২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল।
২০১০ সালে লর্ডসে সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল।

এফটিপির বাইরেও ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলতে পারে বাংলাদেশ

ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ সবশেষ টেস্ট সিরিজ খেলেছিল ২০১০ সালে। লর্ডস আর ওল্ড ট্রাফোর্ডে তামিম ইকবালের টানা দুই টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে সেই সফর। ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয়টিও এসেছিল সেই সফরে। এরপর কেটে গেছে ১৩ বছর। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, কোনো সংস্করণেরই সিরিজ খেলা হয়নি বাংলাদেশের।

নতুন প্রকাশিত ভবিষ্যৎ সফরসূচিতে (এফটিপি) ২০২৭ সালের আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো সিরিজও ছিল না। তবে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে ডাকবে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের যেকোনো সময় এফটিপির বাইরের এই টেস্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে।

টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইসিবি এ মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেটকে জনপ্রিয় ও প্রাসঙ্গিক সংস্করণ হিসেবে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে মনোযোগী হচ্ছে। সে কারণেই বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়েকে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলতে ডাকতে চায় ইসিবি। শক্তিশালী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের কারণে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের খেলাকেও ইসিবি লাভজনক মনে করছে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ। বিশেষ করে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় বাংলাদেশের ম্যাচগুলোয় প্রচুর বাংলাদেশি দর্শক খেলা দেখতে এসেছেন।

একই ব্যাপার দেখা গেছে, গত মাসে চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও। এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হলেও সেটি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারবে বলে মনে করে ইসিবি। এই উদ্যোগ বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মতো টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলক দুর্বল দলগুলোকে সংস্করণটির প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে এবং এর থেকে দেশগুলো লাভবান হবে বলেও মনে করে ইসিবি।

লর্ডসের মাঠে ২০২৭ সালের আগেই টেস্ট খেলার সুযোগ হতে পারে বাংলাদেশের

ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ডের সম্প্রতি একটি পডকাস্টের করা মন্তব্য এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে টেলিগ্রাফ। গোল্ড সেই পডকাস্টে বলেছেন, ‘ইসিবি এই মুহূর্তে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভাবছে। তারা এমন উপায় খুঁজছে, যাতে অন্যরা শুধু টেস্ট ক্রিকেট খেলতেই উৎসাহী না হয়, ক্রিকেটারদের যেন তারা ভালো পারিশ্রমিক দেন। এর ফলে ক্রিকেটাররা টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।’

২০০৫ সালে প্রথম লর্ডসে চেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ

২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড পাঁচটি করে টেস্ট খেলবে। ইসিবি মনে করে এই দুই বছর খুব সহজেই আরও একটি করে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ আছে। এই বাড়তি একটি করে টেস্ট ইংল্যান্ড খেলতে চায় বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

লর্ডসে প্রতি গ্রীষ্মে দুটি করে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের জন্য ইসিবি ও এমসিসির (লর্ডস এমসিসির মাঠ) চুক্তি আছে। ২০০০ সাল থেকে প্রতি গ্রীষ্মেই দুটি করে টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় একটি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের টেস্ট দেখতে লর্ডসে প্রচুর দর্শক এসেছেন। এ ব্যাপারটি ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড ও এমসিসি দুই পক্ষকেই নতুন চিন্তা উপহার দিয়েছে। তারা মনে করছে, লর্ডসে টেস্ট ম্যাচের একটা বাড়তি আকর্ষণ আছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দেশ না খেললেও লর্ডস টেস্ট আকর্ষণ তৈরি করতে পারে।

ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশকে যেকোনো সংস্করণে অতিথ্য দেওয়াকে লাভজনক মনে করছে বলে জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ

এমসিসির প্রধান নির্বাহী গাই ল্যাভেন্ডার টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘আমরা ২০২৪ সালে লর্ডসে দুটি টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে চাচ্ছি খুব করেই। আমরা মনে করি, লর্ডসে প্রতি গ্রীষ্মেই দুটি করে টেস্ট আয়োজনের সুবিধা আছে। লর্ডসের মতো মাঠকে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বেশি করে ব্যবহারের উদ্দেশ্যের পাশাপাশি আর্থিক ব্যাপারটিও এখানে জড়িত।’

২০০৫ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। লর্ডস ও চেস্টার-লি-স্ট্রিটে সিরিজের দুটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজেই কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এসেছিল ঐতিহাসিক জয়। ২০১০ সালেও লর্ডসে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। পরের টেস্টটি হয়েছিল ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে। সিরিজের তিনটি ওয়ানডে হয়েছিল ট্রেন্টব্রিজ, ব্রিস্টল ও এজবাস্টনে।

২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল

ব্রিস্টলে এসেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে গেছে বাংলাদেশের মাটিতে। সেই সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছে প্রথম টেস্ট জয়ও। কিন্তু বাংলাদেশের আর সিরিজ খেলতে যাওয়া হয়নি। ইংল্যান্ড এ বছরের মার্চে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে গেছে বাংলাদেশে। টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ড হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। গত মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে খেলেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১০ সালের পর ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আর ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও খেলেছে বাংলাদেশ।