দৃশ্যটা দেখে অনেকেই অবাক হলেন। পুরস্কার বিতরণীর সব আনুষ্ঠানিকতা ততক্ষণে শেষ। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা তাঁদের ড্রেসিংরুমে ফিরে যাচ্ছিলেন। শ্রীলঙ্কানরা সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ফটোগ্রাফাররা ফ্রেমটা কেমন হবে, তা দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। এরপরই সবাইকে অবাক করে দিয়ে লঙ্কান ক্রিকেটাররা পোজ দিলেন ‘টাইমড আউটের’ ভঙ্গি করে। সবার মুখে চওড়া হাসি।
কিছুক্ষণ পর দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ের উদ্যাপন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এলেন কুশল মেন্ডিস। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, মেন্ডিসের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এলেন দলটির সহকারী কোচ নাভিদ নেওয়াজ। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মিডিয়া ম্যানেজার বা টিম ম্যানেজারই খেলোয়াড়ের সঙ্গে আসেন, এ সফরে শ্রীলঙ্কা দলের আগের সংবাদ সম্মেলনগুলোতেও সেটিই হয়েছে। তবে নেওয়াজের এভাবে আসার কারণটি অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনেকেই আঁচ করতে পারছিলেন।
নেওয়াজের বাংলাদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী কোচ। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম তাঁর ভালোই চেনা। সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তরে কী বলতে হবে, তা বুঝিয়ে দিতেই মেন্ডিসের সঙ্গে নেওয়াজের সংবাদ সম্মেলনে আসা। স্বাভাবিকভাবেই মেন্ডিসের কাছে প্রথম প্রশ্নই হলো ট্রফি নিয়ে লঙ্কানদের ‘টাইমড আউট’ উদ্যাপনের প্রসঙ্গে।
মেন্ডিস অবশ্য প্রশ্নটা না বোঝার ভান করে উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘কিসের উদ্যাপনের কথা বলছেন?’ পরে আরও একবার বুঝিয়ে বলার পর মেন্ডিস একটু হেসে বললেন, ‘কেউ একজন টাইমড আউট উদ্যাপন করছিল। আমি জানি না কেন করছিল।’
গত অক্টোবর-নভেম্বরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেই ঘটনা কেন বারবার লঙ্কানরা আলোচনায় নিয়ে আসছেন? প্রশ্নটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন মেন্ডিস। একটু ভেবে উত্তরে বললেন, ‘আমরা আমাদের উদ্যাপন করছি। আমরা উদ্যাপন করছি, কারণ আমরা খুশি।’
মিনিট দশেক আগেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন অবশ্য বলে গেছেন ভিন্ন কথা। এ প্রসঙ্গে নাজমুলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, লঙ্কানরা বিশ্বকাপের সে ঘটনা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেননি। নাজমুলের কথার সূত্র ধরে মেন্ডিসকে পরের প্রশ্নটা করা হয়। তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নেওয়াজ নিজেই এলেন মাইকের সামনে, ‘আমার মনে হয়, আমরা সেই ঘটনা থেকে বেরিয়ে এসেছি। তখন হয়তো এই উদ্যাপনটাকে অনেকেই ভুল বুঝেছে। এটা ম্যাচের উত্তেজনায় হয়েছে। দুই দলেরই এটি ভুলে যাওয়া উচিত।’
কথাটা শেষ করার আগেই নেওয়াজকে এক সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা, শ্রীলঙ্কা দল কি এখন থেকে এভাবেই উদ্যাপন করে যাবে? নেওয়াজ অবশ্য বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেন কৌশলে, ‘অবশ্যই না। আর আমার মনে হয়, এটি সংবাদ সম্মেলনের জন্য আদর্শ প্রশ্ন নয়।’
এক বিতর্কিত প্রসঙ্গ শেষ হতে না হতেই যোগ হয় আরও একটি প্রসঙ্গ। আজ বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয়ের আউটের পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়েছেন। তখন হৃদয়কে বেশ উত্তপ্তই মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে মেন্ডিসকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর উত্তর ছিল এমন, ‘আমি কিছু শুনিনি। সবাই উদ্যাপন করছিল।’ এর আগের ম্যাচে সৌম্য সরকারের বিতর্কিত আউটের ব্যাপারেও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন মেন্ডিস। তবে প্রশ্নটা শুনতেই মেন্ডিসকে সিংহলিজ ভাষায় কিছু একটা বোঝালেন নেওয়াজ। তা শুনে মেন্ডিস উত্তরে বললেন, ‘আমার মনে হয়, আম্পায়ার ভুল করেছে। সবাই ভুল করতে পারে। দল হিসেবে আমরা এটা নিয়ে খুব ভাবছি না। এটা খেলারই অংশ।’
তা বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার খেলা হলে কি এমন বিতর্কিত ঘটনা ঘটতেই থাকবে? নাকি এ ব্যাপারে লঙ্কানরা আরও সতর্ক হবেন? দলের সহকারী কোচ হিসেবে নেওয়াজকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর উত্তর ছিল এমন, ‘দুই দলই লড়াকু ক্রিকেট খেলে। ম্যাচের মধ্যে আবহ দারুণ থাকে। ওরা শতভাগ দিয়ে খেলছে। মাঝেমধ্যে আবেগ বেরিয়ে আসছে। কিন্তু খেলোয়াড়েরা বাউন্ডারি সীমানার বাইরে কিন্তু বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। মাঠের ভেতর ওরা লড়াই করছে। এটাই খেলা। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মাঠের শৃঙ্খলা বজায় রাখছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সব ঠিক আছে।’