আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়েছেন ইবাদত হোসেন
আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়েছেন ইবাদত হোসেন

‘ফ্ল্যাট উইকেটে’ ইবাদতদের বোলিংয়ে অখুশি নন ডোনাল্ড

হতাশাটা অ্যালান ডোনাল্ডের শরীরী ভাষায় ছিল স্পষ্ট। বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। আগের দিন ২৭ রানে আয়ারল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পর তৃতীয় দিনেই জয় তুলে নেওয়ার সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে তৃতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের রান ৮ উইকেটে ২৮৬!

হারের শঙ্কা নিয়ে দিন শুরু করা আইরিশরাই এখন মিরপুর টেস্টে এগিয়ে ১৩১ রানে। মিরপুর টেস্টে এমন দিনটা যে বাংলাদেশ দলের বোলাররা মনে রাখতে চাইবেন না, সেটি আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।

ডোনাল্ডও তাই বোলারদের সমালোচনা না করে প্রায় চার বছর পর টেস্ট খেলতে নামা আয়ারল্যান্ডকে কৃতিত্ব দিলেন। লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রশংসায় ভাসালেন আইরিশ ব্যাটসম্যানদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই কিংবদন্তি পেসার আজ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলছিলেন, ‘আয়ারল্যান্ডের প্রশংসা করতেই হয়। ওরা ধৈর্য দেখিয়েছে। দিনের শুরুতেই মনে হয়েছিল কাজটা সহজ হবে না। টেক্টর তার সঙ্গীকে (মুর) নিয়ে দারুণ খেলেছে। তাঁর ইনিংসের প্রশংসা করতেই হয়। সে যেভাবে আমাদের স্পিনারদের বিপক্ষে পা ব্যবহার করে খেলেছে, সেটা এককথায় অসাধারণ। পেস বোলারদের সে চ্যানেলে এসে খেলেছে। প্রতিআক্রমণ করেছে। টাকারের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েছে। টাকারের সেঞ্চুরির প্রশংসা করতেই হয়।’

ডোনাল্ড এরপর এরপর যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়েছে উইকেটে খুব একটা প্রাণ ছিল না। তবে আমাদের বোলাররা অনেক চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে তাইজুল ধারাবাহিক ছিল। চেষ্টা করে গেছে উইকেট থেকে কিছু আদায় করে নেওয়ার। বাকিরাও ভালো সাহায্য করেছে। আমরা হয়তো আরেকটু সৃষ্টিশীল হতে পারতাম। হয়তো অফ সাইডের জন্য ফিল্ড সাজিয়েছে, সেদিকে বল করতে পারতাম। তবে কৃতিত্ব আইরিশদের, ওরা আজ লড়াই কী জিনিস দেখিয়েছে।’

পেসারদের কাছে আরও সৃষ্টিশীল বোলিং প্রত্যাশা করেছিলেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড

ডোনাল্ডের অবশ্য পেসারদের কাছে আরও সৃষ্টিশীল বোলিং প্রত্যাশা করেছিলেন। বিশেষ করে লোরকান টাকার ১০৮ রানের ইনিংসের ৫৩ রানই করেছে লেগের দিকে।

অফ স্টাম্পের বাইরে আরেকটু আঁটসাঁট বোলিং করলে হয়তো গল্পটা ভিন্ন হতে পারত, ‘আমি বোলারদের পারফরম্যান্সে হতাশ নই। আমরা হয়তো লাঞ্চের পর ভিন্নভাবে ফিল্ডিং সাজাতে পারতাম। টাকার যখন ব্যাটিং করছিল, তখন হয়তো অফ সাইডে ফিল্ডার রেখে সেদিকে বল করতে পারতাম। লেগ সাইড থামিয়ে রাখতে পারতাম। তাহলে হয়তো কিছু আউটসাইড এজের সুযোগ সৃষ্টি হতো। তবে ছেলেদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না। আমার দেখা অন্যতম সেরা ফ্ল্যাট উইকেটের মধ্যে একটি এটি। পেসারদের জন্য তেমন কিছু নেই এই উইকেটে। বিশেষ করে উইকেটের মাঝখানে কিছুই নেই। কিছু বল তো কিপারের কাছেই যায়নি। কিন্তু এটাই টেস্ট ক্রিকেট। আর টেস্ট ক্রিকেট সহজ নয়।’

মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন লোরকান টাকারের উইকেট নিয়েছেন ইবাদত হোসেন

বাংলাদেশ মিরপুরের উইকেট পড়তে ভুল করেছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। ডোনাল্ড অবশ্য সে বিতর্কে গা ভাসালেন না। উল্টো নিজ দলের বোলারদের মানিয়ে নেওয়ার বার্তা দিলেন, ‘আমি এখানে এসে মাঠকর্মী বা কিউরেটরের সমালোচনা করব না। আমাদের এই উইকেটের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে, এখানেই সৃষ্টিশীল হতে হবে। আমি এখানে যতবারই আসি, ভাবি যে বল স্পিন করবে, সঙ্গে বাউন্সও থাকবে। এখন পর্যন্ত সেটা হয়নি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এই পরীক্ষাটা নেবেই। মানিয়ে নিয়ে এখানেই ভালো করার উপায় বের করতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। আজ উইকেটের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আয়ারল্যান্ড আজ নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করতেই পারে। আমি এখানে বসে এক দলের পক্ষে কথা বলব না। ওরা আজ যেভাবে খেলেছে, তাদের টুপি খোলা অভিনন্দন। ওরা এককথায় দুর্দান্ত খেলেছে, দারুণ লড়াই করেছে।’