স্বচ্ছতা আনতে ডিআরএসের কক্ষে ক্যামেরা লাগানোর কথা বলছেন মাইকেল ভন। রাঁচিতে জো রুটের এলবিডব্লু নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর এমন বলেছেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
কদিন থেকেই আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছে ক্রিকেটের ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস। ভারতের সঙ্গে ইংল্যান্ডের সিরিজে একাধিকবার এ নিয়ে কথা হয়েছে। এরই মধ্যে পিএসএলে নিজেদের ভুলও স্বীকার করে নিয়েছে ডিআরএসের অন্যতম প্রযুক্তি হক-আইয়ের সরবরাহকারীরা।
সর্বশেষ গতকাল রুটের আউট নিয়ে আবার আলোচনায় এটি। দ্বিতীয় ইনিংসে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এলবিডব্লু হন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিয়ান রুট। আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা আউট না দেওয়ার পর ভারত রিভিউ নেয়। তাতে বল ট্র্যাকিং দেখায়, সূক্ষ্ম ব্যবধানে সেটি লেগ স্টাম্পের ভেতরে পড়ার পর গিয়ে লাগত স্টাম্পে। ধর্মসেনার সিদ্ধান্ত বদলে যায় তাতেই। তবে রুট ও ইংল্যান্ড দলকে এ নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট মনে হয়নি।
এ নিয়ে বিবিসিকে ভন প্রথমে বলেন, ‘আমি বলছি না কেউ প্রতারণা করছে। যে সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা সবাই দ্বিমত পোষণ করছি, সেটি নেওয়ার পর আমি শুধু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। হক-আইয়ের ওই ব্যক্তি যদি ক্যামেরার সামনে থাকেন, তবে সব ফিসফাস বন্ধ হয়ে যাবে।’
পরে ইংল্যান্ডের আরেক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে লেখা এক কলামের নিজের মতের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ভন। সাবেক এ অধিনায়ক ও এখনকার ধারাভাষ্যকার একজন ‘দর্শক’ হিসেবেও মনে করেন, ক্রিকেটপ্রযুক্তির ব্যাপারে একটু গোঁড়ামিই করছে। ভন লিখেছেন, ‘প্রথমত, আমি ক্রিকেটেপ্রযুক্তি পছন্দ করি। তার মানে এই না, সুযোগ থাকার পরও আমরা উন্নতির সুযোগ নেব না।’
রুটের গতকালের আউটের আগে এ সিরিজে জ্যাক ক্রলির বিপক্ষে যাওয়া দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলেছে ইংল্যান্ড। বিশাখাপট্টনমে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন কুলদীপ যাদবের বলে ক্রলির এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ বলেছিলেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। রাজকোটে পরের টেস্টে যশপ্রীত বুমরার বলে আবার অমন সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যায় ক্রলির। ম্যাচ শেষে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায় স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে।
পরে জানা যায়, সিদ্ধান্তটা সঠিক হলেও টেলিভিশনে গ্রাফিকস দেখাতে ভুল করেছিল হক-আই। রাঁচিতেই ওলি পোপের প্রথম ইনিংসের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তও রিভিউ নিয়ে পায় ভারত। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেললেও আউট হন ইংল্যান্ডের সহ-অধিনায়ক।
অবশ্য ভন বলছেন, সিরিজে ইংল্যান্ডের এমন অবস্থার পেছনে তারাই দায়ী। এর আগে স্টোকসও বলেছিলেন, এমন নয় যে ক্রলির ওই সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়াতেই তাঁরা হেরেছেন। তবে গতকাল রুটের ওই সূক্ষ্ম ব্যবধানে আউটের পরই ডিআরএসে পরিবর্তনটা চান ভন।
ভনের মতে, ‘খোলা চোখে এটিকে দেখে আউট মনে হয়নি; কারণ, আপনি দেখে মনে করবেন না যে এটি লাইনের মধ্যে পিচ করবে। এরপর হক-আই যখন তাদের ছবি দেখাল, আমি খোলা চোখে বলতে পারছিলাম না এটি লাইনের মধ্যে পড়েছে কি না। পর্দায় শুধু দেখানো হচ্ছে—লাল, লাল, লাল (লেগ স্টাম্পের ভেতরে পড়ছে, ইমপ্যাক্ট স্টাম্পের মধ্যে, লেগ স্টাম্পে আঘাত করছে)। একবার মনে হচ্ছে অর্ধেকের বেশি ভেতরে, একবার মনে হচ্ছে উল্টোটা। এরপর আমি যে সিদ্ধান্তে এলাম, “জো দুর্ভাগা, কিন্তু আমি প্রযুক্তির পক্ষে। কারণ, আমার আর উপায় কী!”’
ভন বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি দেখেছেন—লোকে এটিকে বিশ্বাস করছে না। তাদের অনাস্থা ভারতের সম্প্রচার চ্যানেলকে ঘিরে, সেটিও উল্লেখ করেন তিনি। অবশ্য নিজেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে হক-আই নিয়ে এত আলোচনা, সে কোম্পানি যুক্তরাজ্যভিত্তিক। এর আগে বিরাট কোহলির অধীন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও ভারত দলকে স্টাম্প মাইকের কাছে এসে স্বাগতিক দেশের সম্প্রচারকদের বিপক্ষে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল।
ভনের মতে, এসব দূর করার সহজ উপায় হচ্ছে ডিআরএসের কক্ষে ক্যামেরা বসানো। তিনি বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হচ্ছে, একটা ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন থাকুক সেখানে, যাতে আমরা সবাই জানি কী হচ্ছে, ব্যাপারটির মধ্যে কতটা মানবিক দিক আছে। আর একজন আইসিসি কর্মকর্তা যদি থাকেন, তাহলে আমরা জানব যে স্বচ্ছতাও আছে।’
ফুটবল ও রাগবির উদাহরণ টেনে ভন বলেছেন, ‘ওই সব খেলায় প্রযুক্তি একদম ঠিকঠাক নয়, তবে এ ক্ষেত্রে তারা ক্রিকেটের চেয়ে ভালোভাবে সামলায়। দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা বেশি। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমরা দেখতে পারি।’
সাধারণত এখন ডিআরএসের প্রক্রিয়ার টেলিভিশন আম্পায়ার কী দেখে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা শোনা যায়। তবে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করা ‘টেলিভিশন ডিরেক্টর’ পদের যে ব্যক্তির সঙ্গে তিনি কথা বলেন, তাঁর কথা শোনা যায় না।