শিরোনামটা দেখে আপনার ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। শচীন টেন্ডুলকার কী পারেননি, যেটা তাঁর ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার করে দেখিয়েছেন?
ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকারকে মাথায় রাখলে এ রকম কিছুর কথা ভাবা কঠিন। তবে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান যে বেশ ভালো বোলারও ছিলেন, সেটা ভুলে যাবেন না। টেস্টে ৪৬, ওয়ানডেতে ১৫৪, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭১ ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২০১ উইকেটের মালিক কিংবদন্তি এই ভারতীয় ক্রিকেটার। বল হাতে ম্যাচও জিতিয়েছেন। ওয়ানডে ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অনেকবার ম্যাচে ৫ উইকেটও পেয়েছেন। তবে যেটা পারেননি সেটা হচ্ছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কখনো ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি।
এ জায়গাটাতেই আজ বাবাকে ছাড়িয়ে গেছেন অর্জুন টেন্ডুলকার। রঞ্জি ট্রফির প্লেট লিগে গোয়ার হয়ে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে নিয়েছেন ২৫ রানে ৫ উইকেট। ১৭ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন অর্জুন।
২৫ বছর বয়সী অর্জুন মূলত বোলার, মিডিয়াম পেস করেন। তাঁর ৫ উইকেট পাওয়াটা তাই খুব বড় ঘটনাও হওয়ার কথা নয়। তবে এত বড় ক্রিকেটারের ছেলে তিনি, তাঁর সবকিছুতেই আসলে বাবার সঙ্গে তুলনা চলে আসে।
যদিও এখন পর্যন্ত কোথাও সেই তুলনায় বাবার ধারেকাছে যাওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি অর্জুন। ভারত জাতীয় দলে খেলা তো দূরের কথা, প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ বা আইপিএলেও খুবই সাদামাটা ক্যারিয়ার। প্রথম শ্রেণিতে ১৭ ম্যাচে তাঁর ৩৭ উইকেট, লিস্ট এ-তে ১৫ ম্যাচ ২১ আর টি-টোয়েন্টিতে ২১ ম্যাচে ২৬ উইকেট ওভারপ্রতি ৮.৬১ রান দিয়ে।
আজ প্রথমবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫ উইকেট পেয়েছেন এমন একটা দলের বিপক্ষে, যারা রঞ্জির প্লেট লিগেও একেবারে তলানিতে। টেন্ডুলকার কখনো প্রথম শ্রেণিতে ৫ উইকেট পাননি, অর্জুন পেয়েছেন, এটা তাই স্রেফ একটা পরিসংখ্যান হিসেবে দেখাই ভালো। দুজনের কোনো রকম তুলনা করতে যাওয়াটা অযৌক্তিক হবে।
এই ফাঁকে বোলার শচীন টেন্ডুলকারকে একটু পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। খণ্ডকালীন বোলার হলেও তাঁর বৈচিত্র্য ছিল চোখে পড়ার মতো। অফ স্পিন, লেগ স্পিন, মিডিয়াম পেস, নানা ধরনের বোলিং করতে পারতেন। অনিল কুম্বলে-নির্ভর ভারতীয় বোলিংয়ের যুগে ব্রেক থ্রুর জন্য অধিনায়কেরা প্রায়ই টেন্ডুলকারের শরণ নিয়েছেন, তিনি খুব বেশি নিরাশ করেননি। শুধু বোলিং দিয়ে টেন্ডুলকার ম্যাচসেরা হয়েছেন, এমন উদাহরণও আছে।
১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে কোচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতানো সেই পারফরম্যান্সের কথা মনে আছে? ব্যাট হাতে মাত্র ৮ রানে আউট হয়ে যাওয়া টেন্ডুলকার পরে বল হাতে ফিরিয়েছিলেন মাইকেল বেভান, স্টিভ ওয়াহ, ড্যারেন লেম্যান, টম মুডি ও ড্যামিয়েন মার্টিনকে।
২০০৫ সালে টেনিস এলবোতে অস্ত্রোপচার না করালে বোলার টেন্ডুলকারকে হয়তো আরও বেশি পেত ভারত। তখন হয়তো তাঁর বোলিং অর্জনের সঙ্গে ছেলে অর্জুনের অর্জনের তুলনা করার আরও বেশি ক্ষেত্র তৈরি হতো।