ফাইনালের আগে ঠিক আদর্শ প্রস্তুতিই হয়েছে ভারতের। শক্তিশালী একটা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নকআউট ম্যাচের চাপ নিয়ে দাপটের সঙ্গে পুরো ইনিংস খেলেছে। যে উইকেটে ১৪০-১৫০ রান হওয়ার কথা, সেখানে ১৭০ রানের ওপর করেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি অল্প রান তাড়ায়। তবে সেমিফাইনালের মতো বড় বাধা এত সহজে পেরোনো নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
ভারত টুর্নামেন্টজুড়েই বেশ ধারাবাহিক ছিল। সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে চাপের মুখেও খেলার ধরনে পরিবর্তন আনেনি। আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে, উইকেট হারালেও দ্রুত রান তুলেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা যাদের ওপর অনেকটা নির্ভর করে, সেই মূল ব্যাটসম্যানরা সে অর্থে জ্বলে ওঠেনি এখনো। শঙ্কার একটি জায়গা হতে পারে এটি। তবে কুইন্টন ডি কক সম্প্রতি ভালো করেছে, এটি আশার কথা। ফাইনালেও সে ভালো একটা শুরু এনে দিতে পারলে দল আত্মবিশ্বাস পাবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটগুলো সাধারণত উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য উপযোগী। তবে ফাইনালের ভেন্যু বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালের উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত দুই দলকে সমান সুবিধা দেবে ব্যাটিংয়ের দিক দিয়ে। ভারত অন্যান্য উইকেটে যে বাড়তি সুবিধা পেয়েছে, মনে হয় না এখানে পাবে। সে কারণে ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেমিফাইনালে দুটি ম্যাচ যেমন একপেশে হয়েছে, তেমন হওয়ার কথা নয়।
ভারত একাদশের কম্বিনেশন বদলাবে বলে মনে হয় না। ওদের দলটি একেবারে কমপ্লিট একটা প্যাকেজ। জাদেজা বোলিংয়ে সেভাবে জ্বলে উঠতে হয়তো পারেনি, কিন্তু ব্যাটিংয়ের শক্তির কারণে তার জায়গা একেবারে নিশ্চিত বলা যায়। বিরাট কোহলি ছাড়া বাকি সবাই কোনো না কোনো পর্যায়ে রান করেছে। কোহলি এখনো রান না পেলেও সেটি ভারতের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকা বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাব্রেইজ শামসির ওপর শুরুতে হয়তো ততটা ভরসা করেনি; কিন্তু সে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। এ ম্যাচেও দলের পেস আক্রমণের পাশাপাশি তার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এমন উইকেটে পেসাররা কতটা সফল হবে বলা মুশকিল। ব্যাটসম্যানরাই এখানে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ম্যাচের মতো একপেশে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দক্ষিণ আফ্রিকার নকআউট পর্বে গিয়ে হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলার যে ইতিহাস ছিল, এবার সেটির ব্যতিক্রমই দেখা গেছে। অনেকগুলো ক্লোজ ম্যাচ জিতে এসেছে তারা। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বড় দলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খেলা তাদের কাজে দিয়েছে। ফাইনালেও দক্ষিণ আফ্রিকা আর চোক করবে না বলেই মনে হয়।
ভারত অবশ্য চাপ ব্যাপারটিকে আসতেই দেয়নি। ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের ওপর পুরোটা সময়ে চাপ বজায় রেখেছে। সে ধারাবাহিকতা তারা ধরে রাখতে চাইবে। রোহিত শর্মার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওপরে তার গড়ে দেওয়া ভিতে বাকিরা খেলবে—এ ট্রেন্ডটা তৈরি হয়ে গেছে। কোনো কারণে সে ব্যর্থ হলে ভারত কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা নিশ্চিতভাবেই এ সুযোগটা নিতে চাইবে।
তবে ভারতকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দল মনে হচ্ছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি। দল হিসেবে তারা এতটাই সংকল্পবদ্ধ। ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে দুর্দান্ত দল। তবে ক্রিকেটে দুর্দান্ত দলটিই যে সব সময় জেতে, তা কিন্তু নয়। এ কারণেই ক্রিকেট এতটা রোমাঞ্চকর।
✍️ লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক