সাকিব–তামিমের জুটিই কিছুটা আশা দেখাচ্ছিল। যদিও তাদের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন আছে।
সাকিব–তামিমের জুটিই কিছুটা আশা দেখাচ্ছিল। যদিও তাদের  ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন আছে।

সংবাদ সম্মেলনে তামিম

‘ইংল্যান্ডকে হারাতে আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে’

এই অভিজ্ঞতাটা তামিম ইকবালের জন্য নতুনই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে বসে সিরিজ হারের ব্যাখ্যা এর আগে দিতে হয়নি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে।

তাঁর নেতৃত্বে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দল সব কটি সিরিজ জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও তাদের মাটিতে হারিয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ইংল্যান্ড, তখন গল্পটা ভিন্ন। কন্ডিশন যেমনই হোক, তারাই এখন সাদা বলের ক্রিকেটের রাজা।

তামিমের কথায়ও আজ রাজার কাছে সেই আত্মসমর্পণের সুর পাওয়া গেল, ‘কেন ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এটা বোঝা গেল।’ নিজেদের আঙিনায় বাংলাদেশ সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে ২০১৬ সালে, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডই ছিল। এবার সুযোগ ছিল ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর। কিন্তু তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি হেরে সিরিজ খোয়ানোর পর তামিমের উপলব্ধি, ‘আগেরবার ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছি। এবারও হারলাম। হয়তো ইংল্যান্ডকে হারাতে আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে।’

তামিম উত্তরটা দিয়েছেন ইংরেজিতে। সে সময় সংবাদ সম্মেলনকক্ষে অপেক্ষা করছিলেন আজকের ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ জেসন রয়। এতক্ষণ মাথা নিচে দিয়ে নিজের মুঠোফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলেও তামিমের কথা শুনে কান খাড়া হলো রয়ের। তবে তামিমের মুখে ইংল্যান্ড দলের প্রশংসার চেয়ে নিজ দলের ঘাটতির কথাই বেশি শোনা গেছে।

দলের চাহিদামতো খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ

আজকের ম্যাচে সে ঘাটতির কথা বলতে গিয়ে বোলিং ইনিংসের শুরুর কয়েকটি মুহূর্ত মনে করিয়ে দিলেন তামিম, ‘প্রথম ৪-৫ ওভার আমরা খুব ভালো বোলিং করিনি। শুরুতে উইকেটে যথেষ্ট সহায়তা ছিল বোলারদের জন্য। আমরা আরও ভালো বল করতে পারতাম। তারপর একটা রানআউটের সুযোগ, তখন যদি আমরা ওইটা নিতে পারতাম তাহলে হয়তো ৫০-৬০ রানের নিচে হতে পারত। আজকে যে ধরনের উইকেট ছিল, আমার কাছে মনে হয়, স্কোরটা যদি ২৬০-২৭০ রান হতো, সেটা তাড়া করা সহজ হতো।’

তবে রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম ১৪ বলেই ৩ উইকেট হারানোও হারের বড় কারণ। তামিমও তাই মনে করেন, ‘আমরা যখন প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলি, এরপর দ্বিতীয় ওভারে আরও এক উইকেট। এই ধরনের ধাক্কা থেকে আপনাকে আবার নতুন করে ইনিংস শুরু করতে হয়। যেটা আমি আর সাকিব করার চেষ্টা করছিলাম। আপনি যখন ৩২৭ রান তাড়া করতে যাবেন, একজনকে ঝুঁকি নিতেই হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি যখন এটা করতে গিয়েছিলাম, কাজে লাগেনি।’

শুরুর ধাক্কার পর তামিম ও সাকিবের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দুই বাঁহাতির ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি ৩২৬ রান তাড়া করছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে তামিমের ব্যাখ্যা, ‘১০-১২ বা ১৫ বছর আগে যদি আমরা এই পরিস্থিতিতে থাকতাম, আমরা একটা সম্মানজনক সংগ্রহের কথা চিন্তা করতাম। আমি আর সাকিব সব সময় জেতার জন্যই চিন্তা করছিলাম। তিন উইকেট পড়ার পর আমাদের ইনিংস মেরামত করতে হতো। এরপর আমাদের দ্রুত রান নিতে হতো। এ কারণেই কিন্তু আমার বা সাকিবের এই শটটা খেলা। আমরা চাচ্ছিলাম যতটুকু এগিয়ে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা করা। ওরা যদি ৪০০ রানও করত, আমরা চেষ্টা করতাম, পারি বা না পারি, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু চেষ্টা করতাম।’

ব্যর্থ ছিলেন লিটন

স্পোর্টিং উইকেটে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ের সামর্থ্যের প্রসঙ্গটা ঘুরেফিরে সামনে আসছে। প্রথম ওয়ানডেতে মন্থর উইকেটে খেলে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আজ একটু ভালো উইকেটে ইংল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতাই করতে পারেননি তামিমরা। তামিমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলছিলেন, ‘ভালো উইকেটের ক্ষেত্রে সব সময়ই ফলাফল নিয়ে ভাবলে হবে না। আপনি যখন কিছু পরিবর্তন করতে যাবেন, তখন আপনি জিতবেন, আবার হারবেনও। পুরোটাকেই আপনাকে প্রক্রিয়া হিসেবে নিতে হবে।’  

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারলেও সে প্রক্রিয়া থেকে সরে যাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। সিরিজের শেষ ম্যাচের ভেন্যু চট্টগ্রাম। বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভালো উইকেটে ভালো খেলার ক্ষেত্রে উন্নতি আনার যে চেষ্টা, সেটা ধরে রাখতে চান ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘যখন চিন্তা করবেন বিশ্বকাপে একটা পর্যায়ে যেতে চান, সেমিফাইনাল খেলতে চান, ফাইনাল খেলতে চান। এসব নিয়ে অবশ্যই কাজ করতে হবে।’