নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ ৩৫টি ম্যাচে ছিলেন না ট্রেন্ট বোল্ট।
চোট বা জরুরি পারিবারিক কারণে নয়, স্রেফ খেলতে চাননি বলেই খেলেননি। খেলা, না-খেলার সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে নেবেন বলে গত বছর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান বোল্ট। গত সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা বোল্ট এবার আরেক সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের হয়ে এক দিনের ম্যাচ খেলতে নামবেন। ৩৪ বছর বয়সী এই পেসারকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে রাখা হয়েছে।
প্রায় এক বছর পর বোল্টের এই ফেরার কারণ বিশ্বকাপ। অক্টোবরে ভারতে শুরু হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। বিরতির পর ফেরা বোল্টের লক্ষ্য অধরা বিশ্বকাপ ট্রফিটা এবার উঁচিয়ে ধরবেন। আর এই লক্ষ্য পূরণে নিজেকে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ‘বেশি ক্ষুধার্ত’ বলেও অভিহিত করেছেন বাঁহাতি এ পেসার।
বোল্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন ২০১১ সালের শেষ দিকে। চোট বা পারিবারিক প্রয়োজন বাদ দিলে নিয়মিতই নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলে গেছেন। তবে বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় শরীর সুস্থ রেখে সবদিক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। নিজের চাওয়ামতো খেলতে ও পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে গত বছর এনজেডসির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে যান তিনি।
এই এক বছরে পরিবারকে সময় দিয়েছেন আর বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে বেড়িয়েছেন। এর মধ্যে ভারতের আইপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ আর আরব আমিরাতের আইএলটি-টোয়েন্টি ছিল। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে এমআই নিউইয়র্কের হয়ে খেলে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন।
তবে নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী সিরিজে ফেরার পর এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়েই বোল্টের সব ভাবনা। প্রায় এক বছর আগে এই অঙ্গন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বোল্ট বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট-পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল না। আমি কখনোই নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ছাড়তে চাইনি। আমি চেয়েছি ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত করতে, নিজেকে কার্যকর বোলার হিসেবে টিকিয়ে রাখতে। এখন আমি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত। আশা করি, সামনের কয়েক মাসে বাকিদের সঙ্গে মিশে বিশেষ কিছুই করতে পারব।’
সামনের কয়েক মাসে ‘বিশেষ কিছু’ বলতে আছে বিশ্বকাপ। ২০১৫ ও ২০১৯ দুটি বিশ্বকাপেরই ফাইনালে খেলেছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু দুবারই হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে বোল্টের দলকে। এর মধ্যে চার বছর আগে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল ছিল একই সঙ্গে আনন্দের ও যন্ত্রণার। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ম্যাচ বলে বিবেচিত ফাইনালে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড পঞ্চাশ ওভার এবং সুপার ওভারে টাই হয়েছিল। তবে বাউন্ডারি বেশি মারায় ইংল্যান্ড হয়ে যায় ট্রফির মালিক। সেদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেননি বোল্ট। ১০ ওভার বল করে ৬৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। তার আগে ২০১৫ বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হারের ম্যাচে ১ উইকেট নিতে পেরেছিলেন ৪০ রান দিয়ে।
শেষ দুই বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে যে হতাশায় ডুবতে হয়েছিল, এবার সেটা পুষিয়ে নিতে চান বোল্ট। ভারতের মাটিতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে রাখতে চান বড় ভূমিকা, ‘আমার মাথায় ফিরে আসার চিন্তা এবং বিশ্বকাপ নিয়ে কাজ করার কথা সব সময়ই ছিল। এখানে পেছনের ঘটনাও আছে। গতবারের বিশ্বকাপ অভিযান বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। যে কারণে এবারও আরেকটি বিশ্বকাপে থাকার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। আশা করি, বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারব। আমি শুধু ভাবছি অনিন্দ্য–উজ্জ্বল একটা কিছু উঁচিয়ে ধরছি, চার বছর আগে যেটার খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এটাই এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।’