গাজী আশরাফ হোসেন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেই পারেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন বিসিবির নতুন নির্বাচক কমিটি প্রথম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটি বেশ চমকপ্রদ হলেও দারুণ ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। আঙুলের চোটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ছিটকে পড়া স্পিনার আলিস আল ইসলামের জায়গায় তারা দলে নিয়েছে ব্যাটসম্যান জাকের আলীকে, ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁর ভূমিকা ফিনিশারের। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা গেছে পরশু টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। দলের বিপদে সেই জাকেরের ব্যাট থেকেই আসে ৩৪ বলে ৬৮ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস।
টি–টোয়েন্টিতে শেষের দিকে মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ের এমন দৃশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে সচরাচর দেখা যায় না। কারণও আছে। ফিনিশারের ভূমিকায় সত্যিকারের ফিনিশারদের যে খুব কমই খেলানো হয়! ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁরা খেলেন টপ অর্ডারে, জাতীয় দলে তাঁদেরই জায়গা হয় ৬ কিংবা ৭ নম্বরে।
দুই জায়গায় খেলার ধরন দুই রকম। চাহিদায়ও আছে ভিন্নতা। সে জন্য দরকার বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড়। জাকের সে রকমই একজন। গত দুই বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস তাঁকে ফিনিশার হিসেবেই গড়ে তুলেছে। নতুন নির্বাচক কমিটি প্রথম সুযোগেই তাঁকে সুযোগ দিয়েছে। জাকেরও সুযোগটা দুহাতে লুফে নিয়েছেন।
তবে ফিনিশার হিসেবে জাকেরের সাফল্যে ছায়া হয়ে থাকবে ব্যর্থতার অন্ধকার। যে বলটি দুই দিন আগে ছক্কা হয়েছে, অন্য দিন হয়তো সেটিই টপ এজ হয়ে উঠে যাবে আকাশে। আগের দিনের হাততালি তখন বদলে যাবে দুয়োধ্বনিতে। তবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে এই উথালপাতাল ঢেউয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে জাকেরদের। আর তাঁদের পিঠে আস্থার হাত থাকতে হবে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের। নতুন নির্বাচক কমিটির কাছে আশাটা করাই যায়। অন্তত তাদের নেওয়া প্রথম সিদ্ধান্তে সে আভাসই মিলেছে।
আলিস একজন মূলত রহস্য স্পিনার হিসেবে পরিচিত। স্পিনারের বদলে একজন ব্যাটসম্যানকে কেন নেওয়া হলো, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচক। বিসিবির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গাজী আশরাফ হোসেন বলেছিলেন, ‘আলিস ছাড়াও টি–টোয়েন্টি স্কোয়াডে আরও তিনজন স্পিনার আছেন—রিশাদ, তাইজুল ও শেখ মেহেদী। আমাদের মনে হয়েছে, আলিসের জায়গায় আরেকজন স্পিনার নেওয়ার বদলে জাকের আলীর মতো কাউকে নিলে দলের ভারসাম্য আরও ভালো হবে। মিডল অর্ডার বা লোয়ার মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করার সঙ্গে যে ফিনিশার হিসেবেও কার্যকর হবে।’
নতুন নির্বাচক কমিটির চিন্তাটা এখানেই পরিষ্কার হয়ে যায়। অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেও গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন তাঁরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের দলেও সে ছাপ থাকবে। শুধু জাতীয় দল নয়, নির্বাচকদের তাকাতে হবে ক্রিকেটারের সরবরাহের প্রক্রিয়ায়ও। এই যেমন এ মাসে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ হলে বিসিবির টাইগার্স প্রোগ্রাম শুরু হবে। একই সময় চলবে হাই পারফরম্যান্স বিভাগের ক্যাম্প। এই দুই জায়গায় কোন খেলোয়াড়দের রাখা হবে, কারা থাকবেন ভবিষ্যতের পরিকল্পনায়, কে ‘এ’ দলে জায়গা করে নেবেন, কে জাতীয় দলে—এসব নিয়েও কাজ করবেন তাঁরা।
টেস্ট দলের সম্ভাব্যদের অনেকে এর মধ্যেই লাল বলে অনুশীলন শুরু করেছেন। সিলেটেই দু-একজন নিজেদের লাল বলের খেলাটাও ঝালিয়ে নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীনও টেস্ট দলের সম্ভাব্যদের দলের সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা আছে।
তবে আপাতত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল নিয়েই নির্বাচকদের ব্যস্ততা। দু-এক দিনের মধ্যেই ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়ে আলোচনায় বসার কথা তাঁদের। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের সময়ই ঘোষণা হতে পারে টেস্ট দল। টেস্ট দলের সম্ভাব্যদের অনেকে এর মধ্যেই লাল বলে অনুশীলন শুরু করেছেন। সিলেটেই দু-একজন নিজেদের লাল বলের খেলাটাও ঝালিয়ে নিচ্ছেন। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজ চলাকালীনও টেস্ট দলের সম্ভাব্যদের দলের সঙ্গে রাখার পরিকল্পনা আছে। অনেকে আবার তখন ব্যস্ত থাকবেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। সেদিকেও চোখ থাকবে নির্বাচকদের। জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচির মতোই তাই এখন ব্যস্ত নতুন নির্বাচক কমিটিও।