ওয়ানডেতে ভারতকে প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে বাংলাদেশ দল। এই সংস্করণে রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে দুবার সিরিজ জয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টিতে শক্তির ব্যবধান অনেক হলেও মাঝে মাঝে ভারতকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেন সাকিব-লিটনরা। কিন্তু দুই দলের টেস্ট মানে এখনো যেন এক অসম লড়াই।
২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের প্রতিপক্ষ ভারতই ছিল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ১৪ টেস্ট খেলে ১২টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পাঁচটিতে হার ইনিংস ব্যবধানে। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ও ২০১৫ সালে ফতুল্লায় যে দুটি টেস্ট ড্র হয়েছে, তাতে ছিল বৃষ্টির আশীর্বাদ।
২০১৯ সালে ভারতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজও হয়েছে একবারেই একপেশে। ইন্দোরে প্রথম টেস্ট পৌনে তিন দিনে আর কলকাতায় গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট সোয়া দুই দিনে হেরে যায় মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। এবার চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের দুই সেশন ভালো করলেও বাকি সময়ে ছিল ভারতেরই আধিপত্য।
আগামীকাল কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের আগে তাই একটি প্রশ্ন আবারও ঘুরে ফিরে আসছে—তাহলে কি রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামলেই প্রবল চাপে ‘চিড়ে চ্যাপ্টা’ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ?
আজ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে আসা সাকিব আল হাসানকেও শুরুতেই ভারতের বিপক্ষে খেলার চাপ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনেই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার আগে সাকিব বলেছেন, ‘সর্বশেষ ওরা যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিল (২০২২ সালের ডিসেম্বরে), আমরা ওদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছি। টেস্ট সিরিজের একটি ম্যাচের আমরা জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। ওদের ৭০ থেকে ৮০ রানের মতো দরকার ছিল। হাতে ছিল ৩ বা ৪ উইকেট। সেখান থেকে (রবিচন্দ্রন) অশ্বিন শ্রেয়াস আয়ারের সঙ্গে খুবই ভালো ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতিয়েছে। ওই ম্যাচ ছাড়া আমরা টেস্টে ওদের বিপক্ষে যতটা সফল হতে চেয়েছি, ততটা হতে পারিনি। আগামীকাল আমরা আরেকটি সুযোগ পাব।’
চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ যেমন খেলেছে, দলটা তার চেয়ে ভালো বলেই মনে করেন সাকিব, ‘আমার মনে হয় চেন্নাইয়ে আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালোই খেলেছি। তবে সাড়ে তিন দিনে ম্যাচ শেষ হওয়া আমাদের জন্য আদর্শ ব্যাপার ছিল না। আমাদের মনে হয়েছে চেন্নাইয়ে যেমন খেলেছি, আমরা তার চেয়ে ভালো দল। আগামীকালের ম্যাচে আমরা সেটা দেখাতে চাই।
এ মাসেই পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই করে এসেছে বাংলাদেশ। সেই সুখস্মৃতির সঙ্গে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভারতে গেছে নাজমুল হোসেনের দল। কিন্তু শক্তি-সামর্থ্যে ভারত ও পাকিস্তানের ব্যবধান যে অনেক, তা এখন ভালোভাবেই টের পাচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারত দল হিসেবে পাকিস্তানের তুলনায় কোথায় এগিয়ে—এমন প্রশ্নে সাকিবের উত্তর, ‘আমরা মতে, পাকিস্তানের বর্তমান দলটা তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অনভিজ্ঞ। আমাদের ম্যাচ খেলার সংখ্যার সঙ্গে ওদের সংখ্যার তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন আমরাই অভিজ্ঞ। টেস্ট ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা বিশাল এক ফ্যাক্টর।’
‘যদি ভারতের কথা বলি, ওরা বর্তমানে (বিশ্ব) টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তালিকার ১ নম্বর দল। নিজেদের মাঠে সম্ভবত ওরা অজেয় দল। আমি কোথাও একটা পরিসংখ্যান দেখেছি। সেখানে দেখলাম, ভারত নিজেদের মাটিতে (টেস্ট সিরিজে) ৪ হাজার দিনেরও বেশি সময় ধরে অপরাজিত। এতেই বোঝা যায়, ঘরের মাঠে ওরা কতটা ভালো দল। ওরা বাইরেও (বিদেশেও) ভালো করছে। কিন্তু ভারতে ওরা অপরাজিত। যেকোনো দেশের জন্য ভারত সফর কঠিন। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। আগেও বলেছি, ভারতের সঙ্গে ওদের মাটিতে লড়াই করতে হলে আমাদের খুবই ভালো খেলতে হবে’—যোগ করেন সাকিব।