দিল্লিতে কাল ম্যাথুসের বিতর্কিত আউটের পর বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ কয়েকবার এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে
দিল্লিতে কাল ম্যাথুসের বিতর্কিত আউটের পর বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ কয়েকবার এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে

ক্রিকেটীয় চেতনাকে ‘দুর্বল যুক্তি’ বললেন হার্শা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কাল ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাথুস নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম বল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে পারেননি। সুযোগ পেয়ে আম্পায়ারদের কাছে আউটের আবেদন জানিয়ে সেটারই সদ্ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

ম্যাথুসের ‘টাইমড আউট’ ঘিরে মাঠে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, মাঠের বাইরেও তৈরি হয় বিতর্ক। কাল শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষে চতুর্থ আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক এর ব্যাখ্যা দিলেও বিতর্কের রেশ এখনো থামেনি। ‘টাইমড আউটের’ ঘটনায় কেউ সাকিবের পক্ষ নিচ্ছেন। কেউবা আবার ক্রিকেটীয় চেতনার কথা বলে ম্যাথুসের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তবে ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের মতে, ক্রিকেটীয় চেতনা যুক্তি হিসেবে দুর্বল।

আজ সকালে হার্শা ‘টাইমড আউট’ নিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। ‘ম্যাথুস-সাকিব ইস্যুতে আমার ভাবনা’ শিরোনামে শুরুতে তিনি লিখেছেন, ‘আপনাকে আম্পায়ারদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। তাঁরা যদি বলেন যে দুই মিনিট অতিবাহিত হয়েছে, তাহলে মেনে নিতে হবে। কারণ, তাঁরা অনেক অভিজ্ঞ এবং খুব ভালো আম্পায়ার। তাঁদের এ ধরনের ভুল করার সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয়ত, আইনের অজ্ঞতা থাকলে আত্মপক্ষ সমর্থন করা যায় না। যদি আইন থাকে এবং আপনি তা লঙ্ঘন করেন, তাহলে আপনি নিজেকে সমর্থন জানানোর মতো অবস্থায় নেই।’

ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে

হার্শা মনে করেন, আবেদনের সিদ্ধান্ত একান্তই সাকিবের। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানোর অধিকার মাঠের বাইরের কারও নেই, ‘(টাইমড আউটের) আবেদন করার অধিকার সাকিবের ছিল। তার আবেদন জানানো উচিত ছিল কি ছিল না, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নয়। এটা তার সিদ্ধান্ত, তিনি এভাবেই খেলতে চান।’

টাইমড আউট আর মানকাডিংকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলা নিয়ে হার্শার ভাষ্য, ‘নন স্ট্রাইকারের প্রান্ত থেকে অনেক সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে এই ঘটনা একেবারে আলাদা। সেখানে ব্যাটসম্যান অন্যায্য সুবিধা চাইছেন বা পাচ্ছেন। তাই সম্ভব হলে বোলারকে অবশ্যই রানআউট করতে হবে। কিন্তু এখানে ম্যাথুস কোনো সুবিধা চাচ্ছিলেন না বা পাচ্ছিলেন না। ব্যাটসম্যানরা নিয়মিতভাবেই বোলার বা ফিল্ডারের হাতে বল তুলে দেন এবং কেউ আবেদন করেন না। যদিও সচেতন ব্যাটসম্যানরা জিজ্ঞেস করেন যে, তারা এটা করতে পারেন কিনা। এ ক্ষেত্রেও ম্যাথুস যদি জিজ্ঞেস করে নিতেন, তিনি তার হেলমেট বদলাতে পারে কিনা, আমি নিশ্চিত (বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে টাইমড আউটের) কোনো আবেদন হতো না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটা (ম্যাথুসের আউট) দুর্ভাগ্যজনক। আমি সপ্তাহের প্রতিদিনই নন-স্ট্রাইকারকে আউট করব। কিন্তু এর (টাইমড আউটের) জন্য আবেদন করব না।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে টাইমড আউট হওয়ার পর ক্ষুব্ধ ম্যাথুস

ম্যাথুসের আউট নিয়ে ক্রিকেটীয় চেতনার যে প্রসঙ্গ সামনে আনা হচ্ছে, এর সঙ্গেও একমত নন হার্শা, ‘ক্রিকেটীয় চেতনার বিষয়টি ছেড়ে দিন। এটি একটি দুর্বল যুক্তি। যারা অজ্ঞ বা ভুল করে, তারা প্রায়ই এই যুক্তি তুলে ধরে। আইন আছে এবং আপনি আইনের মধ্যে থেকেই খেলছেন। তা ছাড়া কেউ কীভাবে খেলবে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ম্যাথুস এবং শ্রীলঙ্কার সমর্থকরা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু খেলার নিয়ম অনুযায়ী তিনি আউট ছিলেন।’

ভারতের সাবেক পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ গতকালের ঘটনাকে সাকিবের আরেকটি বিতর্কিত কাণ্ড হিসেবে দেখছেন, ‘শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় প্রতিভার কারণে সাকিব আল হাসানকে খেলাটির অন্যতম সেরা বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সে তো (জুয়াড়ি সম্পর্কে তথ্য গোপন করে) নিষিদ্ধ হয়েছে, আম্পায়ারদের ভয় দেখিয়েছে, নিজেকে খেলার চেয়ে বড় মনে করছে। তাই গতকাল সে যা করেছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

হরভজন সিং ‘টাইমড আউট’কে বেদনাদায়ক নিয়ম উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘খুব বাজে ব্যাপার। শুরুতে সাকিবের আবেদন এবং পরবর্তীতে আম্পায়ারদের অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আউট দেওয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন ছিল।’