সিডনির রোজ বে শহরের একটি বাসায় এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার দানুস্কা গুনাতিলকাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে জামিন পেলেও শর্ত দেওয়া হয়েছিল, কোনো ডেটিং অ্যাপ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন না। রাতে বাসা থেকেও বের হতে পারবেন না।
আজ মামলার শুনানিতে শর্ত দুটি শিথিল করেছেন আদালত। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ ডটকম’ জানিয়েছে, সিডনির ডাউনিং সেন্টার আদালত গুনাতিলকাকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। তবে ডেটিং বা ডেটিংয়ে সহায়ক কাজের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হবে না জানানো হয়েছে তাঁর পক্ষ থেকে।
৩১ বছর বয়সী গুনাতিলকার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাটি গত ২ নভেম্বরের। ওই সময় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি। এক নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কায় রওনা হওয়ার দিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৪টি অভিযোগ গঠন করা হয়।
জামিনে থাকা গুনাতিলকা বৃহস্পতিবার সিডনির ডাউনিং সেন্টার আদালতে হাজির হন। তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার এমা সুলিভান আদালতের কাছে জামিনের দুটি শর্ত পাল্টানোর আবেদন করেন। প্রথমটি ছিল গুনাতিলকাকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে। সুলিভান আশ্বস্ত করেন, হোয়াটসঅ্যাপ অনুমতি পেলে ডেটিং বা ডেটিংয়ে সহায়ক কিছুতে এটিকে ব্যবহার করবেন না গুনাতিলকা।
বিচারক জেনিফার অ্যাটকিনসন গুনাতিলকাকে অ্যাপটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। এর আগে ডেটিং অ্যাপ ‘টিন্ডার’-এ অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল গুনাতিলকার, যার একপর্যায়ে দুজনের দেখা হয়। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিলেও ডেটিং অ্যাপ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে গুনাতিলকার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে আদালতের।
রাতে গুনাতিলকার বের হওয়ার অনুমতি চেয়েও আবেদন করেন ব্যারিস্টার এমা সুলিভান। লঙ্কান ক্রিকেটার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর রাতে বের হওয়ার অনুমতি ছিল না। তবে প্রতিপক্ষ আইনজীবী জর্জ রিক্সন এই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, আরও কোনো অপরাধের ‘ঝুঁকি কমিয়ে আনতে’ এটি বহাল থাকা উচিত।
রাতে এমন অপরাধ সংঘটনের ‘সুযোগ আরও বেশি’ বলেও মন্তব্য করেন জর্জ রিক্সন। তবে বিচারক জেনিফার অ্যাটকিনসন রিক্সনের এই মন্তব্য আমলে নেননি। তাঁর মতে, এমন অপরাধ যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে। ৩১ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারকে নিয়ে অ্যাটকিনসন বলেন, রাতে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এমন অপরাধের ঝুঁকি কমানো যায় না এবং জামিন পাওয়ার পর থেকে আদালতের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ করছেন গুনাতিলকা।
বিচারক জেনিফার অ্যাটকিনসন যুক্তি দেন, ‘বাস্তবতা হলো তাকে বাসায় থাকতে হবে। অন্য কোথাও থাকলে সেটি সাধারণ মানুষের কাছে ভালো লাগবে না।’ গুনাতিলকা একটি দেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটার এবং তাঁর এই প্রোফাইলের কথা ভেবেই যুক্তিটি দেন অ্যাটকিনসন। বাদী পক্ষের আইনজীবী রিক্সন বিচারকের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি বলেছেন, ‘গুনাতিলকা এ সমাজে তাৎক্ষণিকভাবে চিনে নেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব নন।’
কিন্তু বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এমা সুলিভান পাল্টা যুক্তি দেন, ‘এই মামলায় চোখ রাখছে সংবাদমাধ্যম...সে (গুনাতিলকা) আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।’ বিচারক বলেছেন, পরিচিতি যা–ই হোক, সবাইকে এক চোখেই দেখবেন আদালত। গুনাতিলকার রাতে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন বিচারক। তবে যেসব শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছে, গুনাতিলকাকে সেসব শর্ত মেনে চলার পরামর্শ দেন আদালত।