অনুশীলনে আফিফ হোসেন
অনুশীলনে আফিফ হোসেন

‘আফিফ পাওয়ার হিটার নয়, পাঞ্চার’

গতবার অধুনা বিলুপ্ত সিলেট সানরাইজার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে বিপিএলে এসেছিলেন জুলিয়ান উড। এবার এসেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রধান কোচ হয়েই। ফলে কাছ থেকেই দেখছেন বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যাটসম্যানকে। পাওয়ার হিটার নিয়ে প্রায়ই হাপিত্যেশ করা বাংলাদেশ দলে আফিফ হোসেনদের মতো ব্যাটসম্যানদের উচিত নিজের শক্তিমত্তার জায়গা থেকেই খেলা, আজ এমন বলেছেন উড।

বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলে ‘পাওয়ার হিটার’-এর অভাব পুরোনো কথাই। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জাতীয় দলের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে কাজ করেছিলেন সাবেক প্রোটিয়া অলরাউন্ডার অ্যালবি মরকেলও। জাতীয় দলে পাকাপাকি কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এক সময় এমন আলোচনাও উঠেছিল।

আফিফ এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি দলে খেলেছেন মূলত মিডল অর্ডারের পর থেকে ফিনিশারের ভূমিকাতেই। চট্টগ্রামের হয়ে এবার প্রথম ম্যাচে পাঁচে এলেও সর্বশেষ ম্যাচে অবশ্য তিনে এসেছিলেন ব্যাটিং করতে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে এখন পর্যন্ত আফিফকে বেশ আলাদা চোখেই দেখা হয় বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। তবে আফিফ মোটেও পাওয়ার হিটার ধরনের কোনো ব্যাটসম্যান নন, আজ সেটি আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন উড, ‘আফিফ একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার। তার শক্তির জায়গায় থেকেই তার খেলা উচিত। পাওয়ার হিটিংয়ের বিষয়টি ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। সে পাওয়ার হিটার নয়; সে মূলত একজন পাঞ্চার।’

এবার বিপিএলে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান উসমান খানের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে উড এরপর যোগ করেছেন, ‘আপনার কাছে হিটিং পাওয়ার–সমৃদ্ধ ক্রিকেটার যেমন উসমান খান থাকতে পারে; আবার আফিফের মধ্যে আছে স্কিল ও টাচসহ পাঞ্চিং পাওয়ার। উসমানের তুলনায় আফিফ বেশি স্কিলফুল। উসমান হলো পাওয়ারফুল। আমি বিশ্বাস করি আমাদের পাওয়ার ও স্কিলের দারুণ ভারসাম্য রয়েছে।’

এবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন জুলিয়ান উড

আফিফদের শরীরের যে গঠন, তাতে শুধুই শক্তি দিয়ে বড় শট আসবে না, মনে করিয়ে দিয়েছেন উড, ‘গত বছর সিলেটে বিজয়ের (এনামুল হক) সঙ্গে অনেক কাজ করেছিলাম। আফিফের দিকে দেখেন, তারা (শারীরিক দিক দিয়ে) বড় নয়। তারা ছন্দ ও টাইমিংয়ের ওপর নির্ভর করে। তারাও বল জোরে মারতে পারে, কিন্তু মুভমেন্টে তাদের ছন্দ ও টাইমিং দরকার হয়। বড় ক্রিকেটাররা সেখানে মাংসপেশি ব্যবহার করে। তারা পারবে না, যদি করতে যায়, কাজ হবে না। এটা আসলে বুঝতে পারার ব্যাপার, কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়। যখন এটা হবে তাদের, আমি কিছু ট্রেনিং ও ড্রিলও করাচ্ছি। কিন্তু এটা শুধুই অনুশীলনের একটা ধরন। কিন্তু বুঝতে হবে, কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়।’

ডাচ ব্যাটসম্যান ম্যাক্স ও'ডাউডের সঙ্গে উসমান খান (বাঁয়ে), আজ চট্টগ্রামের অনুশীলনে

উসমান সেঞ্চুরি করেছেন খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ১৭৮ রান তাড়া করতে নেমে। প্রথম ম্যাচে ছয়ে এলেও সেদিন তাঁকে ওপেন করতে পাঠায় চট্টগ্রাম। ৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২৭ বছর বয়সী পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের এটিই প্রথম সেঞ্চুরি। উসমানের মতো আরও চমক চট্টগ্রাম দলে আছে, যাঁদের জন্য বিপিএল দারুণ মঞ্চ হতে পারে বলে মনে করেন উড, ‘আমার মতে, স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত ক্রিকেটারদের জন্য এটি (বিপিএল) দারুণ মঞ্চ। যেমন উসমান খানকে তেমন কেউই চিনত না। সে এসেছে এবং সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। সে যেভাবে খেলেছে, তা রোমাঞ্চকর। তবে আমি বলছি না যে প্রতিদিনই সে এমনটা করবে। কারণ, এভাবে খেলায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তবে বেশির ভাগ দিন যদি সে সফল হয় তাহলে তা প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরাবে, দলকে জয়ের অবস্থায় নিয়ে যাবে; যেমনটা গত ম্যাচে হয়েছে। আমাদের আরও খেলোয়াড় রয়েছে, যারা এখনো ব্যাটিং করেনি।’