দুই অধিনায়কই চেয়েছিলেন, টসে জিতে ফিল্ডিং নিতে। এমন উইকেটে কত রান যথেষ্ট হবে, সেটি নিশ্চিত নন বলে। চট্টগ্রামের ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটে রনি তালুকদাররা তোলেন ঝড়, ১৯.২ ওভারে ওঠে ২০৭ রান। এরপর বৃষ্টিতে ২ ঘণ্টা ৩ মিনিট বন্ধ ছিল খেলা। ৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডে লক্ষ্য ছিল ১০৪ রান। বৃষ্টির পর উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আরেকটু সহজ হয়ে এসেছিল, তবে তাসকিন আহমেদদের তোপে সফরকারীরা থামে ৮১ রানেই। ডিএলএস পদ্ধতিতে ২১ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে কীভাবে জিতল বাংলাদেশ, পড়ুন নিচে—
ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জেতার পর এবার আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচ আজ। দুপুর ২টায় শুরু ম্যাচ, টস কিছুক্ষণের মধ্যেই।
টসে জিতেছেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিং। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, তিনিও ফিল্ডিং-ই নিতেন।
তিন পেসার ও তিন স্পিনারের বোলিং কম্বিনেশন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচের একাদশ থেকে আছে একটিই পরিবর্তন—তানভীর ইসলামের জায়গায় এসেছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। তানভীর অবশ্য এ সিরিজের দলেই নেই।
দুই নতুন মুখ রিশাদ হোসেন ও জাকের আলীর সঙ্গে একাদশের বাইরে আছেন শরীফুল ইসলাম।
বাংলাদেশ একাদশ
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন, রনি তালুকদার, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে পাঁচটি পরিবর্তন আছে আয়ারল্যান্ড একাদশে। গতকালই জানানো হয়েছে, এ সিরিজে বিশ্রামে থাকবেন নিয়মিত অধিনায়ক অ্যান্ডি বলবার্নি।
আয়ারল্যান্ড একাদশ
মার্ক এডেয়ার, রস এডেয়ার, কার্টিস ক্যাম্ফার, গ্যারেথ ডিলানি, জর্জ ডকরেল, গ্রাহাম হিউম, পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার, বেন হোয়াইট ও ক্রেইগ ইয়াং।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে জিতেছি, তবে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেও একইরকম ভালো খেলতে হবে।সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ অধিনায়ক
দুই ডানহাতি ওপেনার, তাঁদের সামনেই অফ স্পিনার হ্যারি টেক্টরকে প্রথম ওভারে এনেছেন পল স্টার্লিং। প্রথম ৩ বলে ২ রান আসার পর চতুর্থ বলে ডাউন দা গ্রাউন্ডে এসে ছক্কা মেরেছেন লিটন দাস, লং অন দিয়ে। শুরুতে মনে হয়েছিল ঠিকঠাক টাইমিং হয়নি, তবে সেটিই যথেষ্ট হয়েছে লিটনের।
প্রথম ওভারে ১১ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
মার্ক এডেয়ারকে শর্ট লেংথে পেয়ে টেনে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মেরেছেন রনি তালুকদার, আরেকবার বদলেছে বৃত্তের বাইরে দুই ফিল্ডারের অবস্থান। লিটন অবশ্য এ ওভারে পেয়েছেন ভাগ্যের ছোঁয়া। স্কুপের মতো করতে গিয়ে ওপরে উঠেছিল। বল শুধু নিরাপদে পড়েনি, হয়েছে চারও। এডেয়ারের প্রথম ওভারে এসেছে ১৪ রান, বাংলাদেশ ২ ওভারে ২৫/০।
গ্রাহাম হিউমের ওভারে ছক্কা আসেনি। লিটন যে চারটি মেরেছেন, ফাইন লেগের ফিল্ডার হয়তো আটকাতে পারতেন সেটিও। তাতে বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না, ৩ ওভারে ৩৩ রান তুলে ফেলেছে তারা। ওয়ানডে সিরিজে আয়ারল্যান্ডের সেরা বোলার হিউম তাঁর প্রথম ওভারে দিয়েছেন ৮ রান।
প্রথম ৫ ওভারে পাঁচ জন বোলার এনেছেন স্টার্লিং, লিটনদের আগ্রাসনের শিকার কমবেশি হয়েছেন সবাই। পঞ্চম ওভারে নিজের প্রথমটি করতে এসে ১১ রান দিয়েছেন লেগ স্পিনার গ্যারেথ ডিলানি, এর আগে ক্রেইগ ইয়াংয়ের প্রথম ওভারে এসেছে ১৬ রান। ৫ ওভারেই ৬১ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ।
এডেয়ারকে কাট করে চার মারলেন রনি, ওভারের সেটি চতুর্থ বল। সে শটেই বাংলাদেশের স্কোর হয়ে গেল ৭৬—পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর সমান হলো তাতেই। এডেয়ারকে ওই চারের আগে-পরে আরও দুটি চার ও একটি ছয় মেরেছেন রনি। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের নতুন স্কোরের রেকর্ডও হয়ে গেছে। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ৭৬ রান, ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
বাংলাদেশ ৬ ওভারে ৮১/০।
অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েই কি না অতিরিক্ত আলগা শট খেলে ফেললেন লিটন দাস। ক্রেইগ ইয়াংকে শরীর থেকে বেশ দূরে ব্যাট চালিয়ে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন লিটন, ২৩ বলে ৪৭ রান করেই থেমেছেন লিটন, রনির সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি থেমেছে ৯১ রানে।
২৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করলেন রনি তালুকদার, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যেটি প্রথম তাঁর। রনির ফিফটির আগেই ১০০ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
৯ ওভারে ১০৫/১।
অফ স্টাম্পের বাইরে টানা দুটি ওয়াইড, এরপর হ্যারি টেক্টর বদলে ফেললেন লাইন ও লেংথ। সামনে গিয়ে খেলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে নাজমুলের, হয়েছেন স্টাম্পিং। ১৩ বলে ১৪ রান করেই থামলেন নাজমুল, ১১৮ রানে বাংলাদেশ হারাল দ্বিতীয় উইকেট।
৪, ৬, ৬—লেগ স্পিনার হোয়াইটের ওভারে তিনটি বাউন্ডারিসহ এসেছে ১৮ রান। ১২ ওভারে ২ উইকেটে ১৩৯ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ।
গ্রাহাম হিউমের ফুললেংথের বলটা যতটা ভেবেছিলেন, ততটা ওঠেনি। পুরোপুরি মিস করে বোল্ড রনি তালুকদার। ৩৮ বলে ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসের শেষ এখানেই। লিটনের সঙ্গে ৯১, নাজমুলের সঙ্গে ২৭ রানের পর শামীম হোসেনের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটির পর থামলেন রনি। ১৫৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, ১৪ ওভারশেষে।
মার্ক এডেয়ারের বলটার পেছনে এক রকম ছুটলেন শামীম হোসেন। তাতে টাইমিংয়ের দেখা পাননি, এক্সট্রা কাভারে পল স্টার্লিং নিয়েছেন সহজ ক্যাচ। ২০ বলে ৩০ রান করে ফিরলেন শামীম, বাংলাদেশ হারাল চতুর্থ উইকেট।
৮ বলে ১৩ রানের ক্যামিও খেলে ফিরলেন তাওহিদ হৃদয়। ইয়াংয়ের বলে ডিপ কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এ ওভারেই ২০০ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
আকাশ মেঘলা ছিল বেশ কিছুক্ষণ ধরেই, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও নেমেছিল। তবে আম্পায়াররা এরই মধ্যে চালিয়ে যাচ্ছিলেন খেলা। অবশেষে বন্ধ হলো সেটি। বাংলাদেশ ইনিংসে ৪ বল বাকি থাকতে ক্রিজ ঢেকে দেওয়া হয়েছে কাভারে। ৫ উইকেটে ২০৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ, ১৯.২ ওভারে।
এখনো সরানো হয়নি কাভার। বৃষ্টিও থামেনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল ম্যাচে।
২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন, সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজে শামীম হোসেন ফেরেন আবার। দুই ম্যাচ খেললেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি একবারও। আজ এ বাঁহাতিকে পাঠানো হয় চার নম্বরে, খেলেন ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস। ২টি চারের সঙ্গে শামীম মেরেছেন ১টি ছক্কা।
এমনিতে চট্টগ্রামে বেড়েছে বৃষ্টির তোপ। একটু আগেও চতুর্থ আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা কথা বলছিলেন যখন, ছাতা ছিল না তাঁদের সঙ্গে। সে ছাতাই ফিরে এসেছে।
সিলেটে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইনিংস-বিরতিতে নামা বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্তই হয়েছিল ম্যাচ।
বয়স হয়ে গেছে ৩৯ বছর। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এখন ক্রিকেটের চেয়ে তাঁর বেশি সময় কাটে রাজনীতির মাঠে। এত কিছুর পরও মাশরাফি বিন মুর্তজা মাঠে নামলে যে কিছু করে ফেলতে পারেন, তার আরেকটি প্রমাণ মিলল আজ। ১৭ রানে ৫ উইকেট মাশরাফির, ৮০ রানে অলআউট মোহামেডান
টেস্ট খেলা থাকলেও দল যদি এটা সামলাতে পারে, তাহলে গেলে তো সমস্যা নেই। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তো কোনো ক্রিকেটারকে আটকাচ্ছে না। আমরা শুধু শুধু আবেগী হয়ে তো লাভ নেই।মাশরাফি বিন মুর্তজা
অফিশিয়ালি দ্বিতীয় সেশন চলতে পারে ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত। তবে ম্যাচে ফল আনতে এ সিরিজে খেলার সময় বাড়ানো যাবে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। চট্টগ্রামে একেবারেই কমে এসেছে বৃষ্টি, মাঠ পর্যবেক্ষণে এসেছেন দুই আম্পায়ার মাসুদুর রহমান ও গাজী সোহেল। কিউরেটরদের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য আবার ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন তাঁরা।
বিকাল ৩-৩৭ মিনিটের দিকে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়েছিল খেলা। অবশেষে সরানো হচ্ছে কাভার!
কাভার তুলে ফেলা হয়েছিল, গা-গরমের জন্য মাঠেও নেমেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। এরই মধ্যে জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের পিচ আবার ঢেকে ফেলা হলো কাভারে।
কাভার সরলো আরেকবার, আবার মাঠে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা।
৫-৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। প্রথম টি-টোয়েন্টি জিততে আয়ারল্যান্ডের পরিবর্তিত লক্ষ্য ৮ ওভারে ১০৪ রান। মানে ওভারপ্রতি প্রয়োজন ১৩ রান।
নাসুম আহমেদকে প্রথম বলেই ডাউন দা গ্রাউন্ডে গিয়ে চার মেরেছেন পল স্টার্লিং। এ ওভারে সুইপ করে মেরেছেন আরও দুটি চার। শেষ বলে চার মেরেছেন রস এডেয়ারও। পরিবর্তিত প্লেয়িং কন্ডিশনে প্রথম ২ ওভার পাওয়ারপ্লে, এর প্রথম ওভারে আয়ারল্যান্ড তুলল ১৮ রান।
লেগ সাইডের লাইনে বল করে গেছেন মোস্তাফিজ, রস এডেয়ার সুবিধা আদায় করেছেন সে সবের। দুটি চার এসেছে ব্যাট থেকে, একটি লেগ বাই থেকে। মোস্তাফিজের ওভারে উঠেছে ১৪ রান, পাওয়ারপ্লের ২ ওভারে ৩২ রান তুলে ফেলেছে আয়ারল্যান্ড।
টানা তিন ডটের পর হাসান মাহমুদের ইয়র্কার—জবাব দিতে পারেননি রস এডেয়ার। প্রথম তিনটি বলই ছিল স্লোয়ার, এডেয়ার মিস করে গেছেন সেগুলো। মিস করে গেছেন ইয়র্কারও। আয়ারল্যান্ড প্রথম উইকেট হারিয়েছে, তবে বাংলাদেশ পেয়েছে মূল্যবান চারটি ডট বলও।
এডেয়ার ফেরার পর লরকান টাকার একটি সিঙ্গেল নিয়েছিলেন, স্টার্লিং এরপর আউটসাইড-এজে পেয়েছেন চার। হাসানের প্রথম ওভারে এসেছে ৫ রান।
হাসানের পর তাসকিন আহমেদ—স্কেলমাপা ইয়র্কার দুজনেরই! এডেয়ারের পর এবার বোল্ড লরকান টাকার। নিজের প্রথম বলেই সফল তাসকিন।
তাসকিনের চতুর্থ বল, এবার বোল্ড পল স্টার্লিং। আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড আইরিশ অধিনায়ক। এবং তাসকিন উইকেট পেয়েছেন পরের বলেও! ফুললেংথ থেকে তুলে মারতে গিয়ে কাভারে ধরা পড়েছেন জর্জ ডকরেল। হ্যাটট্রিক বলটা লং অফের ওপর দিয়ে তুলে চার মেরেছেন গ্যারেথ ডিলানি। প্রথম ১২ বলে ৩২ রান তোলা আয়ারল্যান্ড পরের ১২ বলে ১২ রান তুলতে হারিয়েছে ৪ উইকেট।
মাঝে হাসানের ওভারে ১৬ রান তুলে একটু আশা পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। তবে সাকিব ও মোস্তাফিজের ২ ওভারে এসেছে মাত্র ১২ রান, আইরিশরা ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গেছে সেখানেই। শেষ ওভারে এসে তাসকিন ফিরিয়েছেন হ্যারি টেক্টরকে, ফাইন লেগে ভালো ক্যাচ ধরেছেন মিরাজ।
প্রথম ২ ওভারে ৩২ রান, আয়ারল্যান্ড শুরুটা করেছিল দারুণ। তবে হাসান মাহমুদের পর তাসকিন আহমেদের তোপ আর সামাল দিতে পারেনি তারা। ৮ ওভারে ১০৪ রানের লক্ষ্য বরাবরই বাঁচামরার লড়াই—আয়ারল্যান্ড সেখানে বাঁচেনি। ৮ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান তুলতেই থেমেছে আয়ারল্যান্ড। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ডিএলএস পদ্ধতিতে ২২ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।