মাসকো–সাকিব ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বোলিংয়ে মোস্তাফিজ
মাসকো–সাকিব ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বোলিংয়ে মোস্তাফিজ

ভূমিকা–বদল

মোস্তাফিজের সব বোলিংয়েই আনন্দ

উইকেট নেওয়া নয়, জাতীয় দলে এখন যেন প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখাটাই মূল কাজ মোস্তাফিজের।

‘ডান হাতে বোলিং করতে বললে পারবেন তো?’—শুধু এই প্রশ্নটাই করা বাকি থাকল। নইলে বোলিং নিয়ে তাঁকে প্রায় সব রকম প্রশ্নই করা হয়ে গেল এবং সব প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমানের একই কথা, ‘আমাকে যা করতে বলবে, আমি তা–ই করতে পারব। সব রকম বোলিংই আমি উপভোগ করি।’ তারপর একটা অমায়িক হাসি।

যেকোনো প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া ক্রিকেটারদের কোনো তালিকা হলে মোস্তাফিজ ওপরের দিকেই থাকবেন। এটা অবশ্য তাঁর কোনো খুঁত নয়। মোস্তাফিজের কাজ ক্রিকেট খেলা, বল হাতে দলকে আনন্দে ভাসানো। সেটি যদি ঠিকঠাক করে যেতে পারেন, তাহলে আর অত কথায় কাজ কী!

গতকাল রূপগঞ্জের মাসকো–সাকিব ক্রিকেট একাডেমি মাঠে একাডেমির এলিট ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিপিএলের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ। এরপর দুপুরের খাবার সেরে মাঠের পাশের সবুজ ঘাসের ঢিবির ওপর এলায়িত ভঙ্গিতে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন। তার মধ্যেই ওই কথোপকথনে মোস্তাফিজ হাসলেন বেশি, কথা বললেন কম।

এটাও হতে পারে, মোস্তাফিজের এর চেয়ে বেশি কিছু বলার ছিল না। তা ছাড়া মোস্তাফিজের হাসি আর কথা মিলিয়ে পুরো আলোচনাটার একটা পরিষ্কার সারমর্ম তো দাঁড়িয়েই যাচ্ছে। সেটি হলো, বল হাতে এখন আর কোনো কিছুতেই তাঁর অস্বস্তি নেই। অধিনায়ক হাতে নতুন বল তুলে দিলেও না, বল একটু পুরোনো হওয়ার পর মাঝের ওভারগুলোতে বোলিংয়ে আনলেও না, অথবা যদি ১৫–১৬ ওভারের পর বোলিং করতে বলা হয়, তাতেও মোস্তাফিজ রাজি।

কথা হচ্ছিল তাঁর টি–টোয়েন্টির বোলিং নিয়ে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে মোস্তাফিজের নামের পাশে ইদানীং উইকেটসংখ্যা একটু কমই। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে তিন উইকেট, উইকেটশূন্য থেকেছেন তিন ম্যাচে। তাই বলে মোস্তাফিজ বোলিং ভালো করছেন না, সেটি বলার উপায় নেই।

বোলিংয়ে এখন আর কোনো কিছুতেই অস্বস্তি নেই মোস্তাফিজের। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন

যে সময়ে বোলিংয়ে আসছেন, তাতে তাঁর কাজ মূলত দাঁড়াচ্ছে প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখা। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে সে কাজে তিনি সফলও হচ্ছেন। সহজ হিসাব—ব্যাটসম্যানরা তাঁকে মারতে যাননি, মোস্তাফিজও তাই উইকেট পাননি। অবশ্য কিছু ক্যাচ হাতছাড়া না হলে এর মধ্যেই বাড়তে পারত তাঁর উইকেট।

এসব নিয়ে কথা হতে হতে কথোপকথনের পরের অংশটা দাঁড়াল এ রকম:

—বোলিং কেমন হচ্ছে?

মোস্তাফিজ: বোলিং সব সময় ভালো হয়। আমার কি কখনো খারাপ সময় গেছে? বোলিং নিয়ে সমস্যা নেই।

—বিপিএলের পর তো সামনে আইপিএলও আছে। আইপিএল মাথায় রেখেই নিশ্চয়ই বিপিএল খেলবেন…

বোলিং নিয়ে কোনো সমস্যা দেখেন না মোস্তাফিজ

মোস্তাফিজ: কেন? মাঝখানে তো জাতীয় দলের খেলাও আছে। পার্ট বাই পার্ট খেলতে হবে। আমি সব সময় বর্তমান পার্ট নিয়ে ভাবি।

—বোলিংয়ে আপনার ভূমিকা বোধ হয় এখন কিছুটা বদলেছে। উইকেট পাওয়ার চেয়ে প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখার কাজটাই বেশি করছেন…

মোস্তাফিজ: একেক দলে খেলার সময় একেক রকম ভূমিকা। জাতীয় দলে এক রকম, বিপিএলে এক রকম, আইপিএলে এক রকম। যখন যেখানে যে রকম বোলিং চায়, সে রকমই তো করতে হবে। এবার কুমিল্লার হয়ে কীভাবে বোলিং করতে হবে, সেটা এখনো জানি না। তবে আমি সব রকম বোলিংই করতে পারব। ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতিতে বোলিং করতে পারব।

মোস্তাফিজের বোলিং নিয়ে কথা হচ্ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে। জাতীয় দলে মোস্তাফিজের ভূমিকা–বদল ধরা পড়েছে তাঁর চোখেও, ‘জাতীয় দলে এখন তাকে রান কম দেওয়ার কাজটাই করতে হচ্ছে। পাওয়ারপ্লের পরে এনে তাকে ১৬তম ওভারের আগপর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে।

মোস্তাফিজ ইন অ্যাকশন

ওই সময় ব্যাটসম্যানরা বেশি মারতে যায় না, তাই উইকেটও কম আসে।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে মোস্তাফিজের ভূমিকা ভিন্ন হবে বলে আভাস সালাউদ্দিনের, ‘সে আমাদের সেরা বোলার। আমরা চাইব, সে যেন উইকেট পায়। সেভাবেই তাকে ব্যবহার করা হবে।’

সব রকম বোলিংয়েই যাঁর আনন্দ, বিপিএলে উইকেট নেওয়ার বোলিংটা নিশ্চয়ই তিনি একটু বেশিই উপভোগ করবেন।