টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার এক বছরের মাথায় ২০০১ সালে প্রথম পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না সেটি। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলতেই আগস্টের শেষ দিকে নাঈমুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান যায় বাংলাদেশ।
২৩ বছর পর আরেকটি আগস্টে বাংলাদেশ দল এখন আছে পাকিস্তানে। এবার দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে গেছে নাজমুল হোসেনের দল। এ নিয়ে চতুর্থবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে পাকিস্তান গেল বাংলাদেশ।
তবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টসহ হিসাব করলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের এটি সপ্তম পাকিস্তান সফর। পাকিস্তানে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা অবশ্য ভুলে থাকার মতোই—২৫ ম্যাচে যে মাত্র দুটি জয়। সেই জয় দুটি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০ ম্যাচ খেলে ২০টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এবার ভাগ্য বদলাবে কি না কে জানে!
ওয়াসিম আকরাম ছিলেন, ছিলেন ওয়াকার ইউনিসও। ক্রিকেটে ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেস বোলিং জুটিকে কীভাবে সামলাবেন বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা, সেটিই দেখার ছিল। কিন্তু দুই ইনিংসেই ৬টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃস্বপ্ন উপহার দেন লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়া। প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানে অলআউট বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে করে ১৪৮ রান। এই দুই ইনিংসের মাঝে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। ওভারপ্রতি ৪.৭৫ রান তুলে ৩ উইকেটে ৫৪৬ রানে ইনিংস ঘোষণা দেয় দলটি। ব্যাটিং করা ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই তুলে নেন সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেট মাত্র দ্বিতীয়বার এক ইনিংসে পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সেঞ্চুরি করতে দেখে। তিন দিনের মধ্যে ইনিংস ও ২৬৪ রানে ম্যাচটি হারে বাংলাদেশ।
দুই বছর পর পাকিস্তানে প্রথমবার পূর্ণাঙ্গ সফরে যায় বাংলাদেশ। এই সফরেই প্রথম তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সফরের আটটি ম্যাচেই হারা বাংলাদেশকে এবারও দুঃস্বপ্ন উপহার দেয় মুলতান। ২০০১–এর মতো বাজেভাবে হারের কারণে নয়, বরং খুব কাছে গিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা না পাওয়ার যন্ত্রণাই উপহার পায় বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের লিড নেওয়া বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ২৬১ রানের লক্ষ্য দেয়। ১৩২ রানে পাকিস্তানের ৬ উইকেট ফেলে দিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে জিতিয়ে দেন ইনজামাম-উল-হক। চারে নামা ইনজামাম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৩৮ রানে। বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদের চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়া দৃশ্যটাই প্রতীক হয়ে আছে ম্যাচের।
পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের মাত্র একটি ম্যাচেই হারের ব্যবধানটা এত ভদ্রস্থ রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। লাহোরের সেই ম্যাচেরও ২৩ রানে হারে বাংলাদেশ। এর আগে-পরে দুবার ১৫০ রানে ও দুবার ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ১০২ রানে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৯৬ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করা বাংলাদেশ পরের চারটি ম্যাচ হারে ১৩১ রান, ৭ উইকেট, ১৫৮ রান ও ১০ উইকেটে।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও একটি টেস্ট, এপ্রিলে একটি ওয়ানডে ও দ্বিতীয় টেস্ট—এক যুগ বিরতির পর পাকিস্তান সফরটা ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। কিন্তু করোনার কারণে সফরের দ্বিতীয় অংশটি আর হতে পারেনি। বাজে আবহাওয়ার কারণে বাতিল হয়েছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটিও। রাওয়ালপিন্ডিতে একমাত্র টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
১৫ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। লাহোরে এশিয়া কাপের ম্যাচটিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল আফগানিস্তান। মেহেদী হাসান মিরাজ (১১২*) ও নাজমুল হোসেনের (১০৪) সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান তোলে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় আফগানরা অলআউট ২৪৫ রানে। পেসার তাসকিন আহমেদ নেন ৪ উইকেট। তিন দিন পরে অবশ্য লাহোরেই পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।