ভক্তরা বোধ হয় তাঁকে ভুলতেই বসেছিলেন। এত দিন মনে রাখা সহজ নাকি! সাব্বির রহমান ব্যাটিং করতে নামবেন, ব্যাট–বলের নিখুঁত টাইমিংয়ের শব্দটা কানে লেগে থাকবে, এটা তো আর হামেশা ঘটে না। তাঁকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাই তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়। কখনো অনেক দিন। ভক্তদের সেই অপেক্ষা কিছুটা শেষ হয়েছে গতকাল।
বিপিএলে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৯ ছক্কার ইনিংসে করেছেন অপরাজিত ৮২। তাতে অবশ্য হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা ঢাকা ক্যাপিটালসকে জেতাতে পারেননি। সাব্বিরের ভক্তদের আফসোসই শুধু কিছুটা মিটেছে।
উল্টোও হতে পারে। ভক্তদের আফসোস আরও বেড়েও যেতে পারে। এই আফসোস আবার ভিন্ন ধরনের, তা ধরনটা কেমন—এমন সাব্বিরকে আবার কবে দেখা যাবে? এমন প্রশ্ন জাগা তো অস্বাভাবিক নয়।
জাতীয় দলে না খেলেও কোনো ক্রিকেটার প্রাসঙ্গিক থাকতে পারেন। তবে সাব্বির তো সেই ক্রিকেটার নন। সর্বশেষ জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতেও দল পাননি। নিয়মিত দল পান না বিপিএলেও। সর্বশেষ বিপিএলেই যেমন ছিলেন না। এর চেয়ে তাঁকে নিয়মিত পাওয়া যায় মফস্বলের টেপ টেনিস টুর্নামেন্টে। কিন্তু আফসোস, টেপ টেনিস ক্রিকেটে ব্যাট-বলের নিখুঁত টাইমিংয়ে যে দারুণ সেই শব্দটা পাওয়া যায় না!
শব্দ খুঁজতে ভক্তদের তাই ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্টে তাকিয়ে থাকতে হয়। এবারের বিপিএলে সেই সুযোগটা পেয়েছেন সাব্বির। এই বিপিএলে বড় বিদেশি তারকা নেই বললেই চলে। তারকা না থাকলে যা হয়, দেশি ক্রিকেটারের কদরটা বাড়ে। সাব্বির আসলে দল পেয়েছেন এ কারণেই। দল যেভাবেই পান না কেন, সাব্বিরের মতো ব্যাটসম্যান দলে থাকলে তাঁকে একাদশে খেলানোর লোভ সামলানো যেকোনো কোচের জন্য কঠিন।
আর ঢাকার কোচ তো খালেদ মাহমুদ। সাব্বিরের নাড়িনক্ষত্র তাঁর সবই জানা। এরপরও প্রথম তিন ম্যাচে একাদশে সাব্বির নেই! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। গালি যা পড়ার গিয়ে পড়েছে কোচের কাঁধে। এরপরই না খালেদ মাহমুদ আসল সত্যটা জানালেন!
কী জানালেন, সেটা তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘ট্রেনিংয়ে সাব্বির অনুপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচের মাঝে সে অনুশীলনে আসেনি। টিম ডিসিপ্লিনের ব্যাপারও ছিল, এই কারণেই তাকে খেলানো হয়নি। ম্যাচটি খেলানো হয়নি ১ তারিখে অনুশীলনে না আসার জন্য। এটা পুরোপুরি ডিসিপ্লিনারি ইস্যু।’
এটাও হতে পারে? নিজেকে প্রমাণের এত বড় সুযোগ, সাব্বিরের তো সবার আগেই অনুশীলনে আসার কথা! সেই সাব্বির নাকি অনুশীলনেই আসেননি। সাব্বিরের পুরো ক্যারিয়ারটাই অবশ্য এমন নানা আলোচনায় জর্জরিত। সাব্বিরের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা নতুন নয়। একবার তো জাতীয় লিগের ম্যাচে এক দর্শককে পিটিয়ে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, বাদ পড়েন বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও।
এসবের পরও বিশেষ সামর্থ্য–গুণেই সাব্বির টিকে থাকেন, থেকেছেন। গতকালের ইনিংসটা মনে করে দেখুন। ২২ বলে ফিফটি করেছেন। যেখানে প্রথম ৯ বলে করেছিলেন ৪। ছক্কা মেরেছেন ৯টি। এর মধ্যে কাভারের ওপর দিয়ে যে ছক্কাগুলো মেরেছেন, তা মারতে বিশেষ সামর্থ্যই লাগে। আরাফাত সানির বিপক্ষে যেভাবে ছক্কাগুলো হাঁকালেন, তাতে যে কেউ ভাবতে পারেন, স্পিনারদের বিপক্ষে ছক্কা মারা এত সহজ!
জানিয়ে রাখতে হচ্ছে কাল তাঁর মারা ৯ ছক্কা বিপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে এক ইনিংসে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সাব্বির ২০১৬ বিপিএলে রাজশাহীর হয়ে বরিশালের বিপক্ষে ১২২ রান করার পথেও ৯ ছক্কা মেরেছিলেন।
সাব্বিরের ক্যারিয়ারের শুরুটা কিন্তু দুর্দান্ত। সাব্বিরের শুরু বললে আবার তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেকের বছর ২০১৪ নয়, ২০১০ সালকে টানতে হয়। সেবার এশিয়ান গেমসের ফাইনালে ১৮ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেশের ক্রিকেটে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
২০১৬ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ৮০ রানের ইনিংস, কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ৫০ বলে ৭৭, সাব্বিরের বলার মতো ইনিংস আছে বেশ কয়েকটি।
তাঁর সেই ইনিংসে আফগানিস্তানকে হারিয়ে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ৮০ রানের ইনিংস, কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ৫০ বলে ৭৭-এর মতো বলার মতো ইনিংস আছে বেশ কয়েকটি। ক্যামিও তো আরও অনেকই আছে।
একসময় বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন। খেলেছেন তিন ফরম্যাটেই। তারপর নিজের দোষেই হারিয়ে গেলেন। যদি প্রশ্ন হয়, এত সামর্থ্য নিয়ে সাব্বির করলেনটা কী? স্বয়ং সাব্বিরের কাছেও হয়তো এর উত্তর নেই। উত্তর খোঁজার সময়ও কি আছে? বয়স যে ৩৩।