সপ্তাহ তিনেক আগেই মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ২৭৭ রান তুলে আইপিএলের রেকর্ড গড়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। গতকাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে নিজেদের সেই রেকর্ড ভেঙে হায়দরাবাদ তুলেছে ৩ উইকেটে ২৮৭ রান। জবাবে বেঙ্গালুরু আবার তুলেছে ২৬২ রান। দুই দলের সম্মিলিত ৫৪৯ রান যেকোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইপিএলের ইমপ্যাক্ট-সাব বা ইমপ্যাক্ট-বদলির নিয়ম ভালোভাবে কাজে লাগানোর ফলেই এমন রানপ্রসবা মৌসুম দেখা যাচ্ছে। ১৭তম মৌসুমে আইপিএলের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন হায়দরাবাদের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড, গতকাল মাত্র ৩৯ বলেই তিন অঙ্কে পৌঁছান তিনি। হাইনরিখ ক্লাসেন পরে খেলেন ৩১ বলে ৬৭ রানের ইনিংস।
২৫ রানে জেতার পর ক্লাসেন বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় বড় একটা পরিবর্তন গড়ে দিচ্ছে। আমাদের খেলোয়াড়েরা ভালোভাবে বল মারছে, এটি দারুণ। আর আমাদের বোলাররা অন্তত ২৭০ রান ডিফেন্ড করতে পারে, এটিও ইতিবাচক দিক।’
গত বছর আইপিএলে ইমপ্যাক্ট-বদলির নিয়ম আনা হয়। এ নিয়ম অনুযায়ী, টসের পর থেকে যেকোনো সময়ে একজন খেলোয়াড়কে বদলাতে পারে দলগুলো। এমনিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বদলি ফিল্ডারের বাইরে কনকাশন (মাথায় আঘাতজনিত চোট) ছাড়া ম্যাচ শুরুর পর কোনো খেলোয়াড়কে বদলানো যায় না।
আইপিএলের এ নিয়মের কারণে দলগুলো কার্যত ১২ জন খেলোয়াড়কে ব্যবহার করতে পারছে। আগে ব্যাটিং করা দল একজন পাওয়ার হিটারকে খেলাতে পারছে, পরবর্তী সময়ে যাঁর জায়গায় আনা হয় একজন বোলারকে। গতকালও যেমন হেড শুধু ব্যাটিং করেছেন, তাঁর জায়গায় পরে ইমপ্যাক্ট-বদলি হিসেবে হায়দরাবাদ নামিয়েছে লেগ স্পিনার মায়াঙ্ক মারকান্দেকে।
আবার যে দল আগে ফিল্ডিং করছে, তারা পরের ইনিংসে একজন বোলারের জায়গায় আনছে একজন ব্যাটসম্যানকে। বেঙ্গালুরু কাল যশ দয়ালের জায়গায় নামিয়েছিল অনুজ রাওয়াতকে, যিনি অপরাজিত ছিলেন ১৪ বলে ২৫ রান করে।
ভারত নারী দলের সাবেক অধিনায়ক মিতালি রাজ স্টার স্পোর্টসের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের নিয়ম অবশ্যই কাজে দিচ্ছে।’
টসের সময়ই দলগুলোকে পাঁচজন বদলির তালিকা দিতে হয়। শুরুর একাদশে চারজনের কম বিদেশি না থাকলে বদলি খেলোয়াড়কে অবশ্যই স্থানীয় হতে হবে। শেষ কয়েক ওভারে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রেই এ নিয়মকে ব্যবহার করছে দলগুলো।
মিতালি বলছেন, ‘বড় স্কোর গড়তে দলগুলোকে এটি কীভাবে সহায়তা করছে, সেটি দেখেছি আমরা। বিশেষ করে পরে ব্যাটিং করা দলগুলোকে এটি সহায়তা করছে।’
হায়দরাবাদের দুটি রেকর্ড স্কোরের সঙ্গে এ মৌসুমে দেখা গেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ২৭২/৭-এর স্কোরও। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে সে স্কোর গড়েছিল তারা। সে ম্যাচে কলকাতার হয়ে ওপেন করা সুনীল নারাইন খেলেন ৩৯ বলে ৮৫ রানের ইনিংস।
দিল্লি কোচ রিকি পন্টিং পরে বলেন, নিচের দিকে বদলি খেলোয়াড় থাকার কারণে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা শট খেলতে এখন আরও স্বাধীনতা পাচ্ছেন। তাঁর মতে, ‘আমার মনে হয়, এমন স্কোরে ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের প্রভাব আছে। এখন বেশির ভাগ দলেরই এমন একজন আছে, যে নয়ে ভালো খেলতে পারে। এমনকি ৮ নম্বরে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানও দেখা যাচ্ছে। এটা সহায়তা করছে। ব্যাটিং দলগুলোকে শুরুতেই আরও আক্রমণের স্বাধীনতা দিচ্ছে।’
অবশ্য ইমপ্যাক্ট-বদলির আরেকটি দিকও দেখতে পাচ্ছেন সাবেক ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠান। তাঁর মতে, নিয়মটি অলরাউন্ডারদের ভূমিকা কমিয়ে দিচ্ছে। দলগুলো অলরাউন্ডারদের খেলালেও ব্যাটিং বা বোলিংয়ের পরই সরিয়ে দিচ্ছে। চেন্নাই সুপার কিংসের অলরাউন্ডার শিবম দুবে যেমন এ মৌসুমে একটি বলও করেননি।
সাংবাদিকদের ইরফান বলেছেন, ‘ক্রিকেটের বিনোদনের জন্য এ নিয়ম কাজে দেবে, যাতে বড় স্কোরের ম্যাচ দেখা যাবে। কিন্তু সামনে এগোতে ভারতীয় ক্রিকেটকে এটি নিয়ে ভাবতে হবে, বিশেষ করে অলরাউন্ডারদের নিয়ে।’