হারের পর আম্পায়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা
হারের পর আম্পায়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা

সকালে বাংলাদেশ টিকল ৪.৫ ওভার, দক্ষিণ আফ্রিকার জিততে লাগল ২২ ওভার

তৃতীয় দিনের খেলার সমাপ্তি ঘোষণার পর কিছুটা উজ্জীবিত হওয়া গিয়েছিল। ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা কাটিয়ে ৮১ রানের লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। হাতে মাত্র ৩ উইকেট থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ বলে গিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০ রানের লক্ষ্য দেওয়া সম্ভব।

মুশতাক আশাবাদী মানুষ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধরনকে এখনো সম্ভবত খোলনলচে বুঝতে পারেননি। হয়তো জানতেন না, শেষের দিকের ব্যাটসম্যান কিংবা লোয়ার অর্ডার ক্রিজে থাকতে টেস্টে একটি নতুন দিনের সকাল বাংলাদেশের জন্য বেশির ভাগ সময়েই ভয়ংকর। সেই ধারা মেনেই আজ চতুর্থ দিন সকালে বাংলাদেশের ইনিংস টিকেছে মাত্র ৪.৫ ওভার। ৮৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৩ রানে তৃতীয় দিন শেষ করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত অলআউট হয় ৮৯.৫ ওভারে ৩০৭ রানে।

মুশতাকও চোখের সামনে দেখলেন তাঁর আশায় জল ঢেলে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য মাত্র ১০৬ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বলছিল, টেস্টে প্রতিপক্ষকে ২০৪ রানের কম লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশ কখনো জিততে পারেনি।

রাবাদার বলে ফিরেছেন মিরাজ

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের লড়াকু ৯৭ ও জাকের আলীর ৫৮ রানে যে উদ্দীপনাটুকু জেগেছিল ১০৬ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর সেটুকু মিলিয়ে যাওয়ার কথা। দক্ষিণ আফ্রিকাও বেশি সময় নেয়নি। ২২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। সকালের সেশনেই তুলে নেওয়া এই জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

আকাশের মেঘের ঘনঘটা দেখেই সম্ভবত একটু চালিয়ে ব্যাট করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫২ বলে ৪১ রান করেন টনি দে জর্জি। ৩৭ বলে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন ত্রিস্তান স্টাবস। ২৭ বলে ২০ রান করে তাইজুল ইসলামের বলে বোল্ড হন মার্করাম। জর্জি ও ডেভিড বেডিংহামের উইকেটও তাইজুলের। প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া তাইজুল এই টেস্টে মোট ১৬৫ রানে ৮ উইকেট নিলেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নেন রাবাদা

অপরাজিত ৮৭ রানে তৃতীয় দিন শেষ করা মিরাজের ব্যাটে আজ সেঞ্চুরি দেখার আশায় ছিলেন অনেকেই। ব্যক্তিগত ১৬ রানে অন্য প্রান্তে ছিলেন নাঈম হাসান। কিন্তু দিনের তৃতীয় বলেই নাঈমকে ফিরিয়ে দিয়ে অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা। মাঝে দুই ওভার পর উইয়ান মুল্ডার তাইজুলকে আউট করায় মিরাজের সেঞ্চুরি করা শঙ্কার মুখে পড়ে যায়। এই স্পিন অলরাউন্ডার তখন ৯৭ রানে অপরাজিত। কিন্তু পরের ওভারে মিরাজ নিজেই রাবাদাকে উইকেট দেন। তাতে ৯৭ রানে থামে তাঁর ইনিংস।

মিরপুর টেস্টে মোট ৭২ রানে ৯ উইকেট নিলেন রাবাদা। এর মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট, যা তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেরা বোলিং। ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ১৫তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন রাবাদা। আগামী মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১০৬ ও ৩০৭ (মিরাজ ৯৭, জাকের ৫৮, মাহমুদুল ৪০, মুশফিক ৩৩, নাজমুল ২৩, নাঈম ১৬; রাবাদা ৬/৪৬, মহারাজ ৩/১০৫, মুল্ডার ১/৪০)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০৮ ও ১০৬/৩ (জর্জি ৪১, স্টাবস ৩০*, মার্করাম ২০, বেডিংহাম ১২; তাইজুল ৩/৪৩, হাসান ০/১২, মিরাজ ০/১৩, নাঈম ০/২০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: কাইল ভেরেইনা (দক্ষিণ আফ্রিকা)

সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা