২০২১ সালে সেমিফাইনালের পর গত আসরে ফাইনাল—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুই আসরে শিরোপার বেশ কাছে থেকেই ঘুরে এসেছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজমের আশা, তৃতীয় দফায় ভাগ্য পক্ষে আসবে তাঁদের।
অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আগেই একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানকে ঘিরে। বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে সরিয়ে আবার অধিনায়ক বানানো হয় বাবরকে। নিউজিল্যান্ডের খর্বশক্তির দলের সঙ্গে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করার পর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে দলটি। যদিও ঘুরে দাঁড়িয়ে সেটি ২-১ ব্যবধানে জেতে তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হেরেছে পাকিস্তান, আজ কার্ডিফে তৃতীয় ম্যাচ।
একদিন একেবারে সেরা, পরদিন একেবারে বাজে—পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য এ রীতি এখন স্বাভাবিকই। এবারের বিশ্বকাপেও তাই সবচেয়ে অননুমেয় দল ধরা হচ্ছে তাদেরই। গ্রুপ ‘এ’-তে ভারত, সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড ও কানাডার সঙ্গে আছে পাকিস্তান। প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল যাবে পরের পর্ব সুপার এইটে।
আগামী ৯ জুন নিউইয়র্কে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। যাদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে মাত্র একটি জয় পাকিস্তানের। নিউইয়র্কের ম্যাচটি হারলে ফ্লোরিডায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি তাই পাকিস্তানের জন্য হয়ে উঠতে পারে নকআউট।
তবে বাবর বেশ আত্মবিশ্বাসী, ‘সেমিফাইনাল এবং এরপর ফাইনাল। এবার আমাদের শিরোপা জয়ের পালা।’
তবে বরাবরের মতোই মাঠের বাইরে বেশ নড়বড়ে একটা অবস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট। নভেম্বরে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর বেশ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে দলটি। কোচিং স্টাফে পরিবর্তন এসেছে দুবার, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে বাবরকে সরিয়ে আফ্রিদিকে দেওয়ার পর আবার প্রথমজনের কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশটির বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক মহসিন নাকভি নিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) দায়িত্ব।
পিসিবিপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর নাকভি নির্বাচক কমিটিতে পরিবর্তন এনেছেন, খেলোয়াড়দের ফিটনেস বাড়াতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্যাম্প করতে পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ও ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা কোচ গ্যারি কারস্টেনকে আনা হয়েছে সীমিত ওভারের দায়িত্ব দিয়ে। পাকিস্তানের আশা, এই সবকিছুর মাধ্যমে বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ বাড়বে তাদের। বিশ্বকাপ জিতলে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ১ লাখ ডলার (প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা) করে বোনাস দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন নাকভি।
২০০৯ সালে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মোহাম্মদ আমিরের পাশাপাশি দলে এসেছেন অবসর ভেঙে ফেরা ইমাদ ওয়াসিম। পেস বোলিংয়ে আগের মতোই ভরসা শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহ। মাঝে অধিনায়ক-নাটকের মধ্য দিয়ে যাওয়া শাহিন অবশ্য বলেছেন, ‘আমার মেজাজ বেশ ভালো, ফিটনেসও। বিশ্বকাপ জিততে মুখিয়ে আছি। আমার সঙ্গীরা বেশ ভালো। তারা ভালো করলে উজ্জীবিত হই।’
স্পিন বোলিংয়ে ওয়াসিমের সঙ্গে আছেন আবরার আহমেদ ও শাদাব খান। শাহিন বলেছেন, ‘সব দিকই প্রায় পূর্ণ, এ দলটাই সেরা। যাতে করে আমরা জিততে পারি এবং কোনো অজুহাত না থাকে।’
অবশ্য ব্যাটিংয়ে অ্যাপ্রোচ ও ধারাবাহিকতার অভাব পাকিস্তানের বড় একটি সমস্যা। অন্য দলগুলো নিয়মিত বড় স্কোর গড়লেও মাঝে ৪৩টি ম্যাচ ২০০ রানের কোনো স্কোর ছাড়াই পার করেছে পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড ১০টি শতরানের ওপেনিং জুটি গড়া বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপর বড় ভরসা পাকিস্তানের।
অবশ্য তাঁদের ওপেনিং জুটি সমালোচিত হওয়ার পর বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাইম আইয়ুবকে ওপেনিংয়ে আনা হয়েছে সম্প্রতি। ফখর জামান, উসমান খান, আজম খান ও ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে গড়া মিডল অর্ডার বেশ শক্তিশালী। তবে এখানেও ধারাবাহিকতার অভাব আছে তাদের। পাকিস্তানকে শিরোপা জিততে তাই বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদেরও এগিয়ে আসতে হবে, মনে করা হচ্ছে এমন।