বোলাররা নিজেদের কাজটা করছেন দারুণভাবে। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। আর সেই ব্যর্থতার খেসারত দিয়ে এখন ভারতের রান পাহাড়ে চাপা পড়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ দল।চেন্নাই টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে দুই দফা নতুন বল হাতে পেয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। দুইবারই ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়েছেন হাসান-তাসকিনরা।
আগের দিন ১৪৬ রানে ভারতের ৬ উইকেট ফেলে দেওয়ার পর রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা জুটি গড়ে দিন শেষে দলের স্কোরটা নিয়ে যান ৩৩৯ রানে। আজ সকালে তাসকিন নতুন বলের স্পেলে দ্রুত ৩ উইকেট নিলে ভেঙে পড়ে ভারতের লোয়ার অর্ডার। আগের দিন ৪ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ শেষ উইকেটটি নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ভারত থামে ৩৭৬ রানে।
জবাব দিতে নেমে ব্যাটিং-ধসের পুরোনো রোগে আক্রান্ত হয় বাংলাদেশ। হাসান-তাসকিনের মতো ভারতও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়েছে গতি দিয়ে। পার্থক্য একটাই। বাংলাদেশের কেউই ভারতের দুই ‘রবি’ অশ্বিন-জাদেজার মতো রুখে দাঁড়াতে পারেননি। ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে এসেছেন, আবার ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন।
বুমরা, সিরাজ ও আকাশদীপ—ভারতের তিন পেসার ভাগাভাগি করে নেন বাংলাদেশের ৮ উইকেট। এর মধ্যে বুমরা একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট সিরাজ, আকাশদীপ ও জাদেজার। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ মাত্র ৪৭.১ ওভার অলআউট ১৪৯ রানে। ২২৭ রানের বিশাল লিড পাওয়া ভারত দিনের শেষ সেশনে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে করেছে ৮১ রান।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশ দলের কাছে দুটি প্রত্যাশা ছিল। প্রথমত নতুন বলটা কাজে লাগিয়ে অশ্বিন-জাদেজার জুটি ভাঙা, দ্বিতীয়ত হাসানের ৫ উইকেট। দুটিই হলো দিনের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে। আগের দিন উইকেটশূন্য থাকা তাসকিনকে আজ আরও শৃঙ্খল, আরও গতিময় মনে হলো। ৮৬ রানে জাদেজাকে কট বিহাইন্ডের পর ১৭ রানে আকাশদীপকে ফেরান তাসকিন। পরে তাসকিনকে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে অশ্বিনও ক্যাচ তুলেছেন ১৩৩ বলে ১১৩ রান করে।
দিনের শুরুতে বাংলাদেশ দলের কাছে দুটি প্রত্যাশা ছিল। প্রথমত নতুন বলটা কাজে লাগিয়ে অশ্বিন-জাদেজার জুটি ভাঙা, দ্বিতীয়ত হাসানের ৫ উইকেট। দুটিই হলো দিনের প্রথম ঘণ্টার মধ্যে।
বুমরাকে স্লিপে জাকিরের ক্যাচ বানিয়ে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ভারতে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন হাসান। রাওয়ালপিন্ডির পর চেন্নাইয়েও ৫ উইকেট নেওয়ায় টানা দুই টেস্টে ৫ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় পেসারও হয়ে গেলেন হাসান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার পরই ভারতের ৩৭৬ রানটাকে বিশাল মনে হচ্ছিল। বুমরা ও সিরাজের প্রথম স্পেলে সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। সাদমান (২) যেমন বুমরার প্রথম ওভারের শেষ বলে বাউন্স না বুঝেই ছেড়ে খেলে বোল্ড। জাকিরের (৩) ব্যাট-প্যাডের মাঝের জায়গাটা কাজে লাগিয়েছেন আকাশদীপ।
অষ্টম ওভারের প্রথম বল ছিল সেটি। পরের বলেই প্রায় একইভাবে বোল্ড মুমিনুলও (০)। ওই সময় নাজমুল ৩ বাউন্ডারিতে প্রতি আক্রমণের আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত ২০ রানে থামেন সিরাজের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে। মুশফিককেও (৮) থিতু হতে দেননি বুমরা। চোখের পলকে ৪০ রানে ৫ উইকেট নাই হয়ে যায় বাংলাদেশের।
সাকিব-লিটন জুটি সেখান থেকে ৫১ রান যোগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখান। কিন্তু আশা ভঙ্গের দায়টাও দুজনেরই। লিটন জাদেজার বাঁহাতি স্পিনে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ২২ রানে ক্যাচ তুললেন। স্পিনের বিপক্ষে ওই শটটা লিটনের না খেললেও চলত। একই ভুল করলেন সাকিবও।
জাদেজার ভেতরে আসা বলে তিনি খেললেন রিভার্স সুইপ। যা হওয়ার তা-ই হলো। ব্যাটের কোনায় লেগে বল সাকিবের স্পাইক থেকে গেল উইকেটকিপার পন্তের গ্লাভসে। মিরাজ শেষের দিকে ২৭ রান করলেও সাকিবের ৩২ রানই ছিল বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২১০ মিনিট ব্যাটিংয়ের পর ১৪৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
শেষ বেলায় আরও একবার বল হাতে পেয়ে বোলাররা ঝলক দেখালেও চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশ মূলত পিছিয়ে পড়েছে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৮১ রান তুলে ভারত এগিয়ে গেছে ৩০৮ রানে। তাসকিন, হাসান ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। বোলাররা যা-ই করুন, চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশকে যে রানের পাহাড়ে চাপা পড়তে হবে, সেটা প্রায় নিশ্চিতই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৯১.২ ওভারে ৩৭৬ (অশ্বিন ১১৩, জাদেজা ৮৬; হাসান ৫/৮৩, তাসকিন ৩/৫৫, নাহিদ ১/৮২, মিরাজ ১/৭৭) ও ২৩ ওভারে ৮১/৩ (জয়সোয়াল ১০, রোহিত ৫, গিল ৩৩*, কোহলি ১৭, পন্ত ১২*; তাসকিন ১/১৭, নাহিদ রানা ১/১২, মিরাজ ১/১৬)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৭.১ ওভারে ১৪৯ (সাকিব ৩২, মিরাজ ২৭*, লিটন ২২, নাজমুল ২০, রানা ১১, তাসকিন ১১, হাসান ৯, মুশফিক ৮, জাকির ৩, সাদমান ২, মুমিনুল ০; বুমরা ৪/৫০, জাদেজা ২/১৯, আকাশ ২/১৯, সিরাজ ২/৩০)।