শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৫৩১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫ ওভারে ৫৫/১
১৫৯ ওভার ফিল্ডিং করার পর ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। অবশ্য কোনো উইকেট না হারিয়ে দ্বিতীয় দিনটা শেষ করতে পারলে আরও বেশি খুশি হতো নাজমুল হোসেনের দল। সেটা হয়নি লাহিরু কুমারার দারুণ এক বলে মাহমুদুল হাসান বোল্ড হয়ে গেলে।
আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত মাহমুদুলকে বেশ স্বছন্দই লাগছিল। অন্য প্রান্তে জাকির অবশ্য একটা এলবিডব্লুর আবেদনের পর বেঁচেছেন আম্পায়ার্স কলে। নাইটওয়াচম্যান তাইজুল দিনের শেষদিকে খেলেছেন ৯টা বল, রান করেননি অবশ্য। তবে তাঁর মূল দায়িত্ব ছিল উইকেটটা রক্ষা করা, সেটা পেরেছেন। শ্রীলঙ্কার করা ৫৩১ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনটা শেষ করে ১ উইকেটে ৫৫ রানে। দিনের শেষদিকে এই ১৫ ওভারের ব্যাটিং আগামীকাল নিশ্চয়ই ভালো আত্মবিশ্বাস দেবে বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রাম শহরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে সকালে। এখন আকাশজুড়ে কালো মেঘ। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনে গতকাল শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩১৪ রান। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া প্রথম আলোর প্রতিবেদক মোহাম্মদ জুবাইর জানিয়েছেন, এখন যে পরিস্থিতি, খেলা শুরু হবে সময় মতোই।
চট্টগ্রামের আকাশে মেঘ আছে। তবে বৃষ্টি নেই বলে ঠিক সময়েই শুরু হয়েছে টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা। দিনের প্রথম ওভারটি করছেন বাংলাদেশের পেসার খালেদ আহমেদ। তিনি বল করছেন তিনটি স্লিপ নিয়ে। প্রথম বলেই দিনেশ চান্ডিমালের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল গিয়েছিল প্রথম স্লিপে। কিন্তু সেটি ক্যারি করেনি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আকাশ সকালে মেঘলা ছিল। অনেকেই হয়তো আশা করেছিলেন, মেঘলা এই কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার এক–দুইটা উইকেট তুলে নিতে পারবে বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু সেটা হয়নি। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় কোনো উইকেট হারায়নি শ্রীলঙ্কা। এই সময়ে তারা তুলেছে ৫৫ রান। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ৩৬৯।
বাংলাদেশকে দিনের প্রথম উইকেট এনে দিলেন সাকিব আল হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরে তাঁর ফুল লেংথ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছেন লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১০৪ বলে ৫৯ রান করা দিনেশ চান্ডিমাল। ৫ উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান ৩৭৫।
সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আবহাওয়া মেঘলা। শহরের কয়েক জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যেই দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হয়। কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে সকালের সেশনে ব্রেক থ্রু এনে দেবেন পেসাররা, এমনই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু তা হয়নি। দিনের প্রথম উইকেটটা এসেছে সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে।
ফিফটি করা দিনেশ চান্ডিমালকে ৫৯ রানে থামিয়েছেন তিনি। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য এই এক উইকেটই। ফিফটি করে শ্রীলঙ্কার রান চার শ’র ঘরে নিয়ে গেছেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৪ উইকেটে ৩১৪ রানে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা প্রথম সেশন শেষে করেছে ৫ উইকেটে ৪১১ রান নিয়ে। ধনাঞ্জয়া খেলছেন ৭০ রানে, ১৭ রানে অপরাজিত আছেন কামিন্দু মেন্ডিস।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশ দলের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ ভালো বোলিং করলেও উইকেট পাননি। দুইবার এজ পেলেও তা পড়েছে স্লিপ ফিল্ডারের সামনে। এরপর ১০৬তম ওভারে সাকিবের বলে কট বিহাইন্ড হন চান্ডিমাল। আউট হওয়ার আগে ১০৪ বলে ৫৯ রান করেছেন তিনি। উইকেট হারালেও রানের গতি ঠিক রাখেন ধনাঞ্জয়া ও মেন্ডিস।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতি থেকে ফিরে বাংলাদেশকে উইকেট উপহার দিলেন পেসার খালেদ আহমেদ। এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে তিনি ফিরিয়েছেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লঙ্কান অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ১১১ বলে ৭০ রান করেছেন তিনি। বিরতিতে যাওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার রান যা ছিল, সেই ৪১১–ই আছে। ষষ্ঠ উইকেট হারিয়েছে তারা।
নিগাররা ৩ উইকেটে ৭৬ রান
এদিকে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ১৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৭৬ রান। অধিনায়ক নিগার সুলতানা ৩৯ বলে ৫ চারে ৩৫ রান নিয়ে উইকেটে আছেন। তাঁর সঙ্গী ফাহিমা খাতুনের রান ৫ বলে ৬।
ফিল্ডিংয়ের সমস্যা নিয়ে গতকাল প্রথম দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথাই হয়েছে। তবে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংয়ে কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ইনিংসের ১২১তম ওভারে খালেদের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন প্রবাত জয়াসুরিয়া। বাতাসে ভাসতে ভাসতে আসা সেই সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল। শুধু নাজমুল বললে ভুল হবে, আসলে স্লিপে দাঁড়ানো তিনজন মিলে মিস করেছেন ক্যাচটি। নাজমুলের হাত থেকে ছুটে যাওয়া বল লাফিয়ে যায় শাহাদাত হোসেনের কাছে। তাঁর হাত ছুঁয়ে বল যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো জাকির হাসানের কাছে, তিনিও ক্যাচটি নিতে পারেননি!
ক্যাচটি যখন ওঠে, জয়াসুরিয়ার রান ছিল ৬, শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে ৪১৯।
সাকিবের ঘূর্ণি সামলাতে না পেরে এলবিডব্লিও হয়ে ফিরেছেন প্রবাত জয়সুরিয়া। জয়সুরিয়া অবশ্য রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ৪৭৬ রানে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে ৭ উইকেট। এটি সাকিবের তৃতীয় উইকেট।
আরও একটি সেশনে শ্রীলঙ্কার দাপট। ৫ উইকেটে ৪১১ রানে প্রথম সেশন শেষ করা শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় সেশন শেষে রান করেছে ৭ উইকেটে ৪৭৬ রানে। সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসে শতক করা কামিন্দু মেন্ডিস চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, অপরাজিত আছেন ৫৪ রানে। তাঁর সঙ্গে আছেন বিশ্ব ফার্নান্ডো, তিনি এখনো কোনো রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের অর্জন দুই উইকেট।
প্রথম উইকেট এসেছে মধ্যাহ্ন বিরতির পরেই। খালেদ আহমেদের করা সেশনের প্রথম স্পেলে ফেরেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ১১৯তম ওভারে ভালো লেংথ থেকে ভেতরে আনা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। একই স্পেলে সদ্য ক্রিজে আসা প্রবাত জয়াসুরিয়াকেও আউট করার সুযোগ ছিল। খালেদের বলে স্লিপে ক্যাচও তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল, জাকির ও শাহাদাত মিলেও তা ধরতে পারেনি।
প্রবাত তখন খেলছিলেন ৬ রানে। ২৩ রানে আবার প্রভাতকে সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার তাইজুলের বলে ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে প্রবাতকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ততক্ষণে মেন্ডিস ও প্রবাত মিলে খেলে ফেলেন ১৪০ বল, রান যোগ করেন ৬৫। উইকেট পতনের পর আরও এক বোলার ফার্নান্ডোকে নিয়ে সেশনের বাকি সময়টা পার করেন মেন্ডিস।
বাংলাদেশ দলে ‘দুর্লভ’ হয়ে পড়া ভালো একটি ফিল্ডিংই দেখা গেল। অধিনায়ক নাজমুলের সরাসরি থ্রোয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কার বিশ্ব ফার্নান্ডো। ২৬ বলে ১১ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার রান ৮ উইকেটে ৪৯৭।
দুই দিন মিলিয়ে ৪৫ ওভারের বেশি বল করে অবশেষে উইকেটের দেখা পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। লাহিরু কুমারকে বোল্ড করেছেন তিনি। ৯ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার রান ৫১৮।
তাইজুলের ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে মরিয়া ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। পরের ওভারে যেন আবার স্ট্রাইকে ফেরা যায়। আর সেই ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে নন– স্ট্রাইকিংয়ে রান আউট আসিতা ফার্নান্দো। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থেমেছে ১৫৯ ওভারে ৫৩১ রানে। কামিন্দু অপরাজিত থাকলেন ৯২ রান করে।
১১ ঘণ্টা আর ১৫৯ ওভার—শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংটা হলো এমনই দীর্ঘ। রানের হিসাবে ৫৩১। প্রথম দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৪ উইকেটে ৩১৪। আর শেষ ছয় উইকেটে যোগ হয়েছে বাকি ২১৭ রান। পুরো ইনিংসে শ্রীলঙ্কার একজনও তিন অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেননি। যদিও ফিফটি করেছেন ৬ জন। সর্বোচ্চ ৯৩ রান কুশল মেন্ডিসের, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯২ কামিন্দু মেন্ডিসের। বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং সাকিব আল হাসানের ১১০ রানে ৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কার তিনটি উইকেট গেছে রানআউটে। বাকি ৪টির দুটি নিয়েছেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ, একটি করে খালেদ আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩২ ওভার হাত ঘুরিয়ে উইকেটশূন্য তাইজুল ইসলাম।
শেষ সেশনে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়েছিল বাংলাদেশের। মাহমুদুল হাসান ও জাকির হাসান মিলে এগোচ্ছিলেন ভালোভাবেই। এর মধ্যেই অবশ্য সপ্তম ওভারে জাকিরের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদন করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আম্পায়ার্স করে বেঁচে যান বাংলাদেশের ওপেনার।
অবশেষে জুটিটা ভাঙে ১৩তম ওভারে। ভেতরের দিকে আসা লাহিরু কুমারার একটা বলে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল। আউট হয়েছেন ৪২ বলে ৩ চারে ২১ রান করে।
নাইটওয়াচম্যান নেমেছেন তাইজুল ইসলাম।