বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে বাজেভাবে হারের পর থেকেই আলোচনায় পাকিস্তানের ব্যাটিং। গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হারের পর আলোচনাটা আরও ডালপালা মেলেছে। বেঙ্গালুরুর অপেক্ষাকৃত ছোট বাউন্ডারিতে ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ মিলেই যেখানে ১৮টি ছক্কা মেরেছেন, সেখানে পাকিস্তানের পুরো ইনিংসে ছক্কা ছিল মাত্র ৬টি।
এর চেয়েও বড় আলোচনার বিষয় প্রথম পাওয়ারপ্লেতে (১ থেকে ১০ ওভার) পাকিস্তানের ছক্কা–খরা। বিশ্বকাপে দূরে থাক, ওয়ানডেতে এ বছরই প্রথম ১০ ওভারে কোনো ছক্কা মারতে পারেনি পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ছক্কা (১৫টি) মারা দলও তারা।
এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ইমাম–উল–হককে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরটা বেশ মজার ছলেই দিয়েছেন পাকিস্তানি ওপেনার, ‘হয়তো আমাদের শর্করা কমিয়ে আমিষ বেশি খেতে হবে।’
ইমাম যতই মজা করুন, চেন্নাইয়ে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি অস্বস্তিকর পরিসংখ্যানকে সঙ্গী করেই পাকিস্তানকে মাঠে নামতে হচ্ছে। বিশ্বকাপে শুধু ছক্কা মারাই নয়, আক্রমণাত্মক শট খেলাতেও সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ক্রিকেটের তথ্য–উপাত্ত ও পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষণ করা ওয়েবসাইট ‘ক্রিকভিজ’ এ তথ্য দিয়েছে।
এবারের বিশ্বকাপের ১০ দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ৪৩ শতাংশ আক্রমণাত্মক শট খেলেছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্টে বাবর আজমের দল এ পর্যন্ত ১১১৫টি বল খেলেছে, এর মধ্যে আক্রমণাত্মক শট ৪৭৯টি।
এ তালিকায় পাকিস্তানের চেয়ে একধাপ এগিয়ে ৯ নম্বরে আছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দলের আক্রমণাত্মক শট খেলার হার ৪৯ শতাংশ। নিজেদের খেলা ১১০৩ বলের মধ্যে ৫৪০টিতে বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, লিটনরা। পাকিস্তান আর বাংল্যাদেশই শুধু ৫০ শতাংশের কম আক্রমণাত্মক শট খেলা দল।
তবে বিশ্বকাপে আক্রমণাত্মক শটের ওপর দলগুলোর সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করছে না। এটাকে সফলতার মাপকাঠি হিসেবেও ধরা যাবে না। সেটা পয়েন্ট তালিকার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের সব কটি জিতে শীর্ষে আছে ভারত। তবে স্বাগতিকেরা আক্রমণাত্মক শট খেলেছে ৫৪ শতাংশ, যা এই তালিকায় রোহিত–কোহলিদের রেখেছে ৮ নম্বরে।
আবার বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ শতাংশ আক্রমণাত্মক শট খেলেও একটিমাত্র জয় নিয়ে আছে পয়েন্ট তালিকার ৯ নম্বরে।
৬৬ শতাংশ আক্রমণাত্মক শট খেলে সবার ওপরে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়ারা ১১৬০ বলের মধ্যে ৭৬৬টিতেই বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছে। দলটির সম্মিলিত স্ট্রাইক রেটও সবচেয়ে বেশি ১১০.৮৬।
এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দুটি দলীয় সর্বোচ্চও দক্ষিণ আফ্রিকার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তারা করেছিল ৪২৮ রান, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। পরশু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০ রান প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত থামতে হয়েছে নিশ্বাস দূরত্বে থেকে—৩৯৯।
আক্রমণাত্মক শট খেলায় শীর্ষ পাঁচের অন্য তিনটি দল নিউজিল্যান্ড (৫৮ শতাংশ), অস্ট্রেলিয়া (৫৭ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডস (৫৭ শতাংশ)। ৬ নম্বরে আছে আফগানিস্তান (৫৬ শতাংশ)।
ভারতের সমান ৫৪ শতাংশ আক্রমণাত্মক শট খেলেছে শ্রীলঙ্কাও। তবে লঙ্কানরা ভারতের চেয়ে কম বল খেলে বেশিবার বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ায় আছে ৭ নম্বরে। নেদারল্যান্ডসের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার একধাপ এগিয়ে থাকার কারণটাও একই।