কদিন আগেই সাকিব আল হাসানের অবসর নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ। পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে সে সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন সাকিব। তবে আজ ভারতের বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচে সাকিবের দারুণ পারফরম্যান্স হতে পারে শেবাগের মন্তব্যের প্রকৃত জবাব। সাকিব তেমন কিছু করতে পারলে সেটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নতুন করে উজ্জীবিতও করে তুলবে।
সুপার এইটের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে সাকিবের পারফরম্যান্সের ওপর বাংলাদেশের সাফল্যের অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সাকিব-তামিম বিতর্ক অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও বিশ্বকাপে তামিমের সমর্থনই পাচ্ছেন সাকিব। ভারত ম্যাচের আগে ক্রিকেটভিত্তিক পোর্টাল
ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক আলোচনায় সাকিবকে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় বলে মন্তব্য করেছেন তামিম। পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে সাকিবকে ব্যাটিংয়ে তিন-চারে উঠে আসার এবং বোলিংয়ে চার ওভারের কোটা পূরণের পরামর্শও দিয়েছেন এই ওপেনার।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ছয়ে ব্যাট করে ১৪ বলে ৮ রান করেন সাকিব।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চারে ব্যাট করলেও শুধু নেপালের বিপক্ষে রান পেয়েছেন। ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ করেন। সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ ম্যাচে ছয়ে নেমে ১০ বলে ৮ রান করে আউট হন সাকিব।
ভারতের বিপক্ষে সাকিবকে ব্যাটিংয়ে ওপরে উঠে আসার পরামর্শ দিয়ে তামিম বলেছেন, ‘সে (সাকিব) বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও সে। আপনার বড় খেলোয়াড়কে অবশ্যই বড় ম্যাচে পারফর্ম করতে হবে। সে এটা অতীতেও করেছে। বাংলাদেশের জন্য সে দারুণ একজন খেলোয়াড়। ব্যাটিংয়ে যদি তার সময়ের প্রয়োজন হয়, তবে তাকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরের দিকে উঠে আসতে হবে এবং নিজেকে বেশি ওভার খেলার সুযোগ দিতে হবে। এভাবেই সে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে সংগ্রাম করছে। তাহলে কেন সাকিবকে তিন বা চার নম্বরে পাঠিয়ে থিতু হওয়ার সময় দেওয়া হবে না? বিশ্বের যেকোনো সেরা বোলিংয়ের বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণ করার মতো অভিজ্ঞতা তার আছে।’
বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলে সাকিব বল করেছেন মাত্র ১০.২ ওভার। শুধু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচেই ৪ ওভারের কোটা পূরণ করেছেন সাকিব। সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে সাকিব বোলিং করেননি। তামিম মনে করেন, পরিস্থিতি যেমনই হোক কিংবা উইকেটে যে–ই থাকুক; সাকিবের ৪ ওভার শেষ করা উচিত, ‘বাঁহাতি ব্যাট করছে নাকি ডানহাতি ব্যাট করছে সেসব ভুলে তাকে (সাকিব) ৪ ওভার বল করতে হবে। হ্যাঁ, দলের ফাস্ট বোলিং বিভাগ ভালো করছে। কিন্তু সাকিব আল হাসান আপনার সেরা বোলার। অনেক বছর ধরে সে তার কাজটা করে আসছে।’
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে সাকিব কীভাবে কার্যকর হতে পারেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তামিম, ‘ভারতীয় দলে কয়েকজন খেলোয়াড়ই আছে যারা সাকিবের জন্য দারণ ম্যাচ-আপ। আপনি রোহিত এবং বিরাটের (কোহলি) কথা ভাবতে পারেন। ভারতের হয়ে এই মুহূর্তে যে রান করছে, সেই সূর্যকুমার যাদবকেও সাকিব শেষ দুবার আউট করেছে। একবার অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবং আরেকবার এশিয়া কাপে। অন্য প্রান্তে তাই পন্ত থাকলেও সাকিবের ৪ ওভার বল করা উচিত, কারণ সে আপনার সেরা বোলার।’
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং, তা জানতে চাইলে তামিম বলেছেন, ‘ভারতের বিপক্ষে খেলাটা বাংলাদেশের জন্য সব সময় চ্যালেঞ্জিং। এই মুহূর্তে ভারত যেভাবে খেলছে, যেভাবে বল করছে সেটা দারুণ। আমরা অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলিং নিয়ে কথা বলছি কিন্তু ভারতের বোলিংও বিশ্বসেরা। তারা অসাধারণ বোলিং করছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের রান করা জরুরি। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভালো কিছু করার তাগিদ দিয়ে তামিম আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে, যা ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। বাংলাদেশের বোলিং ভালো করছে। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ১৬০-৭০ রানের সংগ্রহ এনে দিতে হবে। বিশেষ করে অ্যান্টিগায়, যেখানে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তাই এগিয়ে আসতে হবে এবং বোলারদের জন্য ভারতের ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ করার মতো কিছু করতে হবে।’