কপিল দেবের নেতৃত্বে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জিতে চমকে দিয়েছিল ভারত। ফাইনালে ভারত হারিয়ে দিয়েছিল সে সময়কার মহাপরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
এরপরের বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ২৪ বছর। ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে অপেক্ষার অবসান ঘটায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। চার বছর পর ধোনির নেতৃত্বেই ভারত জেতে নিজেদের দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
তবে এক দশক ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারছে না ভারত। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হয়ে আছে ভারতীয়দের সর্বশেষ বৈশ্বিক শিরোপা। এরপর ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০২১ ও ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হেরেছে দলটি।
ভারতীয়দের বৈশ্বিক ট্রফির দীর্ঘ খরা ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ আসতে যাচ্ছে এ বছরই। অক্টোবর–নভেম্বরে নিজেদের দেশে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ভারত। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে ১০টি দল ১০ ভেন্যুতে ৪৮ ম্যাচ খেলবে প্রায় দেড় মাসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণের ধকল পোহাতে হবে স্বাগতিক ভারতকেই।
রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা মূল পর্বে ৯ ম্যাচ খেলবেন ৯টি ভিন্ন শহরে। এ জন্য তাঁদের ৩৪ দিনে ভ্রমণ করতে হবে প্রায় ৮ হাজার ৩৬১ কিলোমিটার পথ। বিশ্বকাপ জিততে হলে আরও দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। তখন সেমিফাইনাল, ফাইনালসহ ৪২ দিনে ১১ ম্যাচ খেলতে দলটিকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৯ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ।
স্বাগতিক হয়েও ভারতীয় দলের এমন সূচি দেখে হতাশ কপিল দেব। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ‘দ্য উইক’ সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভারতকে ১১ ম্যাচ (ফাইনালে উঠলে) খেলতে হবে। ভাবুন, ওদের কী পরিমাণ ভ্রমণ করতে হবে...এই সূচি কে বানিয়েছে?’
গত ২৭ জুন বিশ্বকাপের ১০০ দিন বাকি থাকতে ক্ষণগণনা শুরু হয়। ওই দিনই সূচি ঘোষণা করে আইসিসি। ৫ অক্টোবর উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ৮ অক্টোবর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাইয়ে। দুদিন পরেই রোহিত–কোহলিদের দ্বিতীয় ম্যাচ। দিল্লিতে ১১ অক্টোবর তাঁদের প্রতিপক্ষ রশিদ–নবীদের আফগানিস্তান। এই ম্যাচ খেলতে ভারতীয় দলকে ভ্রমণ করতে হবে ১ হাজার ৭৬০ কিলোমিটার।
এর দুদিন পরই আহমেদাবাদে বহুল প্রতীক্ষিত ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ। ১৪ অক্টোবর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হতে এ দফা রোহিতের দলকে পাড়ি দিতে হবে ৭৭৫ কিলোমিটার পথ। ভারতের বাকি ম্যাচগুলোও হবে ভিন্ন ভিন্ন শহরে।
উত্তরসূরিদের এমন ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ সূচি নিয়ে সন্তষ্ট নন কপিল। তাঁর চাওয়া, বিশ্বকাপের সময় বিসিসিআই যেন রোহিতের দলকে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা দেয়, ‘আপনাকে ধর্মশালা থেকে বেঙ্গালুরু, বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় যেতে হবে...নয়টি আলাদা জায়গায়। বিসিসিআইয়ের উচিত খেলোয়াড়দের ভ্রমণের জন্য চার্টার্ড বিমানসহ সব ধরনের সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা করা।’
১০ বছর ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে না পারলেও এবার ঘরের মাঠেই দীর্ঘ খরা ঘুচবে বলে আশাবাদী কপিল, ‘চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও আমরা কিন্তু ভালো খেলছি। আমরা সেমিফাইনাল, ফাইনালে উঠছি। শুধু চূড়ান্ত বাধা টপকাতে হবে।’
ভারতীয় দল এই মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করছে। সেখানে টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজও জিতে নিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজকে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শুরু হিসেবে দেখছে ভারত। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতে রোহিত–কোহলিকে বিশ্রামে রেখে অপেক্ষাকৃত তরুণদের খেলিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ৫০ ওভারে সংস্করণে ভারতের পরের ম্যাচ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে; আগামী ২ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে।