কানপুরে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরুর আগে গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে যাওয়ার রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদের বিশেষ রীতি পালন করেছে অখিল হিন্দু মহাসভা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে। সেটারই প্রতিবাদে গতকাল হিন্দু মহাসভা ওই ঘটনা ঘটানোর পর কানপুর টেস্টের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে শুরু করেছে ভারতের পুলিশ। গ্রিন পার্কে শুক্রবার থেকে শুরু হবে টেস্ট। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট ২৮০ রানে জিতে সিরিজে এরই মধ্যে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।
এই টেস্ট সামনে রেখে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছে হিন্দু মহাসভা। ধর্মীয় সংগঠনটির দাবি ছিল, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রতিবাদে তারা কানপুরে দ্বিতীয় টেস্ট ও গোয়ালিয়রে টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি হতে দিতে চায় না। সেটারই ধারাবাহিকতায় গতকাল গ্রিন পার্কের রাস্তায় আগুন জ্বালানো। এরপর অবশ্য হিন্দু মহাসভার ২০ সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে কানপুর পুলিশ। গোয়ালিয়রের বন্ধ্ নিয়ে হিন্দু মহাসভার ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়বীর ভরদ্বাজ বলেছেন, ‘হিন্দু মহাসভা ম্যাচের দিন গোয়ালিয়র বন্ধের ডাক দিয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এই বন্ধের আওতামুক্ত।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে কানপুর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আজ জানিয়েছেন, দ্বিতীয় টেস্ট সামনে রেখে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কানপুর পুলিশের এসিপি হরিশ চন্দ্র জানিয়েছেন, হিন্দু মহাসভার ২০ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘হাভান’ আয়োজন ও স্টেডিয়ামের সামনে রাস্তা বন্ধ রাখার পরিকল্পনার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
কানপুর পুলিশ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে, দ্বিতীয় টেস্টে ভারত ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য ‘ফুল প্রুফ’ নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চেন্নাই থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আজ কানপুরে পৌঁছানোর কথা। ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে কানপুরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এসিপি) হরিশ চন্দ্র জানিয়েছেন, ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে এই টেস্টের জন্য যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পিটিআইকে এ নিয়ে হরিশ চন্দ্র বলেছেন, ‘কোনো ফাঁক না রাখতে আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করছি। আশা করি, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স পাওয়া যাবে।’
হরিশ চন্দ্র জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে তাঁরা কাজ করছেন। ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও কাউন্টার–ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ইন্টেলিজেন্ট ব্যুরো (আইবি) ও রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য বিনিময় চলছে। সম্ভাব্য বিপদ এবং সেসব কীভাবে চিহ্নিত করা যায়, এসব নিয়েও তথ্য বিনিময় করছেন তাঁরা।
কানপুরের (পূর্বাঞ্চল) ডিসিপি শারওয়ান কুমার সিং দ্বিতীয় টেস্টের নোডাল (সংযোগস্থল–সংক্রান্ত) কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তাব্যবস্থার অংশ হিসেবে গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম ও হোটেল ল্যান্ডমার্ককে সেক্টর, জোন ও সাবজোন হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। এসব জায়গায় ডিসিপি, অতিরিক্ত ডিসিপি এবং এসিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। ট্রাফিক ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ম্যাচের আগে স্টেডিয়াম এলাকায় যাতায়াত সংরক্ষিত থাকবে।
গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বাতিল না করলে কুপিয়ে পিচ নষ্ট করার হুমকি দিয়েছিলেন হিন্দু মহাসভার ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়বীর ভরদ্বাজ। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নৃশংসতা চালানো হয়েছে...মন্দির ভাঙা হয়েছে। এ কারণে হিন্দু মহাসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গোয়ালিয়রে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে প্রতিবাদ জানানো হবে।’
ভারত সফরে দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টের পর গোয়ালিয়র, দিল্লি ও হায়দরাবাদে হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ৬ অক্টোবর হবে প্রথম টি–টোয়েন্টি ম্যাচ।