প্রশ্নটার জন্য প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন সিকান্দার রাজা। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু বাছাইপর্বে উগান্ডার কাছে হেরে আগামী জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই তাঁকে গত নভেম্বরের সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজাও একগাল হেসে বললেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি জানতাম এই প্রশ্নটা আসবে।’
পরে মনের দুঃখের কথা এভাবে বললেন, ‘ওই ঘটনাটা সব সময়ই বেদনাদায়ক হয়ে থাকবে। শুধু এখন নয়, যখন আমরা অবসর নেব, তখনো। শুধু আমরা যারা খেলছি তাদের জন্য নয়, যারা ম্যানেজমেন্টে আছে, তাদের জন্যও বিশ্বকাপে না যাওয়াটা সমান বেদনাদায়ক। শুধু এখন নয়, এই অনুভূতি আমাদের আরও অনেক দিন বয়ে বেড়াতে হবে।’
বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে পড়ার পর ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১–এ টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে জিম্বাবুয়ে। এ বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কা সফরে ১টি ম্যাচ জিতলেও সিরিজ হেরেছে ২-১–এ। এবার জিম্বাবুয়ের সামনে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ। দলের যখন এই অবস্থা, তখন কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজের আগে দলকে কীভাবে অনুপ্রেরণা জোগাবেন?
রাজা প্রশ্নের উত্তরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রসঙ্গ টেনেছেন, ‘ক্রিকেট খেলার জন্য আলাদা অনুপ্রেরণা দরকার হয় না, ভেতর থেকেই আসে। আর আমি পুরো দলের হয়েই কথাটা বলছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপে যাওয়া। সেটা হয়নি। তবে জিম্বাবুয়েতে যে ছেলেমেয়েরা ক্রিকেট খেলে, যারা ক্রিকেট খেলে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের প্রতি আমাদের বিরাট দায়িত্ব আছে। আমাদের বড় ক্যানভাসে দেখতে হচ্ছে বিষয়টা। অনুপ্রেরণার কথা বললেন, ওই ছেলেমেয়েরা, ওই পরিবার, আমার দেশ এবং আমাদের দেশে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই আমাদের অনুপ্রেরণার জন্য যথেষ্ট। আমরা চাইব আরও অনেক ক্রিকেট তৈরি করতে এবং নিজেদের একটা ছাপ রেখে যেতে।’
বুঝতেই পারছেন, ৩৮–এর রাজা আছেন তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে। শুধু তিনি নন, ক্রেগ আরভিনের বয়সও ৩৮। ৩৭ বছর বয়সী শন উইলিয়ামসনও আছেন বাংলাদেশ সফরের দলে। এই তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যে ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে আছেন, তা আর আলাদা করে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কে জানে, তিনজনই হয়তো শেষবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন!
রাজার পরের কথা শুনে মনে হবে তিনি বাংলাদেশকে বিদায় বলতেই এসেছেন, ‘আমি বাংলাদেশে নিয়মিত আসতাম। ভাগ্য না দুর্ভাগ্য কে জানে, ইদানীং আমাদের সূচির কারণে বাংলাদেশে খুব বেশি আসা হচ্ছে না। যদি এটাই আমার সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর হয়, তাহলে আমি আমার স্ত্রী, কন্যা ও ছেলে, যারা এখানে এবার এসেছে, তারা যেন ওই ভালোবাসা, আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।’
বাংলাদেশে খেলেই রাজা তাঁর ক্যারিয়ার গড়েছেন, এ কথা জানিয়ে রাজা যোগ করেন, ‘আমার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বাংলাদেশে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। বিপিএলেও খেলেছি। তিনবার ডিপিএল, তিনবার বিপিএল খেলেছি। আমার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অনেক বড় বন্ধু ছিল বাংলাদেশ। দুই দেশ নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছে। আমি জানি না আবার বাংলাদেশে আসতে পারব কি না। তাই ভাবলাম পরিবারেরও ওই ভালোবাসা, আতিথেয়তার অভিজ্ঞতা হোক।’
মাঠের ক্রিকেটটাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক, সে বার্তাও দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। বাংলাদেশের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের সূত্র ধরে তিনি বললেন, ‘আমি জানি ওরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছে। কিন্তু সিরিজটা ছিল ২-১ ব্যবধানের। দুই শর মতো রান তাড়া করছিল সম্ভবত একটা ম্যাচে… সে ম্যাচে আপনি গভীরতা দেখতে পাবেন। রিয়াদ ভাই ভালো করেছে, জাকির একটা ভালো ইনিংস খেলেছে। লেগ স্পিনার (রিশাদ) দারুণ খেলেছে। আমরাও শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সিরিজটা জিততে জিততে হেরেছি। আমি শুধু আশা করছি সিরিজটি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। সমর্থকেরা বিরক্তিকর সিরিজ উপভোগ করবে না। যদি ইতিহাস দেখেন, এ দুই দলের সিরিজ সব সময় উপভোগ্য হয়। এবারও তেমনই হবে ইনশা আল্লাহ।’