ৫৯ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তাইজুল-মিরাজরা। এরপর কাইল মfয়ার্স ও এনক্রুমা বোনার কী করেছেন, তা সবার জানা। মfয়ার্স-বোনারের সেই স্মরণীয় জুটির সঙ্গে চাইলে সিলেট টেস্টের ধনাঞ্জয়া-মেন্ডিসের জুটি মিলিয়ে নিতে পারেন। কারণ, দুটি জুটির পেছনে গল্প একই—পুরোনো হয়ে যাওয়া নরম কুকাবুরা বল।

অস্ট্রেলীয় এই বলের দ্রুত নরম হয়ে যাওয়া নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটারদের অভিযোগ নতুন নয়। বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো হাই প্রোফাইল টেস্ট খেলোয়াড়েরাও কুকাবুরার মান নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেছেন। বেশ কয়েকবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হওয়ার পর নীরবে কুকাবুরা তাদের ক্রিকেট বল বদলে ফেলেছে। সাদা ও লাল—দুই বলেরই সিম হয়েছে আরও খাড়া ও শক্ত। নতুন ধরনের এই কুকাবুরা বল দিয়ে গত দুই মৌসুমে টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ দল। ঘন ঘন টপ অর্ডার–ধসের একটা কারণ কুকাবুরা। কিন্তু নতুন কুকাবুরা বলেও সেই পুরোনো সমস্যাটা কাটেনি। ২০-২৫ ওভারের পর এই বল নরম হচ্ছেই।

সেই নরম বলেও ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে বোলারদের অস্ত্র হতে পারে দুটি—গতিময় বোলিং ও রিভার্স সুইং। বাংলাদেশ দলে ওই ভিন্নতা যোগ করতেই সিলেট টেস্টে নাহিদ রানাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ইনিংসে ধনাঞ্জয়া ও মেন্ডিসের সেই ম্যারাথন জুটি রানাই ভেঙেছেন। ৫৬ ওভারের পুরোনো বলে বাউন্সার দিয়ে ৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন চোখের পলকে। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। আউট হওয়ার আগে শতক করেছেন ধনাঞ্জয়া ও মেন্ডিস দুজনই। সিলেট টেস্টে পেসারদের খুব একটা রিভার্স সুইং পেতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রামে তা পাবেন কি না, কে জানে! তবে মাত্র দুই মৌসুম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা আনকোরা রানার গতি ও বাউন্স নরম বল সমস্যার সমাধান নয়।

নতুন কুকাবুরা বলেও সেই পুরোনো সমস্যাটা কাটেনি। ২০-২৫ ওভারের পর এই বল নরম হচ্ছেই।

এদিকে থেকে কাগুজে সম্ভাবনায় শ্রীলঙ্কার এগিয়ে থাকার কথা। তাদের ব্যাটিং অর্ডার লম্বা। টপ অর্ডারে ধস নামলেও পুরোনো বলের সুযোগটা কাজে লাগানোর মতো ব্যাটসম্যান তাদের ভান্ডারে আছে। সঙ্গে বোলিংয়ে নতুন সংযোজন আসিতা ফার্নান্ডো তো আছেনই। কাসুন রাজিতার চোটে দলে ফেরা ২৬ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার ২০২২ সালে বাংলাদেশ সফরে ২ টেস্ট খেলে ১৩ উইকেট নিয়েছেন, যার বেশির ভাগই এসেছে নরম বলে। ব্রেক থ্রুর জন্য তাঁর সেশনের পর সেশন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে যাওয়ার সুনাম আছে। চট্টগ্রাম টেস্টেও নিশ্চয়ই এই ভূমিকাই পালন করবেন তিনি।

সিলেটে বড় ব্যবধানে হারা বাংলাদেশের জন্য চট্টগ্রামে আশার আলো অবধারিতভাবেই সাকিব আল হাসান। প্রায় এক বছর পর টেস্টে ফিরছেন এই অলরাউন্ডার। ব্যাটিং তো বটেই, বোলিংয়ে বাংলাদেশ আরও বেশি ভরসা করবে সাকিবের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি, প্রজ্ঞার ওপর। অসহায়ক উইকেটেও মাথা খাটিয়ে কীভাবে প্রতিপক্ষের উইকেট নেওয়া যায়, তা সাকিবের চেয়ে ভালো আর কে জানেন! কাল চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বলে গেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনেক ভালো করা উচিত এবং টেস্ট ম্যাচ জেতা উচিত।’

তা জিততে হলে কুকাবুরার নরম হয়ে যাওয়া বলেও নিজের কারিকুরি দেখাতে হবে সাকিবকে।