ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আজ তিন ম্যাচের একটিও বড় স্কোরের দেখা পায়নি। তবে রান খরার দিনেই রোমাঞ্চকর সমাপ্তি দেখেছে দুটি ম্যাচ। যার একটিতে অল্পের জন্যই নায়ক হতে পারেননি মোহামেডানের মাহিদুল ইসলাম। তাঁর দলকে ৩ রানে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ। আরেক ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ১ উইকেটের জয়ে নায়ক আমিনুল ইসলাম।
৬ বলে ১৩ রান—ফতুল্লায় আজ ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে এই সমীকরণই ছিল মোহামেডানের। হাতে মাত্র ২ উইকেট থাকলেও দলটির ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন মাহিদুল ইসলাম। ৮৫ রান নিয়ে ওভারটা শুরু করা মাহিদুল প্রথম বলে ২ রানের পর তৃতীয় বলে বিশাল এক ছক্কা মেরে ৩ বলে ৫ রান বানিয়ে দেন সমীকরণটাকে। আনিসুল ইসলামের করা ওভারের চতুর্থ বলটাতে কোনো রান নিতে না পারা মাহিদুল পঞ্চম বলটাকে কাভারে পাঠিয়ে পড়িমরি দৌড়ে নিতে চাইলেন ২ রান। কিন্তু হাবিবুরের দারুণ থ্রো ধরে গাজী গ্রুপের উইকেটকিপার প্রিতম কুমার ভেঙে দিলেন উইকেট। ১২৩ বলে ৯৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা মাহিদুলের বিদায়ের পর শেষ বলে ৪ রান দরকার ছিল মোহামেডানের। দলটির শেষ ব্যাটসম্যান আসিফ হাসান ব্যাটে-বলেই করতে পারেননি।
৩ রানের এই জয়ে টানা তৃতীয় জয় পেল গাজী গ্রুপ। আর তৃতীয় ম্যাচে মোহামেডানের এটি প্রথম হার।
মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়েও যে ৩ রানে জিতল গাজী, তাতে বড় অবদান রুয়েল মিয়ার। ১০ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। মোহামেডান অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে এলবিডব্লু করে শুরু করা রুয়েল ১৩তম ওভারের মধ্যে রুবেল মিয়া ও রনি তালুকদারকেও ফিরিয়ে ৩৮/৩ বানিয়ে দেন মোহামেডানের স্কোর।
এরপরই নিঃসঙ্গ পথ চলা শুরু মাহিদুলের। চারে নামা এ ব্যাটসম্যানকে যা একটু সঙ্গ দিয়েছেন ৭২ রানের পঞ্চম উইকেট জুটির সঙ্গী আরিফুল হক। ২৯ রান করে দলকে ১৩২ রানে রেখে আরিফুল যখন ফিরলেন, মোহামেডানের দরকার ছিল ৫১ বলে ৬০ রান। রুয়েল আবার ফিরে ৪ বলের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে পেয়ে যান ৫ উইকেট। ১২ ম্যাচের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এই প্রথম এক ম্যাচে দুটির বেশি উইকেট পেলেন ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার।
এর আগে গাজীর ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন ওপেনার আনিসুল ইসলাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ রান আল আমিন জুনিয়রের।
গাজী গ্রুপ: ৪৭.৪ ওভারে ১৯১ (আনিসুল ৭১, আল আমিন জুনিয়র ৩২, মঈন ২৭; নাঈম হাসান ৩/২৮, মুশফিক ২/২৮, হায়দার ২/৩১, আসিফ ২/৩৩)।
মোহামেডান: ৫০ ওভারে ১৮৮/৯ (মাহিদুল ৯৪, আরিফুল ২৯; রুয়েল ৫/৩২)।
ফল: গাজী গ্রুপ ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রুয়েল মিয়া।
২১০ রানে লক্ষ্য। ৪৯ ওভার শেষে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের স্কোর ২০৪/৯। দলটির আশা হয়ে টিকে ছিলেন আমিনুল ইসলাম। ৪৫ রান নিয়ে ওভারটা শুরু করা ব্যাটসম্যান প্রথম ৩ বলে কোনো রান নিলেন না। সমীকরণটা যখন ৩ বলে ৬ রানের, রূপগঞ্জ টাইগার্সের পেসার কাজী অনীক ইসলামকে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরেই নাটকীয় জয় এনে দিলেন দলকে। ছক্কা মারবেন, সে আত্মবিশ্বাস যেন শুরু থেকেই ছিল তাঁর।
১ উইকেটে এই জয়ের টানা তৃতীয় জয় পেল লিজেন্ডস। আবাহনী, প্রাইম ব্যাংক, লিজেন্ডস ও গাজী গ্রুপ প্রথম তিন ম্যাচে জয়ে পেলেও নেট রান রেটের হিসেবে লিজেন্ডস আছে তিনে। আবাহনী সবার ওপরে। প্রাইম ব্যাংক আছে দুইয়ে।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠের ম্যাচটায় টাইগার্স ৮ উইকেটে করে ২০৯ রান। অধিনায়ক ফরহাদ হোসেন করেন সর্বোচ্চ ৭৪ রান। এ ছাড়া ৫১ করেছেন ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম। ৯ রানে প্রথম ৩ উইকেট খোয়ানোর পর দুজন মিলে গড়েন ১২৭ রানের জুটি।
রান তাড়ায় ওপেনার তৌফিক খান ৭১ বলে ৬২ রান করে ফেরার সময় লিজেন্ডসের রান ৩ উইকেটে ৮৮। আমিনুল উইকেটে আসেন এরপরই। তবে তাঁকে দর্শক বানিয়েই আরও চার ব্যাটসম্যান ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর শহীদুল ইসলামকে (৩৪) নিয়ে ৬০ রানের জুটি গড়েন আমিনুল। দশে নামা আবদুল হালিমও (৮) যখন ফেরেন, লিজেন্ডের স্কোর ২০৪/৯। পরের গল্পটা বিপ্লব নামেই বেশি পরিচিত আমিনুলের।
রূপগঞ্জ টাইগার্স: ৫০ ওভারে ২০৯/৮ (ফরহাদ ৭৪, মাহফিজুল ৫১; হালিম ৪/৪০, আল আমিন ২/৩৫)।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৯.৪ ওভারে ২১০/৯ (তৌফিক ৬২, আমিনুল ৫১*, শহীদুল ৩৪; সোহাগ ২/২৫, আরাফাত জুনিয়র ২/৪৭)।
ফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আমিনুল ইসলাম।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে মুখোমুখি হয়েছিল পয়েন্ট তালিকার তলানির দুই দল পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ও গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি। সেই ম্যাচে গাজী টায়ার্সকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে পারটেক্স। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৭৯ রান করে পারটেক্স। রান তাড়ায় ৪৫.৩ ওভারে ১৪৫ রানে অলআউট গাজী টায়ার্স।
৮ রানে প্রথম ২ উইকেট হারানো পারটেক্সের ইনিংসটা ২০০ ছুঁইছুঁই হয়েছে তিনটি ৪০ ছাড়ানো ইনিংসে। সর্বোচ্চ ৪৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে ২টি ওয়ানডে খেলা অলরাউন্ডার তানভীর হায়দার। এ ছাড়া ওপেনার আজমির আহমেদ ৪৪ ও আহরার আমিন ৪১ রান করেছেন। রান তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো গাজী টায়ার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেছেন আশরাফুল আলম। ম্যাচসেরা হয়েছেন ১০ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া পারটেক্সের বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল আতিক।
পারটেক্স: ৫০ ওভারে ১৯৭/৯ (তানভীর ৪৯*, আজমির ৪৪, আহরার ৪১, জাহিদুজ্জামান ২৭; মারুফ ৩/৪৩, আরিদুল ২/২০, তৌফিক ২/৩৮)।
গাজী টায়ার্স: ৪৫.৩ ওভারে ১৪৫ (আশরাফুল ৩৭, শামীম ৩১, আশিকুর ৩০; রকিবুল ৩/১৫, মুক্তার ৩/৩২, মোহর ২/২৭)।
ফল: পারটেক্স ৫২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রকিবুল আতিক।