ছোট বাউন্ডারির সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি যে দিকের বাউন্ডারি বড়, সেই পাশে এক–দুই রান করে নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা
ছোট বাউন্ডারির সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি যে দিকের বাউন্ডারি বড়, সেই পাশে এক–দুই রান করে নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা

হারারে যখন ওয়েলিংটন ও মেলবোর্নের মিশেল

লিটন দাসের ড্রাইভটা জুতসই হয়েছিল। ক্রিকেটের ভাষায় ‘জেনুইন হাফভলি’ করেছিলেন জিম্বাবুয়ের পেসার ভিক্টর নিয়াউচি। লিটনও নতুন কুকাবুরা বলটাকে কাভারে ঠেলে দিয়ে দৌড় শুরু করলেন। এক, দুই, তিন করে চারবার প্রান্ত বদল করলেন লিটন ও তাঁর ওপেনিং সঙ্গী তামিম ইকবাল।

লিটনকে স্বাচ্ছন্দ্যেই দৌড়ে চার রান নিতে দেখে তামিমের আগের দিনের কথাটা মনে পড়ে গেল। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের বাউন্ডারি নিয়ে সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ওয়ানডে অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘একেবারে কর্নারের উইকেটে খেলা। তাই একদিকের বাউন্ডারি একটু ছোট থাকবে। ৫৫ গজের মতো। এটা শুধু আমাদের জন্যই নয়, দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। এটা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।’

ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম ছক্কাটা মেরেছেন লিটন দাসই

মাঠের যে দিকটায় ছোট বাউন্ডারি, স্থানীয় ব্যক্তিরা সেই দিকটাকে ‘টিক্সার’ বলে থাকেন। আজ তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে সেদিকটার বাউন্ডারি মাত্র ৬৬ মিটার দীর্ঘ। ব্যাটসম্যানদের কাট শটগুলো দ্রুতগতিতে বাউন্ডারিতে যেতে দেখলে মনে হবে না আপনি হারারেতে আছেন। নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চের ছোট বাউন্ডারির কথা মনে পড়ে যাবে তখন।

হারারে স্পোর্টস ক্লাবের উল্টো দিকের নাম ‘এমবাঙ্কম্যান্ট’। সেদিকের বাউন্ডারি প্রায় ৯০ মিটার। লিটন ড্রাইভটা করেছিলেন সেদিকেই। যেদিকে বল বাউন্ডারিতে পৌঁছাতে ‘অনন্তকাল’ লেগে যায়। এমন বিশাল বাউন্ডারির জন্য পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। একই মাঠে এমন অসম আকৃতি মাথায় ছিল বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদেরও। সে জন্যই এমবাঙ্কম্যান্টের কাভার বাউন্ডারিতে চার-ছক্কার আশা ছেড়ে দিয়ে দুই-এক রান করে নেওয়ার চেষ্টা ছিল সবারই। দারুণ টাইমিং করেও যে বল সহজে বাউন্ডারিতে পাঠাতে পারবেন না, সেটি ইনিংসের শুরুতেই বুঝে গেছেন লিটনরা। ওই প্রান্ত থেকে যা বাউন্ডারি এসেছে সবই ছিল লেট কাট, স্কয়ার কাট শটে।

৮৯ বলে ৮১ রান করে চোটের কারণে আহত অবসর হয়েছেন লিটন দাস

এমবাঙ্কম্যান্টের কাভার অঞ্চল যেমন সতর্কতায় এড়িয়েছেন ব্যাটসম্যানরা, তেমনি লোলুপ দৃষ্টি ছিল টিক্সার প্রান্তের বাউন্ডারিতে। কাট, ড্রাইভ, পুল শটগুলোর পুরো ফায়দা নিতে পেরেছেন লিটন-এনামুলরা। কোনোভাবে ৩০ গজ পার করলেই হলো, হারারে স্পোর্টস ক্লাবের গতিময় আউটফিল্ড বল বাউন্ডারিতে পৌঁছে দিচ্ছিল। এনামুলের ব্যাটের কোনায় লাগা বলেরও বাউন্ডারি খুঁজে নিতে কষ্ট হয়নি।

ইনিংসের শেষের দিকে এসে অবশ্য এনামুলকে বিশাল বাউন্ডারি পার করার চ্যালেঞ্জটা নিতে দেখা যায়। লুক জঙ্গুয়ের বলে পুল করে এমবাঙ্কম্যান্টের ঘাসের বাউন্ডারিতে বল পাঠান এনামুল। প্রান্ত বদল করে রিচার্ড এনগারাভার বলে আবারও বিশাল বাউন্ডারি পার করার চেষ্টা করেন তিনি। এবার স্কয়ার অব দ্য উইকেটে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ব্যক্তিগত ৭১ রানের সময়। কিন্তু ভাগ্য ভালো, ওয়েসলি মাধেভেরে সহজ ক্যাচটি নিতে ব্যর্থ হন।

তবে দল হিসেবে মাঠের সীমারেখা বুঝে খেলায় বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কেমন ছিল, সেটা তো দলীয় রানেই বোঝা যায়। ২০১৪ সালের পর বাংলাদেশ দলের শীর্ষ চার ব্যাটসম্যান অর্ধশতক পেয়েছেন। ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশ দলের রান হয়েছে ২ উইকেটে ৩০৩। এবার একই পরীক্ষায় বাংলাদেশ দলের বোলাররা কেমন করেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা।