ভারত বধের নায়ক
ভারত বধের নায়ক

বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ

মিরাজ যেভাবে ‘বিস্ময়বালক’ হলেন

তিনি বিস্ময়কর কিছু করলেই ইংরেজি শিরোনামে চলে আসে ‘মিরাকল’ শব্দটা। নামের সঙ্গে মিলে যায় বলেই হয়তো। নামটা যেহেতু মেহেদী হাসান মিরাজ, ‘মিরাজ মিরাকল’ বললেই বোঝা যায় বল বা ব্যাট হাতে চমকে দেওয়া কিছু করেছেন বাংলাদেশ দলের এই ক্রিকেটার। তবে ‘মিরাকল’ শব্দের ব্যবহার হোক বা না হোক, ২০২২ সালে একটার পর একটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েই যাচ্ছেন ‘বিস্ময় বালক’ মিরাজ। যার সর্বশেষটা দেখা গেল পরশু মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে।

আগামীকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে দুই দিনের বিরতি। এর মধ্যে কালকের দিনটা বাংলাদেশ, ভারত দুই দলই কাটিয়েছে বিশ্রামে। বিশ্রামের দিনে মিরাজের মনোজগতে যদি কিছু হানা দিয়ে থাকে, সেটি হতে পারে এ বছর ঘটানো তাঁর অন্য সব ‘মিরাকল’ই।

মেহেদী হাসান মিরাজ মানেই এখন নির্ভরতা, বিস্ময়কর কিছু করে বাংলাদেশকে জেতানোর আশা। 

গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচটা মনে করে দেখুন। সেখানেও ‘মিরাজ মিরাকল’! দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৫৪ ওভার বোলিং করেছেন, নিয়েছেন ৪ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের হাতই খুলতে দেননি মিরাজ। পেসারদের নায়ক হওয়ার দিনে পিছিয়ে ছিলেন না তিনিও। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে সুযোগ পেয়েও করেছেন ৪৭ রান।

৩৯ বলে ৩৮ রানের পথে ২টি ছয় ও ৪টি চার হাঁকান মিরাজ

পরের মাসেই চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক মিরাজ। ২১৫ রান তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। আফগান বোলিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশের হারই ছিল নিয়তি। কিন্তু আফিফ হোসেনকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন মিরাজ। আটে নেমে সেদিন আফিফের সঙ্গে ১৭৪ রান যোগ করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। নামের পাশে অপরাজিত ৮১ রান।

মিরাজের অবদান ছিল গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়েও। যে মাঠকে বলা যায় ফিঙ্গার স্পিনারদের শ্মশান, সেখানেই কিনা তিনি নিলেন ৪ উইকেট! সেদিন ম্যাচ শেষে মিরাজকে নিয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘মিরাজের মতো ক্রিকেটার দলে থাকা দরকার। প্রথম ৪ ওভারে ৪০ রান দিলেও সে আমাকে বারবার বলছিল, “আমাকে বল দিন, আমি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেব।”’  

দল যখন অন্ধকারে, তখনই আলো ঝলমলে পারফরম্যান্সে চোখ ধাঁধিয়ে দেন মিরাজ। মিরাজের ভাষায় যার নাম ‘বিলিভ সিস্টেম’। একটা জিনিস বারবার সাফল্যের সঙ্গে করতে পারলেই একজন খেলোয়াড়ের মধ্যে তৈরি হয় এই ‘বিশ্বাস-প্রক্রিয়া’। পরশু ভারতের বিপক্ষে জিততে বাংলাদেশের যখন ৫১ রান দরকার, হাতে ১ উইকেট নিয়েও মিরাজ জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন। অনেকের কাছে সেটা হয়তো কষ্টকল্পনা, কিন্তু মিরাজ সে দলের নন। তাঁকে নিয়ে তাই তামিমের আরেকটা কথা, ‘৫ রান দরকার, প্রতিপক্ষের হাতে আছে ৬ উইকেট। মিরাজ তবু বিশ্বাস করবে, সেখান থেকে ম্যাচ জেতা সম্ভব। আমাদের কাছে সেটা হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু মিরাজ সত্যিই বিশ্বাস করবে।’

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার সহজ উপায় ভারতকে হারানোয় ভূমিকা রাখা। ২০০৪ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভারতকে হারানোর স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বলে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তামিমের বিধ্বংসী ফিফটি, ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ফিনিশিং ও ২০১৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমানের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের সঙ্গে এখন ‘মিরাজ মিরাকল’ও জুড়ে দেওয়া যায় অনায়াসে।

মিরাজের ব্যাটিং এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরতা দেয়। বোলিংয়েও আছে সব কন্ডিশনে ভালো করার সামর্থ্য। সাকিব আল হাসানের পর কে হবেন বাংলাদেশ দলের পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার, সে প্রশ্নেও মিরাজের নামটাই আগে আসে। বছরখানেক আগে তিনি নিজেই প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতের সাকিব হওয়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন।

পরশু রাতে সেই সাকিবকেও হয়তো চমকে দিয়েছেন তিনি। মাঠ ছাড়লেন যে দুজনের কাঁধে চড়ে, তাঁদের একজন আবার সাকিব! ‘মিরাজ মিরাকলে’র রাতে এর চেয়ে অর্থবহ ছবি আর কী হতে পারে!