বাংলাদেশ দল আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে। দল কেমন হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমূল আবেদীন।
বিশ্বকাপ দল ঘোষণার ঠিক আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচকদের জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলের বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব কম। যে কারণে এই দলের টপ অর্ডার নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকছে। কারণ, জিম্বাবুয়ে সিরিজে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি রান করেনি। নির্বাচকেরা লিটন দাসকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ফর্মে না থাকলেও লিটনকে রাখায় আমি তেমন কোনো ভুল খুঁজে পাচ্ছি না। নির্বাচকেরা আশা করছেন, সে ফর্মে ফিরবে। এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি।
সাইফউদ্দিনের ব্যাপারটাও বলতে হবে। দলে ভারসাম্য রাখার জন্য তার মতো খেলোয়াড় থাকা দরকার ছিল। সাইফউদ্দিনের কাজটা আরেকজন করতে পারবে না। তার বোলিং সামর্থ্যটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচের জন্য। কিন্তু দুই-তিনটি ম্যাচ দেখে তাকে বিচার করাটা হয়তো ঠিক হয়নি। নির্বাচকেরা আরেকটু উদার হতে পারতেন, আরেকটু সাহস দেখাতে পারতেন। মিরাজকেও মিস করব। তার অভিজ্ঞতা তো আছেই, সঙ্গে বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং এবং ইতিবাচক মানসিকতাটাও দলের জন্য জরুরি ছিল।
তাসকিনকে দলে রাখার বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে। সে দলের সঙ্গে আছে, যদি ফিট হয় তাহলে খেলবে। যদি না হয়, তাহলে যে বিকল্প, সে–ও দলের সঙ্গে আছে। বিষয়টা একেবারেই পরিষ্কার। প্রত্যেকে জানে, কী হলে কী হবে। কোনো লুকোচুরি নেই। এ ধরনের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শেষ কথা, যে দলটা দেওয়া হয়েছে, সেটাই আমাদের জাতীয় দল, আমরা চাইব এই দলটাই যেন ভালো করে।
—নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ।
বিশ্বকাপ দলে কোনো চমক আছে, এটা বলা যাবে না। দলে জায়গা করে নেওয়ার প্রতিযোগিতাও কম ছিল। ভারতে যেমন খুব অল্প পার্থক্যের কারণে অনেক ভালো খেলোয়াড় সেরা ১৫-তে জায়গা করে নিতে পারেনি, অস্ট্রেলিয়াতেও তা-ই। বাংলাদেশে তা হয়নি। প্রায় যারা জানাশোনা খেলোয়াড়, তাদের মধ্য থেকেই দল গড়া হয়েছে।
শুনতে খারাপ শোনাবে, এই দলে অনেকেই আছে, যারা পারফর্ম করছে না। এটাই বাস্তবতা, পারফর্ম না করেও অনেকে বিশ্বকাপে যাচ্ছে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র মাহমুদউল্লাহ ছাড়া কেউই রানে নেই। জিম্বাবুয়ে সিরিজে বোলিং ও ফিল্ডিংও ভালো ছিল না।
সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ, এ দুজনকে কেন নেওয়া হলো না, সে আলোচনা হতে পারে। তবে সেটাও যে খুব জোর গলায় বলা যাবে, তা নয়। তারা খুব ভালো খেলেও দলে নেই, এটাও বলা যাবে না। এই দলটাকে যদি বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে হয়, তাহলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
বিশ্বকাপ দলে তাসকিনকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে। তার জন্য শুভকামনা। সে অনেক দিন জাতীয় দলে খেলছে। দলে সহ-অধিনায়ক হওয়ার মতো আর কেউ নেই, তাই তাসকিনকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অধিনায়ক বা সহ-অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়নি। এটা নির্বাচক কমিটির দায় নয়। কারণ, তারা মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছে। দলের নেতৃত্বে আসার জন্য একজন খেলোয়াড়কে যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটা হয়নি। তাসকিন এর আগে দুর্দান্ত ঢাকার অধিনায়কত্ব করেছে, সেই দলটা মাত্র একটা ম্যাচ জিতেছে। কিন্তু সে–ই বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক। এ ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতা থাকলে আরও ভালো হতো।
—খালেদ মাসুদ, সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।