কিংসটাউনে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা সুবিধার ছিল না বাংলাদেশের। ১০৬ রানেই থামতে হয় তাদের। তবে সে সংগ্রহকে যথেষ্টর চেয়েও বেশি বানিয়ে ফেলেছেন বোলাররা, যাতে ৪ উইকেট নিয়ে নেতৃত্ব দেন তানজিম হাসান। নেপালকে কীভাবে হারাল বাংলাদেশ, তা পড়ুন নিচে—
ঈদুল আজহার দিন বাংলাদেশে। সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে নেপাল। এ ম্যাচে জিতলে ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে খেলা নিশ্চিত। এরই মধ্যে সাতটি দল শেষ আটে খেলা নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশ অপেক্ষায় অষ্টম দল হওয়ার অপেক্ষায়। ঈদের আনন্দ কি বেড়ে যাবে বাংলাদেশ দলের জয়ে? কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানা যাবে সেটি। তার আগে প্রথম আলো লাইভে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি সাইফুল্লাহ্ বিন আনোয়ার। ঈদ মোবারক!
জিতলে সুপার এইট নিশ্চিত। তবে হারলেও সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের। এবং সে সম্ভাবনা বেশ জোরাল। কীভাবে, সেটি পড়ুন নিচে—
বাংলাদেশ যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে নেপালের পারফরম্যান্স দেখে পরিকল্পনা সাজায়, তাহলে হয়তো ভুল হবে। নেপাল ভালো ক্রিকেট খেলেছে, এটা যেমন সত্যি, তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকা যে মোটেও তাদের মান অনুযায়ী খেলেনি, সেটিও সত্যি। কথাটা এ কারণেই বলা, গতকাল ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিপদে ফেলা নেপালের কুশল ভুরতেল মূলত একজন ওপেনার ও অনিয়মিত বোলার। আগের ম্যাচগুলোতে তিনি এক ওভারও বল করেননি। তাঁর কাছে ৪ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকারই ব্যর্থতা।
টেলস কল করেছিলেন নেপাল অধিনায়ক রোহিত পৌড়েল, জিতেছেন তিনি। বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রোহিত।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, আশা করি ফর্মটা ধরে রাখতে পারব।নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ অধিনায়ক
নেদারল্যান্ডসকে হারানো ম্যাচের একাদশ ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ
তানজিদ হাসান, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান।
তানজিদ-সৌম্য, তানজিদ-নাজমুলের পর এবার তানজিদ-লিটন। চতুর্থ ম্যাচে তৃতীয় ওপেনিং জুটি নামাল বাংলাদেশ। তবে তানজিদ-লিটনের জুটি নেপালের বিপক্ষে টিকেছে মাত্র ১ বল! সোমপাল কামিকে প্রথম বলেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে চেয়েছিলেন তানজিদ হাসান। নিয়ন্ত্রণ ছিল না একেবারেই। আগেভাগে শট খেলে ফেলে লিডিং-এজড হয়েছেন তানজিদ, নিজের বলে ক্যাচ নিয়েছেন সোমপাল নিজে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তাই নামতে হয়েছে অধিনায়ক নাজমুলকে।
নেপালিদের আবেদন তেমন জোরাল না থাকলেও আম্পায়ার স্যাম নোগাজস্কি আঙুল তুলেছিলেন। লিটন দাসকে দিয়েছিলেন এলবিডব্লু। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের অন্তত দুটি এমন সিদ্ধান্তে নিজেদের দুর্ভাগা ভাবার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। এবার অবশ্য ভাগ্য পক্ষে এসেছে। কাজে দিয়েছে লিটনের নেওয়ার রিভিউ। বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, লিটনের লেগ স্টাম্প মিস করে যেত, ইমপ্যাক্টেও ছিল আম্পায়ার্স কল। লিটন অক্ষত তাই। তবে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। ১ ওভারে ৩/১।
লিটন বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে, তবে নাজমুলের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। অফ স্পিনার দীপেন্দ্র ঐরীর বলটি ঢুকে গেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের রক্ষণ ভেদ করে। ফুললেংথের বলটি ঢুকছিল ভেতরে, নাজমুল লাইন বুঝতেই পারেননি! ভেঙেছে স্টাম্প, দ্বিতীয় ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ১১/২!
টপ অর্ডারে বাংলাদেশ অধিনায়ক সুবিধা করতে পারছেন না একেবারেই। বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চেহারাও রয়ে গেছে বিবর্ণই। চার ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম ২ উইকেট হারিয়েছে ৬, ৭, ২৩ ও ২৯ রানে।
ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি বাংলাদেশের ম্যাচের খবর নিতে চান, তাহলে আপনার জন্য খুব একটা সুসংবাদ নেই। পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে তৃতীয় উইকেট! এবার ফিরেছেন লিটন দাস। অবশ্য লিটনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল না থাকার খুব একটা ইচ্ছা তাঁর আছে। চাপমুক্তির উপায় হিসেবে শট খেলাকে বেছে নিয়েছিলেন। আগের ওভারে অফ স্পিনার ঐরীকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান ফিল্ডারের নাগালের বাইরে থাকায়। এবার সোমপালের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে খাড়া ওপরে তোলার পর আর বাঁচেননি। উইকেটকিপার আসিফ শেখ বাঁদিকে ছুটে গিয়ে ক্যাচ নেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছেন, ভুলও করেননি। বাংলাদেশ ২৫/৩।
তানজিদ, নাজমুল, লিটনের পর এবার নেই হৃদয়ও। পাওয়ারপ্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ! আগের বলে হাঁটু গেড়ে মারা শটে চার পেয়েছিলেন হৃদয়। পরের বলে নেপাল অধিনায়ক রোহিত পৌড়েলের ওপর আবার চড়াও হলেন। এবার খাড়া ওপরে ওঠে ক্যাচ। বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে অনেকটা ছুটে গিয়ে বেশ ভালো ক্যাচ নিয়েছেন সন্দীপ লামিচানে। আগের দুই ম্যাচে ১ ওভারও বোলিং না করা রোহিত পেয়ে গেছেন উইকেট। পাওয়ারপ্লের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে ৪ উইকেট, স্কোরবোর্ডে ৬ ওভারশেষে মাত্র ৩১ রান।
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজটাউনে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েছিল ১৫ রানের মধ্যে। সেবারও পঞ্চম উইকেট জুটির অংশ ছিলেন সাকিব আল হাসান, সঙ্গী ছিল মুশফিকুর রহিম। এবার মাহমুদউল্লাহ। সামনে কাজটি ১০ বছর আগের মতোই কঠিন!
…তখন হয় রানআউট!
সাকিব দুহাত মাথার কাছে এনে বসে পড়েছেন। মাহমুদউল্লাহ মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ফিরছেন। ফেরা ছাড়া উপায়ও নেই তাঁর। যে মুহূর্তে দুজনের জুটি একটু চাপ সামাল দিয়ে এনেছিল, তখনোই রানআউট! লামিচানের বল ছিল ফুলটস। সাকিব খেলেছিলেন মিড অফে। রান সেখানে ছিল না। তবে সাকিব একটু সময় নিয়ে দৌড় শুরু করেন, তা দেখে দৌড়ান মাহমুদউল্লাহও। ভুল বুঝতে পেরে সাকিব আটকে গেলেও মাহমুদউল্লাহর ক্রিজে ফেরার সময় ছিল না। বাংলাদেশ কি ফিরতে পারবে ৫২ রানে ৫ উইকেট হারানোর এই খাদের কিনার থেকে?
বল ট্র্যাকিং দেখানোর আগেই হাঁটা ধরেছিলেন সাকিব। তিনি নিজেও জানতেন—এ রিভিউ আসলে নেওয়ার জন্যই নেওয়া। রোহিতকে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করেছিলেন, বল লাগে ব্যাকফুটে। খোলা চোখেই মনে হচ্ছিল আউট, পরে বল ট্র্যাকিং নিশ্চিত করেছে সেটিই। ফেরার সময় সাকিব বারবার শ্যাডো করছিলেন—এ বল খেলা উচিত ছিল সোজা ব্যাটে। সে ভুল শোধরানোর সুযোগ নেই আর। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সাকিবের ফিফটি এনে দিয়েছিল ভালো সংগ্রহ। এবার তিনিও গেলেন। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে ৬ উইকেট। বাকি এখনো ৮ ওভার।
সাকিব রিভিউ করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। তবে তানজিমের সেদিকে আগ্রহ ছিল না তেমন। একেবারে শেষ মুহূর্তে ব্যাটিং সঙ্গী জাকেরের কথা শুনে রিভিউ নেন। অথচ সফল হয়েছে সে রিভিউ-ই! লামিচানেকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিস করে গিয়েছিলেন, তাঁরও পেছনের পায়ে লাগে বল। বল ট্র্যাকিং ইমপ্যাক্টে দেখিয়েছে আম্পায়ার্স কল, তবে বলটি মিস করে যেত অফ স্টাম্প! তবে তাতে কিছু যায় আসেনি। ঠিক পরের বলেই গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড তানজিম। বাংলাদেশ সপ্তম উইকেট হারিয়েছে ৬৯ রানে।
সেন্ট লুসিয়ায় শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ এ ম্যাচে হারলে যাদের সুপার এইটের দুয়ার খুলে যাবে। ২ ওভারে ৭ রান তুলতে ১ উইকেট হারিয়েছে লঙ্কানরা। নেপাল-বাংলাদেশের ম্যাচ আগেভাগে শেষ যদি হয় আর বাংলাদেশ হারে—তাহলে নেট রানরেটের সমীকরণটা জানা থাকবে ডাচদের।
এ উইকেটে ব্যাটিং সহজ মনে হচ্ছে না। তবে নেপালকে আটকানোর মতো স্কোর বাংলাদেশ পেয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই ভাবছেন না কেউ। আপাতত বাংলাদেশকে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দেওয়ার দায়িত্বটা জাকের আলী ও রিশাদ হোসেনের। দুজন পারবেন তেমন কিছু করতে?
তানজিম গুগলি পড়তে পারেননি। লামিচানের গুগলির জবাব ছিল না জাকেরের কাছেও। ২৬ বলে ১২ রান করে বোল্ড জাকের। লামিচানের এটি শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট।
মাঝে ৪৪ বল কোনো বাউন্ডারি ছিল না। উইকেট যেভাবে পড়ছিল, তাতে বাউন্ডারির কথা হয়ত মনেও ছিল না কারও। রিশাদ হোসেন মনে করালেন সেটি। কুশল ভুর্তেলকে পুল করে ছক্কার পর স্লগ সুইপে চার মেরেছেন রিশাদ। কুশলের করা ১৭তম ওভারে এসেছে ১৩ রান। ইনিংসে যেটি সর্বোচ্চ রানের ওভার। শেষ বলে অবশ্য তাসকিনের বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিল নেপাল। কিন্তু কুশলের বল পড়েছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।
আগের ওভারে ছক্কা-চার। পরের ওভারে আউট রিশাদ। ঐরীকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েছেন তিনি। ৮৮ রানে নবম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ব্রেকিং নিউজ—বাংলাদেশ ছুঁয়েছে ১০০ রান! ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা, তাতে এটিই বড় অর্জন। এমন উইকেটে রান তাড়া অবশ্য সহজ হওয়ার কথা নয়। ১০০-এর ওপারে কোনো স্কোর বাংলাদেশকে হয়তো মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে একটু হলেও এগিয়ে নেবে। এই সময়ে সেটিই বা কম কী!
ইনিংসের প্রথম বলে তানজিদ হাসানের অদ্ভুত শটে আউটে শুরু, মোস্তাফিজুর রহমানের রানআউটে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ দিকে গুরুত্বপূর্ণ রান আসছিল, এমন সময়ে মোস্তাফিজুর হলেন রানআউট। বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১০৬ রানেই। বিশ্বকাপে আইসিসির সহযোগী কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটিই সর্বনিম্ন স্কোর।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন নেপাল অধিনায়ক রোহিত পৌড়েল। তানজিদের আউটে বাংলাদেশ সেই যে চাপে পড়ে, কঠিন উইকেটে সেটি থেকে বেরুতে পারেনি আর। ১০ রানে ২ উইকেট নেওয়া পেসার সোমপাল কামিকে চতুর্থ ওভারের জন্য আর আনেননি পৌড়েল। সোমপাল পরে বলেছেন, উইকেট ধীরগতির বলে স্পিনারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেই মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ উইকেটে সতর্ক থাকতে হবে।
মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, এ ম্যাচে জিতলে বাংলাদেশ যাবে সুপার এইটে। হারলেও সম্ভাবনা থাকবে, তবে নেট রানরেটের হিসাব আসবে ওদিকে নেদারল্যান্ডস জিতলে। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১৫ রানে আটকে দিয়ে ১ রানে হেরেছিল নেপাল। আজ কি অঘটন ঘটাতে পারবে তারা?
নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৪ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ প্রথম বলে হারিয়েছিল উইকেট। নেপাল প্রথম বলে পেয়েছে চার। যদিও তানজিমের বলে সেটি এসেছে কুশল ভুর্তেলের ইনসাইড-এজে। তানজিমের করা প্রথম ওভারে ৫ রান এসেছিল, দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ৫ বল ডট দিলেও তাসকিন শেষ বলে দিয়েছেন বাউন্ডারি। আসিফ পুল করে মেরেছেন চার। ২ ওভারে ৯/০।
ওহ, কুশল! তানজিমের বল ছিল ফুলটস। সেটিই মিস করে বোল্ড হয়েছেন নেপাল ওপেনার! জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে সুইং করে বেরিয়ে গেছে বল। কীভাবে আউট হলেন, সেটি যেন বুঝতেই পারছিলেন না। তানজিমের অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না, তাঁর উল্লাস হলো দেখার মতোই। যেভাবেই আসুক, যে বলেই আসুক—উইকেট তো!
১ বল পর তানজিম পেয়েছেন আরেকটি উইকেট। স্লটে পেয়ে্ছিলেন ভেবে তুলে মারতে গিয়েছিলেন অনিল শাহ। তবে লেংথ ঠিক অমন শটের উপযুক্ত ছিল না। ব্যাট ঘুরে গেছে, বল উঠেছে ওপরে। ক্যাচ নিতে ভুল করেননি নাজমুল। তানজিম করেছেন মেডেন, নিয়েছেন ২ উইকেট। এ উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ নয়, এরই মধ্যে বাড়তি বাউন্স অস্বস্তিতে ফেলছে নেপালি ব্যাটসম্যানদের।
৩ ওভারে ৯/২।
প্রথম আসিফ শেখ তুলেছিলেন স্লিপে ক্যাচ। স্লিপে ছিলেন শুধু তানজিদ, সেটিও ঠিক প্রথম স্লিপে নয়। এরপরও নাগাল পাননি তিনি অল্পর জন্য। এরপর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন অধিনায়ক রোহিত। তবে স্কয়ার লেগে অনেকটা ছুটে গিয়েও নাগাল পাননি জাকের আলী। এরপর পাঞ্চ করে তাসকিনকে চার মেরেছেন আসিফ শেখ। ৪ ওভারে ২০/২।
টানা তৃতীয় ওভার করতে এসেছেন তানজিম। আগের ওভার শেষে রোহিতের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশ পেসারকে। এ ওভারেও একটু চোখাচোখি হলো দুজনের। তবে নেপাল অধিনায়কের সঙ্গে দ্বৈরথ জিতলেন তানজিমই। লেংথ বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সরাসরি রিশাদের হাতে ধরা পড়েছেন রোহিত। ২০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে নেপাল। আগের ওভার জোড়া উইকেট মেডেন করেছিলেন তানজিম। এবার করলেন উইকেট মেডেন। মানে তাঁর সর্বশেষ ১২ বলে কোনো রান না তুলতে ৩ উইকেট হারিয়েছে নেপাল।
আক্রমণে মোস্তাফিজ। তানজিমের মিসফিল্ডে চার। এরপর দ্বিতীয় দফা চেষ্টায় সাকিবের ক্যাচ! ফুললেংথে পেয়ে ড্রাইভ করেছিলেন আসিফ শেখ। কাভারে থাকা সাকিবের হাত গলে সেটি প্রথমে গিয়ে লাগে সাকিবের কাঁধে। এরপর ওপরে ওঠা বল ধরতে পেরেছেন সাকিব। পাওয়ারপ্লেতে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নেপালও হারিয়েছে ৪টি। প্রথম ৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩১/৪। নেপালের ২৪/৪।
রোহিত পৌড়েলের উইকেটের কার্বন কপি যেন! সেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা রিশাদ হোসেনের হাতে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন সুন্দীপ জোরা। তানজিম পেয়েছেন চতুর্থ উইকেট। সপ্তম ওভারেই যিনি শেষ করে ফেলেছেন নিজের ওভার। ৭ রানে ৪ উইকেট নিলেন তিনি।
নেপালের ইনিংসের ১৫.৩ ওভারই করেছিলেন স্পিনাররা। আর বাংলাদেশ প্রথম স্পিনার আনল অষ্টম ওভারে গিয়ে। রিশাদ হোসেন শুরু করেছেন ৫টি ওয়াইডে, টার্ন করে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি লিটনও। অন্যপ্রান্তে সাকিব এসে প্রথম বল করেন লেগ স্টাম্পের বাইরে। দুই স্পিনারের ২ ওভার মিলিয়ে এসেছে ১৪ রান।
সেন্ট লুসিয়ায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস হারলে আর এ ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করতে হবে না বাংলাদেশকে, তারা সরাসরিই চলে যাবে সুপার এইটে। যদিও বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হতে যাচ্ছে আগে।
নেপালের দরকার জুটি। কুশল মাল্লা ও দীপেন্দ্র সিং ঐরী গড়ছেন সেটিই। দুজনের জুটি অবিচ্ছিন্ন ৫ ওভার। ৪৮ বলে নেপালের দরকার ৫৭ রান। এখন অবশ্য প্রয়োজনীয় রানরেটের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে তাদের। রিশাদ-সাকিবের পর তৃতীয় স্পিনার হিসেবে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ।
সম্বল ১০৭ রান, তবে ফিল্ডিংটা ঠিক মনমতো হচ্ছে না বাংলাদেশের। কয়েকটি অতিরিক্ত রান এসেছে মিসফিল্ড আর ওভারথ্রো মিলিয়ে। টানা ৩ ওভার স্পিনারদের দিয়ে করানোর পর তাসকিনকে ফিরিয়েছেন নাজমুল। তাঁকে কাট করে চার মেরেছেন ঐরী। শেষ ৬ ওভারে নেপালের দরকার ৪৬ রান।
সাকিবের বলে ঐরীর বিপক্ষে এলবিডব্লুর রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। উইকেটে হয়েছে আম্পায়ার্স কল। ১৫ ওভারশেষে নেপালের স্কোর ৬৫/৫। বল ও রানের ব্যবধান বাড়লেও উইকেট আছে তাদের, এ সময়ে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল ৭ উইকেট (রান ছিল ৭৫)।
মাহমুদউল্লাহর করা ১৬তম ওভারের আগের ৩০ বলে দরকার ছিল ৪২ রান। মাল্লা স্লগ সুইপে ছক্কার পর ফ্লিক করে মেরেছেন চার। জাকের আলী করেছেন মিসফিল্ড। ঐরীর সঙ্গে তাঁর জুটি পেরিয়ে গেছে ৫০। ২৪ বলে দরকার ৩০ রান। মানে রান ও বলের ব্যবধান কমে এসেছে ৬ রানে।
যে মুহূর্তে নেপাল এগিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল, তখনই ব্রেকথ্রু দিলেন মোস্তাফিজ। তুলে মেরেছিলেন কুশল মাল্লা, কিন্তু যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে যায়নি বল। মিড অফ থেকে পেছনে ছুটে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন নাজমুল। ৫২ রানের জুটি ভেঙেছে তাতে।
কুশল মাল্লা ফিরে গেছেন। তবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঐরী! তাসকিনকে আপার কাটে ছক্কা মেরেছেন ১৮তম ওভারের প্রথম বলে। তবে পঞ্চম বলে গিয়ে শর্ট বল সামলাতে না পেরে ক্যাচ দিয়েছেন গুলশান ঝা, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে শেষ বলে হয়েছিলেন রানআউট। ১২ বলে দরকার ২২ রান, বাকি ৩ উইকেট!
শেষ ২ ওভারের ১টি মোস্তাফিজ করবেন, সেটি জানা কথাই। তাঁকে ১৯তম ওভারেই আনলেন নাজমুল। মোস্তাফিজ করলেন উইকেট মেডেন! ৫ বল ডট দেওয়ার পর শেষ বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন ঐরী। নেপাল হারিয়ে ফেলেছে অষ্টম উইকেট। গেম-সেট এখানেই, বাকি শুধু ম্যাচ জেতা?
আগের ৩ ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য। নেপালের বিপক্ষে শেষ ওভার করতে এসে অবশেষে সেই উইকেটের দেখা পেলেন সাকিব, টি-টোয়েন্টী বিশ্বকাপে যেটি তাঁর ৪৮তম। সোমপাল কামি বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পড।
শেষ ব্যাটসম্যান অবিনাশ বোহারাকে আম্পায়ার আহসান রাজা দিয়েছেন এলবিডব্লু। নেপাল স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে রিভিউ। তবে মাঠের সিদ্ধান্ত বদলায়নি। সাকিবের টানা ২ উইকেটে ২১ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। চলে গেছে সুপার এইটেও! ফলে নেদারল্যান্ডস-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলের দিকে তাকাতে হবে না আর।
সেন্ট ভিনসেন্টে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না। তবে ১০৬ রানের সম্বল নিয়ে বাংলাদেশের দরকার ছিল দ্রুত উইকেট। তানজিম হাসান শুরুতেই এনে দেন তা। তাঁর ৪ উইকেটে নেপাল খেই হারায় শুরুতেই। মাঝে ঐরী ও মাল্লা চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ দিকে মোস্তাফিজের কোনো জবাব ছিল না তাদের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্ভাবনা জাগিয়ে পারল না নেপাল, আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিপক্ষে জয়ের অপেক্ষা বাড়ল তাদের।
৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা পেসার তানজিম হাসান।