আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৬৯ রান করা সৌম্য এবার বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন
আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৬৯ রান করা সৌম্য এবার বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন

নেপিয়ারে বাংলাদেশ পেসারদের স্বপ্নের সকাল

কন্ডিশন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ দল সে সুবিধা কাজে লাগাতে পারছে না। এমন উদাহরণ বাংলাদেশ ক্রিকেটে কম নেই। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে আজ তা হয়নি। গতিময় বাউন্সি উইকেট পেয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের পেসাররা।

নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডার আজ ভেঙেছেন তানজিম হাসান। শরীফুল ইসলাম দ্বিতীয় স্পেলে আগুনে বোলিং করে উইকেট শিকারে যোগ দিয়েছেন। দুই তরুণ পেসারের সৌজন্যে ২৫ ওভারের আগেই ৬ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। বাকি কাজটা করেছেন সৌম্য সরকার। নিচের দিকে তিনি ৩ উইকেট নিলে ৩১.৪ ওভারে ৯৮ রানেই থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস, ২০০৭ সালের পর ঘরের মাঠে কিউইদের যেটি সর্বনিম্ন স্কোর। নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটই নিলেন বাংলাদেশের পেসাররা।

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হাসান তাঁর মনোভাবটা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন টসের সময়। উইকেটে ঘাস আছে। আছে বাউন্সও। আর সকালবেলায় কন্ডিশনে সুইং তো থাকবেই। বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে চায়।

সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল, তা বোঝা যাচ্ছিল ইনিংসের শুরু থেকেই। শরীফুল ও তানজিমের প্রথম ওভারের কিছু বল মুশফিক ধরেছেন মাথা বরাবর। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই তানজিমের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র (১২ বলে ৮)। নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে তখন ১৬ রান।

উইকেট পতন তো আছেই। সঙ্গে দুই প্রান্তের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানও আসছিল না কিউইদের। ইনিংসের অষ্টম ওভারে তার ফল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সেটাও তানজিমের হাত ধরে। ক্রস সিমে করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে টেনে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন তিনে নামা হেনরি নিকোলস। ১২ বল খেলে তিনি রান করেছেন মাত্র ১।

ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন তানজিম। তিনিও নিয়েছেন ৩ উইকেট

নতুন বলে জোড়া ধাক্কাটা অবশ্য ধিরস্থির ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াং ধরে খেলে পাওয়ার প্লের (২৭ রান) সময়টা পার করেন। প্রথম স্পেলে এলোমেলো বোলিং করা শরীফুলকে ড্রিংকস ব্রেকের পর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরিয়ে আনেন নাজমুল, ব্রেকথ্রু আসে তাতেই।

লাইন-লেংথের ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে থাকা শরীফুলই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে অভিজ্ঞ ল্যাথামের স্টাম্প ভাঙেন। ১৭তম ওভারে অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ৩৪ বলে ২১ রান ল্যাথামের ইনিংস থামে তাতে।

পরের ওভারে এসে ফর্মে থাকা ইয়াংয়ের উইকেট নেন শরীফুল। আবারো ফুল লেংথ। এবার অ্যাঙ্গেল করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন ৪৩ বলে ২৬ রান করা ইয়াং। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ৬১। কিছুক্ষণ পরই আরও একবার শরীফুলের আঘাত। সদ্য ক্রিজে আসা মার্ক চ্যাপম্যানকে (২) ওবল সিমে করা বলে বোল্ড করেন তিনি।

ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া সেই স্পেলেই শেষ নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার। সেখান থেকে কিউইদের আর ঘুরে দাঁড়াতে দেননি তানজিম। নতুন বলে দাপুটে বোলিং করা এ পেসারকে ফেরান নাজমুল, ২৩তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেলকেও ড্রেসিংরুমের পথ দেখান তিনি। ইয়াংয়ের মতো ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ব্লান্ডেলও (৪)।

নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৬ উইকেটে ৭০। কিউইদের নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা রানটাকে তিন অংকে নিতে পারেননি। তানজিম ও শরীফুলের পর সৌম্যর মিডিয়াম পেসে আউট হয়েছেন জশ ক্লার্কসন, অ্যাডাম মিলনে ও আদি অশোক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইলিয়াম ও’রর্ককে বোল্ড করে উইকেট শিকারিদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমানও।

মার্ক চ্যাপম্যানকে ফেরানোর পর শরীফুলের উচ্ছ্বাস

পেসারদের এমন বোলিং পারফরম্যান্সে দলের মূল স্পিনার মিরাজকে করতে হয় মাত্র ১ ওভার। তানজিম ৭ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সমান ওভারে শরীফুল তাঁর ৩ উইকেট নিয়েছেন ২২ রান দিয়ে। ৬ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন সৌম্য।

আর তাতেই নিজেদের ইতিহাসে নবম বার ১০০-এর নিচে অলআউট নিউজিল্যান্ড, যেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে ১৬২ রানে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ।