২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন যুবরাজ সিং
২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন যুবরাজ সিং

গিবস থেকে মালহোত্রা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় ছক্কার সাতকাহন

এ কীর্তি দিন শেষে ব্যাটসম্যানের, তবে তাতে বোলারের নামটাও জড়িয়ে থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে। গ্ল্যামরগানের মিডিয়াম পেসার ম্যালকম ন্যাশের নামটা যেমন ক্রিকেট ইতিহাসে আছে ভালোভাবেই। ১৯৬৮ সালে সোয়ানসিতে তাঁর এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরেছিলেন নটিংহামশায়ারের গ্যারি সোবার্স। স্বীকৃত ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় ছক্কার কীর্তি সেটিই প্রথম। এরপর প্রথম শ্রেণিতে রবি শাস্ত্রি মেরেছিলেন ছয় ছক্কা, বোলার ছিলেন তিলক রাজ।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ছয় ছক্কার কীর্তিটি সোবার্সেরও ৩৯ বছর পর। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডস লেগ স্পিনার ড্যান ফন বাঞ্জির এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস। সে বছরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রড শিকার হয়েছিলেন ছয় ছক্কার, ব্যাটসম্যান ছিলেন যুবরাজ সিং। এরপর ১৪ বছর এমন কোনো কিছু দেখেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ২০২১ সালে এসে আবার দেখেছে দুবার।

যুবরাজের সেই ছক্কার ১৬ বছর হয়ে গেল আজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় ছক্কার ঘটনাগুলোর দিকে ফিরে তাকানো যাক এ সুযোগে—

হার্শেল গিবস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বোলার: ড্যান ফন বাঞ্জি (নেদারল্যান্ডস)
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০০৭, সেন্ট কিটস

গিবস সেদিন নেমেছিলেন ৪ নম্বরে। ইনিংসের ৩০তম ওভার করতে এসেছিলেন ফন বাঞ্জি। সে ওভারের আগে গিবসের রান ছিল ৩০ বলে ৩২। ক্রিজে তাঁর সঙ্গী ছিলেন জ্যাক ক্যালিস। ড্রেসিংরুম থেকে তার আগেই বার্তা এসেছিল, দুজন খেলতে পারেন হাতখুলে। গিবস হাত খুললেন। একটু বেশিই খুললেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ছয় ছক্কার রেকর্ডটি গিবসের

ওভারের মাঝামাঝি সময় থেকেই মনে হচ্ছিল, ব্যাপারটি হয়ে যাবে। গিবসের মনে অবশ্য অনুভূতিটা এসেছিল চতুর্থ ছক্কাটি মারার পর। পরে বলেছিলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো ছিল, সেদিন স্ট্রেইটে বাউন্ডারি বেশ ছোট ছিল। চতুর্থ বলের পর ভেবেছিলাম, হতেও পারে। পা ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। পরে মনে হয়েছে, ক্রিজেই থাকি। পরের ২ বলেও মারব, এমন ভাবনাই ছিল। সৌভাগ্যক্রমে টাইমিংয়ে গড়বড় হয়নি একটাও। দারুণ ছিল।’

গিবসের জন্য তো দারুণ হবেই। ফন বাঞ্জির জন্য সেটিই ছিল পুরো বিপরীত। গিবস সে ইনিংসে করেছিলেন ৪০ বলে ৭২ রান। এর অর্ধেক রান তুলেছিলেন ১ ওভারেই।

যুবরাজ সিং (ভারত)
বোলার: স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০০৭, ডারবান

গিবসের কীর্তি ছিল মার্চে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবার দেখল সেটি।

যুবরাজ ৫ নম্বরে নামার সময় ভারতের রান ছিল ১৫৫। ইনিংসে বল বাকি ছিল ২০টি। ১ বল বাকি থাকতে যুবরাজ আউট হয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ভারতের সংগ্রহ ২১৬, যুবরাজের নামের পাশে ১৬ বলে ৫৮ রান!

১২ বলে ফিফটি, ৬ বলে ৩৬!

১৯তম ওভারে বোলিং করতে আসার আগে ১৯ বছর বয়সী স্টুয়ার্ট ব্রডের ফিগার ছিল মোটামুটি—৩ ওভারে ২৪ রান। সে ওভার শেষে আর ভদ্রস্থ চেহারায় থাকেনি সেটি।

যুবরাজ প্রথম ছক্কাটি মেরেছিলেন কাউ কর্নার দিয়ে। শেষটি এসেছিল ওয়াইড মিড অনের ওপর দিয়ে। সে ওভারে যুবরাজ ফিফটি করেছিলেন ১২ বলে, দ্রুততম ফিফটির যে রেকর্ড টিকে আছে আজও!

সে ম্যাচে খেলা ওয়াইস শাহ বলেছিলেন, চতুর্থ ছক্কাটির পরই তাঁর মনে হয়েছিল, ব্রড সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। আর ব্রড পরে বলেছিলেন, ওই ওভারটিই আসলে তাঁকে পরের এই বোলার বানিয়েছে। পরের সেই বোলার ব্রডের টেস্ট ক্যারিয়ারে উইকেট ৬০৪টি। যুবরাজের আসলে একটা ধন্যবাদই প্রাপ্য!

কাইরন পোলার্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বোলার: আকিলা দনাঞ্জয়া (শ্রীলঙ্কা)
প্রথম টি-টোয়েন্টি, ২০২১, কুলিজ

আকিলা দনাঞ্জয়া দিনটি মনে রাখতে পারতেন অন্য একটি কারণে। সেদিন একটা হ্যাটট্রিক করেছিলেন শ্রীলঙ্কান স্পিনার। সেটিও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। এভিন লুইস, নিকোলাস পুরান ও ক্রিস গেইল—দনাঞ্জয়ার হ্যাটট্রিকের শিকার নাম তিনটি ধারেভারে কম নয় একেবারেই।

ছয় ছক্কার অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন পোলার্ড

কিন্তু হ্যাটট্রিকের সে আনন্দ দনাঞ্জয়ার স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। এক ওভারও টেকেনি আদতে। আগের ওভারে হ্যাটট্রিক করা বোলার স্বাভাবিকভাবেই পরেরটিও করতে আসেন। সেটি ছিল পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার। কিন্তু প্রথম তিন বলে পোলার্ড করলেন ছক্কার হ্যাটট্রিক। পরের তিন বলে করলেন আরেকটি। ছয় বলে ছয় ছক্কা, ১৩২ রানের লক্ষ্যে ১১ বলে ৩৮ রানের ইনিংস পোলার্ডের।

আগের ওভারে হ্যাটট্রিক, পরের ওভারে ছয় ছক্কা—দনাঞ্জয়া দিনটি ভুলবেন কী করে!

যশকরন মালহোত্রা (যুক্তরাষ্ট্র)
বোলার: গডি টোকা (পাপুয়া নিউগিনি)
দ্বিতীয় ওয়ানডে, ২০২১, আল আমেরাত

পেছনের স্কোরকার্ডেই আছে, মালহোত্রা সেদিন কী করেছিলেন

এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো ফিফটিই ছিল না মালহোত্রার। সেদিন খেলেছিলেন ১৭৩ রানের ইনিংস। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসেরও সেটি ছিল প্রথম সেঞ্চুরি। আল আমেরাতে মালহোত্রার ইনিংসে ছিল ১৬টি ছক্কা। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার তালিকায় যেটি যৌথভাবে দুইয়ে।

মালহোত্রার দিনটি স্মরণীয় ছিল আগে থেকেই। শেষ ওভারে গিয়ে সেটি হয়ে গেল আরও বিশেষ কিছু। মালহোত্রার ১৬ ছক্কার ছয়টিই যে এসেছিল গডি টোকার ওই ওভারে।