গতকাল রোহিত শর্মা ও শুবমান গিলের ঝোড়ো ফিফটির ইনিংসকে এখন মনে হতে পারে ‘ট্রেলার’। বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল যে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ দেখালেন ব্লকবাস্টার এক সিনেমা!
৩ ও ৪ নম্বর ব্যাটসম্যানের অপরাজিত সেঞ্চুরি, দুজনের অবিচ্ছিন্ন ২৩৩ রানের জুটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ড ২ উইকেটে ৩৫৬ রানের স্কোর গড়েছে ভারত। এ ম্যাচ জিততে গেলে নিজেদের রেকর্ডই এখন ভাঙতে হবে বাবর আজমের দলকে। এর আগে সর্বোচ্চ ৩৪৯ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার ইতিহাস আছে তাদের, ভারতের বিপক্ষে সেটি ৩২২ রানের।
গতকাল বৃষ্টির কারণে যখন খেলা শেষ হয়ে যায়, পাকিস্তান দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরেছিল। আজ রিজার্ভ ডেতেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি, শেষ পর্যন্ত খেলা শুরু হয় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর। তবে তাতেও ওভার কাটা যায়নি কোনো। খেলা শুরুর আগেই অবশ্য ধাক্কা খায় পাকিস্তান। মাংসপেশির চোটের কারণে সতর্কতা হিসেবে এ ম্যাচে আর বোলিং করানো হয়নি হারিস রউফকে, যিনি গতকাল করেছিলেন ৫ ওভার। তাঁর জায়গায় বোলিং করা ইফতিখার আহমেদের প্রথম ৫ ওভারেই আসে ৪৬ রান। ম্যাচের মাঝেও ধাক্কা খায় পাকিস্তান, ৪৯তম ওভারের প্রথম ২ বল করে উঠে যান নাসিম শাহও।
পাকিস্তানের নিয়মিত বোলাররা যে কোহলি ও রাহুলের ঝড় থেকে রক্ষা পেয়েছেন, তা নয়। শাহিন শাহ আফ্রিদিই ১০ ওভারে দেন ৭৯ রান। তিনি অবশ্য কোহলির উইকেট পেতে পারতেন। তাঁর স্লোয়ারে ধোঁকা খেয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলেছিলেন কোহলি, কিন্তু সে ক্যাচ বুঝতেই পারেননি নাসিম। কোহলির রান ছিল তখন ৭৬। সে সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুল দিয়েছে পাকিস্তান, সেটি বলাই যায়।
গতকাল দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর ইনিংস পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হয়েছিল কোহলি ও রাহুলকে। শুরুতে দুজনই সতর্ক ছিলেন। ১৬ বলে ৮ রানে ক্রিজে ছিলেন কোহলি, অন্য প্রান্তে ২৮ বলে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন রাহুল। আজও শুরুতে সময় নিয়েছেন দুজনই। তবে পরে গতি বাড়িয়েছেন।
রাহুল ফিফটিতে যান ৬০ বলে, তবে পরের ফিফটি আসে ৪০ বলে। ১০০তম বলে ডাবলস নিয়ে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। গত মার্চে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রাহুল হয়তো এ ম্যাচে খেলার সুযোগই পেতেন না, এ পজিশনে খেলা শ্রেয়াস আইয়ারের চোট সুযোগ করে দেয় তাঁকে। রাহুল সেটি কাজে লাগালেন দারুণভাবেই। বিশ্বকাপের আগে ৪ নম্বরে ভারত বাড়তি স্বস্তিও পাবে রাহুলের এ ইনিংসে।
কোহলির জন্য এ ইনিংস মাইলফলকের। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৭তম সেঞ্চুরি পেলেন তিনি, শচীন টেন্ডুলকারের (৪৯) সঙ্গে সেঞ্চুরিসংখ্যায় দূরত্বটা কমিয়ে আনলেন আরও। এ ইনিংসের পথে অবশ্য টেন্ডুলকারকে একটা জায়গায় ছাড়িয়ে গেছেন কোহলি। আজ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্রুততম ব্যক্তি হিসেবে ১৩ হাজার রান পূর্ণ করেছেন তিনি। কোহলির লাগল মাত্র ২৬৭ ইনিংস। এত দিন এ রেকর্ড যাঁর ছিল, সেই টেন্ডুলকারের লেগেছিল ৩২১ ইনিংস।
রাহুলের মতো কোহলিও ফিফটির পর গতি বাড়িয়েছেন, তুলনামূলক আরও বেশি। ফিফটি করতে কোহলির লেগেছিল ৫৫ বল, সেঞ্চুরিতে যান মাত্র ৮৪ বলে। কলম্বোর এ মাঠে কোহলির এটি টানা চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এক মাঠে টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে কোহলি ছাড়া শুধু হাশিম আমলার (সেঞ্চুরিয়নে)।
ভারতের ৩ ও ৪ নম্বর ব্যাটসম্যান—এক ম্যাচে দুজনেরই সেঞ্চুরি পাওয়ার এটি তৃতীয় ঘটনা। আর তাদের ইতিহাসে ভারতের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই অন্তত ফিফটি করলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ঘটেছিল এমন। সেবারও প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তানই।
গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২৬৬ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। এবার সেই বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে নিজেদের ব্যাটিং শক্তিমত্তা দেখাল তারা। যার প্রতীকী হয়ে থাকল ফাহিম আশরাফের করা শেষ ওভার। যার শেষ ৩ বলেই আসে ১৫ রান। প্রথমে রিভার্স ফ্লিকের মতো শট, এরপর ফ্রি হিটে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে চার, আর শেষে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে গিয়ে ছক্কা। পুরো ইনিংসেই কোহলি খেলেছেন দুর্দান্ত সব শট, রাহুলও কম যাননি। আর তাতেই পাকিস্তানকে পাহাড় ডিঙানোর কঠিন কাজটি উপহার দিতে পেরেছে ভারত।